মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের মাটিকাটা শ্রমিক বেলাল হোসেন(৩৫)। দুই বছর আগে মাটি কাটার সময় কোমড়ে ব্যাথা পান। কিন্তু দু’বছর ধরে এ ব্যাথা কমানোর অনেক ওষুধ খেয়েছেন। খরচ করেছেন হাজার হাজার টাকা। কিন্তু ব্যাথা কমেনি। তাই বাধ্য হয়ে ২০ টাকায় বিনিময়ে শক খেয়ে বাতের ব্যাথা কমানোর চিকিৎসা নিচ্ছেন।

চিকিৎসক ওয়াসিম মিয়া পেশায় একজন ছাতা মিস্ত্রি হলেও এখন সে ডাক্তার। তার মতে ওষুধে ব্যথা কমে নাকি? শকিং পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিলে বাতের ব্যাথা থাকে না। এটাই বাতের ব্যাথার আসল চিকিৎসা। শরীরে ৪/৫ বার ঝাঁকুনি দিয়েই রোগীর দীর্ঘদিনের বাতের ব্যাথা সারিয়ে দিচ্ছেন ! তাও মাত্র ৩/৪ মিনিটে।

এ বেলাল হোসেনের মতো অনেক ভুয়া ডাক্তার কলাপাড়ার বিভিন্ন সাপ্তাহিক হাটে শতশত বাতের রোগীর অপচিকিৎসা করিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ডাক্তার সংকট ও অসচেতনতার কারনে সমুদ্র উপকূলীয় কলাপাড়ায় এখনও চলছে এভাবে অপচিকিৎসা।

মাগুরা সদর উজেলার বাসষ্টান্ড সংলগ্ন বাড়ি এ চিকিৎসক ওয়াসিম মিয়ার। পড়ালেখা বলতে নিজের নাম ঠিকানা লিখতে পারেন। ৪/৫ বছর আগেও বর্ষা মেীসুমে ছাতা মেরামত করতেন। আর এখন সে বাতের রোগ সারানোর চিকিৎসক। ছাতা মেরামত করতে গিয়েই তিনি এ বাতের রোগ সারানোর মেশিন আবিস্কার করেন বলে তিনি জানান।

আর এ চিকিৎসায় অনেকটা তাৎক্ষনিক রেজাল্ট। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে তিনি এ অপচিকিৎসা করছেন।

কলাপাড়ার পেীর শহরে ওয়াসিম মিয়ার কাছে চিকিৎসা নিতে আসা ওদুদ মিয়া (৭৬) জানান, গত সপ্তাহে শক নিছিলাম। কিন্তু ব্যাথাতো কমেই নি বরং যে জায়গায় শক নিছিলাম সেই জায়গা অবশ হয়ে গেছে। তাই জিজ্ঞেস করতে এসেছি এর কারন কি?

বরিশাল পলিটেকনিক ইন্সটিউটের মেকানিক্যাল বিভাগের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র নাঈম ইসলাম জানান, এটি একটা ভাওতাবাজি। দুটি সিলভার রডের সাথে তারের সংযোগ টেনে ব্যাটারীর সাথে নিগেটিভ পজেটিভ কানেকশন একত্র করে সুইচ অন করলেই রোগীর পিঠে লাগানো সিলভারের রড দুটির নিগেটিভ পজেটিভ এক হয়ে একটা ঝাঁকুনি দেয়। তার মতে বৈদ্যুতিক লাইনের নিগেটিভ পজেটিভ এক হলে ঝাঁকুনি হয়। আর ওটা ব্যাটারি চালিত। আর ঝাঁকুনির কারন আর্থিং পাওয়া। এতে শরীরের ওই স্থান কিছুক্ষন অবশ হয়ে যায়। বোধহীন হয়ে পড়ে রক্ত চলাচল না করার কারনে। এ কারনে সাময়িক ব্যাথা
অনুভব হয় না।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক মেডিকেল অফিসার ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, বাতের ব্যাথার প্রধান ওষুধ ব্যায়াম ও সচেতনতা। যারা দীর্ঘদিন এ রোগে ভুগছেন তাদের জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। আর এভাবে বৈদ্যুতিক শক নিয়ে ব্যাথা কমালে শরীরের গুরুত্বপূর্ন কোষ মরে গিয়ে শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে।

(এমকেআর/এসপি/নভেম্বর ২৬, ২০১৭)