রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া (নড়াইল) : নড়াইলের লোহাগড়া সরকারি আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের খেলার মাঠ বছরের প্রায় আট মাস থাকে পানির নিচে। কলেজের প্রায় তিনহাজার শিক্ষার্থী ছাড়াও উপজেলা সদরের অন্তত ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত মাঠটি জলাবদ্ধ থাকায় হচ্ছে না ক্রীড়া চর্চা ও প্রতিযোগিতা। বন্ধ রয়েছে নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। এসব বিষয়ে রয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। অথচ কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিঃরব- নির্বিকার। 

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আনিচুর রহমান জানান, ওই কলেজ ছাড়াও লোহাগড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মিতালী মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলা সদরের অন্তত ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ মাঠ ব্যবহার করত। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো এ মাঠে।

জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিতে শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের বাছাই পর্বের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এ মাঠেই হতো। ব্যায়াম করতে উপজেলা সদর ও আশপাশের লোকজন এ মাঠ ব্যবহার করতেন। বিকেল-সন্ধ্যায় উন্মুক্ত বাতাসে বসে শিশু, কিশোর, যুব-বৃদ্ধদের গল্প-আড্ডার আসর বসতো এখানে। গত তিন বছর ধরে মাঠটি বছরের প্রায় আট মাস জলাবদ্ধ থাকায় সব মহল পড়েছেন বিপাকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কলেজের দক্ষিণ পাশে বিশাল এ মাঠ। মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে চলাচলের রাস্তা এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাশে বাড়িঘর। মাঠে পানি থইথই করছে। মাঠজুড়ে কচুরিপনা ও ঘাসের ঝোপ। মনে হচ্ছে ডোবা পুকুর। পানি পচে দুর্গন্ধ হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এ মাঠের পানি নিষ্কাশনের চারটি কালভার্ট ছিল। অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা গড়ে ওঠায় কালভার্টগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে এ জলাবদ্ধতা দূর হতে পারে।

সাংবাদিক এ্যাডভোকেট আঃ ছালাম খান জানান, গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ছয় মাস পানির নিচে রয়েছে মাঠটি। আরো অন্তত দুই মাস পানি থাকবে। পানি পচে দুর্গন্ধ হওয়ায় পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা খুবই সমস্যায় আছেন। মশার উপদ্রবও বেড়েছে।

লোহাগড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক দিলীপ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের বিদ্যালয় জাতীয় শীতকালীন অ্যাথ্্লেটিকস প্রতিযোগিতায় টানা নয়বার দেশসেরা হয়েছে। এর প্রশিক্ষণ সকাল-বিকাল এ মাঠেই হতো। মাঠটি খেলাধুলার উপযোগী করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, মাঠের গুরুত্ব বিবেচনা করে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার গত ৯ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে এসেছিলেন।

কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ এনামুল কবীর বলেন, এ বিষয় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছি। এছাড়া গত তিন বছর ধরে সংশ্লিষ্ট নানা মহলে ধরনা দিয়েছি। কিন্তু ফলাফল নেই।

লোহাগড়া পৌর মেয়র আশরাফুল আলম জানান, ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য প্রকল্প করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি ডিসেম্বর নাগাদ বরাদ্দ হবে। বরাদ্দ পেলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে মাঠটি খেলাধুলার উপযোগী করে তোলা হবে।

(আরএম/এসপি/নভেম্বর ২৩, ২০১৭)