হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ ভাবে দেদারছে আসছে ভারতীয় গরু। হুন্ডি ব্যবসায়ীদের জমজমাট বাণিজ্যের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে রাতের আধাঁরে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ভারতীয় গরু।

সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভুবনকুড়া ইউনিয়নের বানাইচিড়িংগীপাড়া, আচকিপাড়া, রঙ্গমপাড়া, মহিষলেঠি, হালুয়াঘাট সদর ইউনিয়নের গোবরাকুড়া, গাজিরভিটা ইউনিয়নের ভূটিয়াপাড়া, কাটাবাড়ি, ডোমনিকুড়া, বেলতলী ও ধোবাউড়া থানার ঘোষগাঁও সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে শত শত গরু প্রবেশ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে ভুয়া ইজারা রশিদ দিয়ে।

ভারতীয় গরু অবৈধ ভাবে আমদানি করতে রয়েছে প্রায় অর্ধশত সীমান্তের চোরাকারবারি তাদের মধ্য উল্লেখ্য যোগ্য ব্যক্তিরা হলেন, মহিষলেঠি গ্রামের মৃত আব্দুল আলীর পুত্র হযরত,হাবীবুর রহমানের পুত্র রফিক,কেরামত আলীর পুত্র বিল্লাল,আব্দুল হালিম এর পুত্র সাইফুল,মৃত আব্দুল হেকিম এর পুত্র মফিদুল ইসলাম, মজিবর রহমানের পুত্র আল-আমিন এ সমস্ত ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে প্রতি গরুতে বিজিবির জন্য বরাদ্ধ করা হয় ১২ শত টাকা। এ সমস্ত টাকা উত্তোলনের দ্বায়িত্বে রয়েছেন লাইনম্যান হিসাবে খ্যাত মহিষলেঠি গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর পুত্র রাশিদ মিয়া। তার নেতৃত্বেই প্রায় প্রতিরাতেই আসছে ভারতীয় গরু।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ৩০ অক্টোবর ভূবনকুড়া ইউনিয়নের রঙ্গমপাড়া সীমান্ত দিয়ে ভোর রাতে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে আসা ২০টি গরু তেলীখালী ক্যাম্প এর টহলরত বিজিবি পাহাড়া দিচ্ছেন পাশাপাশি খবর পেয়ে হালুয়াঘাট থানা পুলিশের কিছু সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন এমন একাধিক সংগৃহীত ছবি স্থানীয় ব্যক্তিগণ এ প্রতিবেদকে প্রদান করেন ।

স্থানীয়রা জানায়, গত ৩০ অক্টোবর ভূবনকুড়া ইউনিয়নের রঙ্গমপাড়া সীমান্ত দিয়ে ভোর রাতে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে আসা ২০টি গরু তেলীখালী ক্যাম্প এর টহলরত বিজিবি আটক করেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার কিছুখন পর পুলিশ চলে আসলে বিজিবি আটক গরুগুলি ছেড়ে দিয়েছেন। গরু ব্যবসায়ী রৌমারীর নজরুল আর্মি ও শ্রীবর্দীর ফিরোজ এ সমস্ত স্পট দিয়ে স্থানীয় গরুর দালালদের মাধ্যমে বিজিবি সদস্যদের ম্যানেজ করে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে গরু বাংলাদেশে নিয়ে আসছে।

হুন্ডি ব্যবসায়ীরা অর্থের যোগান দিয়ে আড়ালে থেকে চোরাই পথে অশংখ্য গরু এনে সরকারের কর ফাকি দিচ্ছেন। ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতি স্বল্প মূল্যে গরু ক্রয় করে অবৈধ পথে দেশে এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের কাছে মোটা অংকে বিক্রি করছে। ফলে সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারিদের প্রবণতা বৃদ্ধির আসংখ্যা করছেন স্থানীয়রা।

শ্রীবর্দীর ফিরোজ নামক গরুব্যবসায়ী থানা পুলিশকে মেনেজ করার জন্য তেলীখালী গ্রামের মাঈনউদ্দিন এর মাধ্যমে দশ হাজার টাকা প্রদান করেন। যদিও উক্ত দশ হাজার টাকা বর্তমানে আক্কাস মেম্বারের নিকট জমা রয়েছে বলে জানান মাঈনউদ্দিন। গাজিরভিটা ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামের মালেক লাইনম্যান হিসাবে ইতিমধ্য খ্যাতি অর্জন করেছে। তার অনুমতি ব্যাতীত কোন মালামাল বাংলাদেশে প্রবেশ করেনা অত্র এলাকায়। পাশাপাশি রয়েছে ডোমনিকুড়া গ্রামের গরুব্যবসায়ী আইনুল ও এমদাদ মেম্বার। গরুব্যবসায়ী আইনুল ও এমদাদ মেম্বার এর নিকট জানতে চাইলে উভয়ে ভারতীয় গরু ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন বলে সাংবাদিকদের নিকট অকপটে স্বীকার করেন।

সাইফুল, আইনুল ও এমদাদ মেম্বারসহ একাধিক গরু পাচারকারীগণ সত্যতা স্বীকার করে বলেন, লাইনম্যান রাশিদ মিয়ার মাধ্যমে সকলকে ম্যানেজ করে গরু আমদানি করছেন ।

এ বিষয়ে কড়ইতলী স্থল সুল্ক ষ্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ তৈয়বুর রহমান বলেন,গত আগষ্টের ২২ তারিখে তিনি অত্র পয়েন্টে যোগদান করেছেন। বিজিবি কর্তৃক ভারতীয় গরু আটকের বিষয়ে তার জানা নেই। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে নাকুগাঁও স্থল সুল্ক ষ্টেশনের এ্যাসিস্টেন্ট রেভিনিউ কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, তেলীখালী বিজিবি কর্তৃক ভারতীয় গরু আটকের বিষয়ে তিনি অবগত নন। উক্ত শুল্ক ষ্টেশানে উক্ত ক্যাম্পের ভারতীয় গরু আটকের কোন করিডোর হয়নি।

এ বিষয়ে রৌমারী রাজস্ব কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক এ প্রতিবেদককে মূঠোফোনে জানান, রামচন্দ্রকুড়া কিংবা তেলীখালী বিজিবি ক্যাম্প কর্তৃক আটক ভারতীয় কোনগরু করিডোর এর মাধ্যমে ছাড় দেওয়া হয়নি। ঐসমস্ত এলাকার কোন গরু করিডোর করেন নি। তিনি কোব্বাস আলী নামক ব্যক্তির সাথে কথা বলে বিষয়টি জানার আহবান জানান। ১৯ নভেম্বর একটি গরু করিডোরের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল তিনি ফেরত দিয়েছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে কোব্বাস আলী জানান, তিনি অত্র অফিসের অফিস সহকারী, রামচন্দ্রকুড়া কিংবা তেলীখালী ক্যাম্পের ভারতীয় আটক কোন গরুর করিডোর করেননি।

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, সীমান্তে অবৈধ ভাবে গরু প্রবেশের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রেরণ করে ছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর টহলরত বিজিবি সদস্যগণ গরুগুলি আটক করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়ে ছিলেন। তাই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে। তারপর গরুগুলি কি হয়েছে তিনি জানেন না।

এ বিষয়ে তেলীখালী বর্ডারগার্ড (বিজিবি) ক্যাম্প কমান্ডার হাসমত আলী খান বলেন, সম্প্রতি বিজিবি কর্তৃক আটক গরুগুলি রৌমারী সীমান্তে করিডোরের মাধ্যমে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিজিবিকে টাকা পয়সার মাধ্যমে মেনেজ করে অবৈধ ভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, বিজিবি কর্তৃক চোরাকারবারিদের নিকট থেকে ভারতীয় গরু আটকের বিষয়টি জানা নেই বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২০, ২০১৭)