আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি মিয়ানমার জাতিবিদ্বেষমূলক আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মঙ্গলবার সংস্থাটির তরফ থেকে এমন অভিযোগ আনা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। খবর এএফপি।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী গ্রামগুলোতে ঢুকে বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, লোকজনকে হত্যা করেছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে। কিন্তু বরাবরই রোহিঙ্গাদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে সেনাবাহিনী।

গত সপ্তাহে সেনাবাহিনীর এক অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্টে জানানো হয় যে, রাখাইনে কোনো হত্যা বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সম্মতি জানালেও রাখাইনের প্রকৃত ঘটনার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছে মিয়ানমার।

সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এক বিবৃতিতে বলেছেন, শরণার্থী নেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের যে সংখ্যা প্রস্তাব করেছে তাদের সবাইকে ফিরিয়ে নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

মঙ্গলবার অ্যামনেস্টির এক রিপোর্টে কয়েক বছরের নির্যাতন-নিপীড়নের ফলেই সাম্প্রতিক এই সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

অ্যামনেস্টি বলছে, সেনাবাহিনীর অভিযানের কারণে রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাদেরকে মূলধারার লোকজন বিশেষ করে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী থেকে আলাদাভাবে দেখা হয়েছে। মিয়ানমারের নাগরিকত্ব না দিয়ে তাদের শরণার্থী করে রাখা হয়েছে।

দু’বছরের গবেষণায় ১শ পাতার ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাখাইনে যা ঘটেছে তা মানবতার বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষমূলক অপরাধ। রাখাইনে আগেও এমন অপরাধ হয়েছে। অ্যামনেস্টির ঊর্ধতন গবেষণা পরিচালক আন্না নেইসতাত বলেন, তিন মাস আগে সেনাবাহিনী রাখাইনে অভিযান শুরু আগেও নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ এবং শিশুদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে এবং তাদেরকে অমানবিক জাতিবিদ্বেষের মাধ্যমে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। কয়েক দশক ধরেই বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন রোহিঙ্গারা। এর আগে ২০১২ সালে মিয়ানমারে বৌদ্ধ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে দেশটির বেশ কয়েকটি পুলিশ চেকপোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। তারপর থেকেই ওই অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। সেনাদের অত্যাচার, নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২১, ২০১৭)