বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার তাগিদে ব্রাজিলের সাওপাওলো থেকে ৭১১ কিলোমিটার দক্ষিণে প্যারাগুয়ের কাছে পারানা রাজ্যের রাজধানী সিয়া নর্থের কুজেরিয় গ্রামে খুন হয়েছেন বাংলাদেশী নাগরিক জাহেদ আহমদ(২৮)।

গত রবিবার কুজেরিয় গ্রামে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে জাহেদের লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় ব্রাজিলের বাসিন্দারা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় জাহেদের লাশ উদ্ধার করে।

এর আগে গত শনিবার জাহেদ রাতে বাসা থেকে বের হওয়ার পর আর বাসায় ফিরেননি।

নিহত জাহেদ আহমদ মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুড়িকান্দি গ্রামের আব্দুল হকের পুত্র। জাহেদের মৃত্যুর খবরে তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। জাহেদের মা-বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কেই তাদের সান্তনা দিতে পারছেন না।

নিহতের পরিবার, ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বছরখানেক আগে জীবিকার সন্ধানে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে ব্রাজিল যান জাহেদ আহমদ। ব্রাজিলে যাবার প্রায় ৪ মাস পর তিনি বৈধ ভাবে কাজ করার একটি কার্ড পান। সেখানে তিনি একটি পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করতেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় জাহেদ বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি । পরেরদিন রবিবার ব্রাজিলের কুজেরিয় গ্রামের বাসিন্দাদের খবরে পরিত্যক্ত এক বাড়ি থেকে পুলিশ জাহেদের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়।

ব্রাজিলিয়ান বান্ধবীর সাথে সম্পর্কের জের ধরে ব্রাজিলিয়ান নাগরিকরা জাহেদকে হত্যা করেছে বলে একটি সুত্রে জানা গেছে।

গত মঙ্গলবার নিহত জাহেদের লাশ হাসপাতাল থেকে গ্রহন করেন প্রবাসী বাংলাদেশী বড়লেখা উপজেলার নিজবাহাদুর পুর ইউনিয়নের বিহাইডর গ্রামের ছাদেক আহমদ। পরে ওই দিন পারানা রাজ্যের লনড্রিনায় জানাজা শেষে স্থানীয় একটি মসজিদের পাশে তার লাশ দাফন করা হয় বলে নিহতের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় ব্রাজিলে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে।

বুধবার জাহেদের বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে জাহেদ খুনের ঘটনায় পরিবারের সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। জাহেদের মা-বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কেই তাদের সান্তনা দিতে পারছেন না। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জাহেদ তৃতীয়। জাহেদের মা রহিমা বেগম জানান, ‘ঘটনার একদনি আগে গত শুক্রবার জাহেদের সাথে মোবাইল ফোনে আমার কথা হয়েছে। সে আমার চিকিৎসা ও রমজানের খরচের জন্য টাকা পাঠাবে বলে বলেছিল। কিন্তু আমার ছেলে আর কোনদিন টাকা পাঠাবে না, আমাকে আর মা বলে ডাকবে না। আমি বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।’

দাসেরবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, জীবন সংগ্রামে বেছে থাকার তাগিদে প্রবাসে গিয়ে খুন হওয়ার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাশেম জানান, ব্রাজিলে বাংলাদেশী যুবক খুন হওয়ার কোনো তথ্য তিনি পাননি।

(এলএস/এটিআর/জুলাই ০২, ২০১৪)