মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : মাত্র সাত দিন সন্তানের স্পর্শ পেয়েছিলো। দশ মাসের কষ্ট ভুলে গিয়েছিলেন ছেলের চাঁদ মুখ দেখে। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন সন্তানকে বুকে আগলে রেখে মানুষের মতো মানুষ করার। ছেলের হাত ধরে জীবনের বাকিটা পথ পাড়ি দেয়ার। কিন্তু ছেলের হাত ধরে তাঁর আর হাঁটা হয়নি। শোনা হয়নি মা ডাক। সোমবার সকালে কলাপাড়া হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সদ্য সন্তান প্রসব করা রাবেয়া বেগম (২২)। 

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, রক্তশূন্যতার কারনে রাবেয়ার মৃত্যু হয়েছে। ক্লিনিকে অপারেশনের পর সঠিক চিকিৎসা পেলে হয়তো তাঁর এ পরিনতি হতো না।

গত ১২ নভেম্বর বিকালে কলাপাড়ার আলেয়া ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশন করে ছেলে সন্তানের মা হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ডাক্তারের সঠিক চিকিৎসা, ক্লিনিক বানিজ্য ও পারিবারিক অবহেলায় এক মায়ের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে।

জানা যায়, কলাপাড়ার নীলগঞ্জ গ্রামের মো. বেল্লাল হোসাইন এর স্ত্রী রাবেয়া বেগম গত ১২ নভেম্বর আলেয়া ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার বিকালে নিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে সন্তান প্রসব করেন রাবেয়া বেগম। সার্জন ডাঃ আবদুর রহিম, সহকারী ডা. ইমতিয়াজ মাহমুদ ও এনেসথেসিষ্ট ডাঃ আবদুল মান্নানের তত্বাবধানে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয় তার। অপারেশনে পুত্র সন্তান ভুমিষ্ঠ হয় রাবেয়ার। দুইদিন পর ১৫ নভেম্বর সকালে আলেয়া প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দেয় তাকে।

রাবেয়ার স্বজনরা জানান, সোমবার সকালে রাবেয়া হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তাৎক্ষনিক তাকে কলাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন। তবে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা হয়েছে কিনা এ বিষয়টি জানতে চাইলে তারা বলেন আমরা চিকিৎসার কি জানি। এটাতো ডাক্তাররা বলতে পারবে।

কলাপাড়া হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জে এইচ খান লেলীন জানান, রাবেয়া রক্তশূন্যতার কারনে মারা গেছে। সিজারিয়ান অপারেশনের পর তার যে চিকিৎসা ও সেবা দরকার ছিলো তা হয়তো পায়নি। এ কারনে একরকম অবহেলায়ই তার এই অকাল মৃত্যু।

কলাপাড়ার আলোচিত আলেয়া ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় একেরপর এক রোগীর মৃত্যু হলেও অজ্ঞাত কারনে স্বাস্থ্য বিভাগকে ম্যানেজ করে এ ক্লিনিক রোগীর চিকিৎসার বদলে অপচিকিৎসা করে যাচ্ছে। গত কয়েক মাস আগে এ ক্লিনিকে অবৈধ গর্ভপাত করতে গিয়ে জুলেখা নামের এক চার মাসের অন্তঃসত্তা বধুর মৃত্যু হলে থানায় মামলা হয়। পরের কয়েকদিন এ ক্লিনিক বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্য বিভাগ ক্লিনিকটি সিলগালা করে দিলেও আবার স্বাস্থ্য বিভাগকে বিভাগকে ম্যানেজ করে চালু হয় ক্লিনিকটি। এবার এ ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন করে মারা গেলেন রাবেয়া বেগম।

ক্লিনিকের মালিক আমিনুল ইসলাম জানান, জানান, সিজারিয়ান অপারেশনের পর শিশুসন্তানসহ মা সম্পূর্ণ সুস্থ্য অবস্থায় বাড়ি গেছে। এখানে সঠিক চিকিৎসাই পেয়েছে। কিন্তু কিভাবে তিনি মারা গেছেন এটি বোধগম্য নয়। তবে পেশার বেড়ে যাওয়ায় তিনি মারা গেছেন বলে শুনেছেন বলে জানান। রক্ত শূন্যতার বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান।

ক্লিনিকে দায়িত্বপালনকারী ডা. ইমতিয়াজ মাহমুদ জানান, ১৯ নভেম্বর সেলাই কেটে সুন্থ্য অবস্থায় রাবেয়া এখান থেকে গেছেন। কিন্তু কি কারনে তিনি মারা গেছেন তা বলতে পারছেন না। তার ফলোআপ চেকআপ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান। এমনকি এই ডাক্তার নিজের রেজিঃনম্বরও বলতে পারেন নি।

(এমকেআর/এসপি/নভেম্বর ২১, ২০১৭)