চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : হেমন্তের শুরুতেই চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলের সকল উপজেলায় রস আহরণের জন্য ‘মধুবৃক্ষ’ খেজুর গাছ কাটা শুরু হয়েছে। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই গ্রামবাংলার গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছকে ঘিরে পল্লী এলাকায় শুরু হবে এক উৎসব মুখর পরিবেশ। এই গাছ থেকে গাছিরা সংগ্রহ করবে সুমিষ্ট রস, তৈরি হবে লোভনীয় গুড় ও পাটালি। সুগন্ধে মৌ মৌ করবে চারদিক। আর এ রস ও গুড়ের তৈরি নানান রকম পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়বে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি।

গ্রামবাসীরা জানান, খেজুরের নলেন গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণ ভীষণ লোভনীয়। রসনা তৃপ্তিতে খেজুর গুড় ও পাটালির যেন জুড়ি নেই।

জানা যায়, এক সময় চলনবিলাঞ্চলের খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ ছিল। এখনও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল তো বটেই, দেশের বাইরেও এর বেশ কদর রয়েছে। তবে বর্তমানে নানা প্রতিকূলতায় খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বর্তমানে আগের মত আর রস, গুড় উৎপাদন হয় না। আসল পাটালী গুড়ের কদর বেশী। কারণ অসাধূ ব্যক্তিরা চিনি মিশ্রিত গুড় বাজারজাত করে থাকে। ফলে শীত মৌসুমে যে রস, গুড় ও পাটালি তৈরি হয় তা নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমত কাড়াকাড়ি শুরু হয়। ইতিমধ্যে শহরের লোকজন গ্রামের গাছিদের সঙ্গে রস ও গুড়ের জন্য যোগাযোগ শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ গাছিদের নিকট অগ্রিম টাকা তুলে দিচ্ছেন ভাল রস, গুড় ও পাটালি পাওয়ার আশায়। অগ্রিম টাকা পেয়ে অনেক গাছি কিনছেন রস সংগ্রহের উপকরণ।

চাটমোহর উপজেলায় এখন পর্যন্ত শীতের আগমন সেভাবে না ঘটলেও গাছিরা খেজুর গাছের ডাল পরিষ্কার, দা তৈরি, গাছে ওঠার দড়ি, মাটির ভাড় ও রস জ্বালানোর তাওয়া কেনা, চুলা তৈরিসহ যাবতীয় কাজ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, এ বছর গাছিরা একটু আগেভাগেই খেজুর গাছ কাটতে শুরু করেছেন। আশা করা যায় সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই রস সংগ্রহের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। চাটমোহরের মূলগ্রামের গাছি আঃ কাদের জানান, এবার সে ৫০টির বেশী গাছে রস সংগ্রহ করবে। গাছের মালিকদের গুড় দিয়ে চুক্তি করা হচ্ছে। আরেক গাছি আঃ সাত্তার এবার ৩০টি গাছে রস সংগ্রহ করবেন। অল্প দিনের মধ্যেই নতুন গুড় ও পাটালী বাজারে পাওয়া যাবে। চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাসান রশীদ হুসাইনী জানান, খেজুর গাছ আবাদি জমির কোনো ক্ষতি করে না। তাই আবাদি জমির চারপাশের জমির আইলে খেজুর গাছ রোপণ করা যায়।

এছাড়া সড়ক পথ, রেল পথ, পুকুরপাড় ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় প্রচুর খেজুর গাছ লাগানোর সুযোগ রয়েছে। ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষেধ হলেও ভাটা মালিকরা নির্বিচারে অন্য গাছের সঙ্গে খেজুর গাছ কিনেও ইট পোড়াচ্ছেন। তবে বর্তমানে অনেক চাষি আবাদি জমির আইলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান করতে শুরু করেছেন।

(এসএইচএম/এসপি/নভেম্বর ২০, ২০১৭)