বাগেরহাট ও শরণখোলা প্রতিনিধি : জীবন-জীবিকাসহ বেঁেচ থাকার তিন দফা দাবিতে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বনজীবীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে শরণখোলা রেঞ্জ সংলগ্ন ভোলা নদীর মোহনায় ও খুড়িয়াখালী বাজারে এ প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা। পরে তারা শরনখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ^াসের কাছে এ স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।

বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থ না করে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ৯৮ ভাগ এলাকাকে অভয়ারন্য ঘোষনার প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ ও মানববন্ধন শত-শত জেলে-বাওয়ালীরা তাদের জাল-নৌকা নিয়ে সমাবেশ স্থলে হাজির হয়। তারা বলেন, বংশগত ভাবে দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসলেও এবছর এই রেঞ্জের ৯৮ ভাগ এলাকাকে অভয়ারন্য ঘোষনা করায় তারা বনের নদী-খালে আর মাছ ধরতে না পেরে চরম বিপদের মধ্যে পড়েছেন। সরকার জেলে-বাওয়ালী বা মৎস্যজীবিদের বিকল্প কোন কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা না করে হঠাৎ করে সুন্দরবনের শুধু মাত্র শরণখোলা রেঞ্জেকে শতকরা ৯৮ ভাগ অভায়ারন্য ঘোষনা করেছেন। এ ঘোষনায় সুপার সাইক্লোন সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে যাবে। অনেকে এলাকা ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে বাধ্য হবে। তাই বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা না করে সুন্দরবনের অধিকাংশ জায়গা অভয়ারন্য না করার দাবী জানান। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন, আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম কালাম, ইউপি সদস্য বাচ্চু মন্সি, মৎস্য ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন, জেলে সোহরাব হোসেন প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা উপজেলা ও পিরোজপুর জেলার মঠবাড়ীয়া, পাথরঘাটা ও পিরপোজপুর সদর উপজেলার ১৫ হাজার পরিবারে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জীবন- জীবিকার জন্য সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল।

এ বছরের ১৩ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় সুন্দরবনের অন্যাণ্য রেঞ্জের সাথে শরণখোলা রেঞ্জের ৯৮ শতাংশ বনভুমি অভয়ারন্য ঘোষণা করেন। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ রেঞ্জের বনজীবীরা চিন্তিত ও হতাশাগ্রস্ত। জেলে মৌয়াল ও বাওয়ালী পরিবারের পক্ষ থেকে ওই সিদ্ধান্তের পূর্ণবিবেচনার দাবি জানান তারা।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে শরনখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দেয়া স্মারক লিপি জেলে-বনজীবীদের স্মারক লিপিতে ৩ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, সমগ্র সুন্দরবনের সকল রেঞ্জে সমহারে অভয়ারন্য ঘোষনা করা। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের জেলে বাওয়ালীদের পেশা ও জীবন- জীবিকা নিশ্চিত করা। এই রেঞ্জের ৯৮ শতাংশ অভয়ারন্য কমিয়ে ৫০ শতাংশ করা।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ২৩, ২০১৭)