পূর্ব প্রকাশের পর ৬ষ্ঠ দৃশ্য

(মঞ্চে আবার পাঠ চলে। একজন বসে পাঠ করছে অন্য কয়েকজন শুনছে)
হনু ভাবে ঘুরে যায় শ্রীলংকা ভবন
দেখে যায় কেমন সে নষ্ট দশানন।
একটু বুঝিয়ে দিই শ্রী রামের শক্তি
কেন লোকে ভজে তাকে দিয়ে মহাভক্তি।
পাশ অস্ত্রে বন্দি হনু যায় লঙ্কা ভবন
হনুকে বধিতে যায় রাজা দশানন।
হত্যা করিতে মানা করে বিভিষণ
চরকে হত্যা করা নয়তো কানুন।
বিভিষণ মত শুনি বলে দশানন
বানরের লেজে তবে লাগাও আগুন।
লেজে অগ্নি দেখে হনু মিটি মিটি হাসে
সীতা হরণের মজা দেখিবি তরাসে।
লেজে অগ্নি নিয়ে হনু উঠে যায় তর
পুড়িয়ে ছাড়খার করে শ্রীলঙ্কা নগর।
লঙ্কা পুড়িয়ে হনু সাগর পারি দেয়
সীতার পেয়েছি দেখা রামকে সুধায়।
(পুথি পাঠের সাথে মঞ্চে রাবণ ও বিভিষণের নির্বাক অভিনয় চলে)
বিভিষণ বলে দাদা ছেড়ে দাও সীতা
নইলে লঙ্কাপুরী হবে বড় চিতা।
শুভ বুদ্ধি নাহি শোনে দুরাত্মজন
বিভিষণ বুকে লাথি মারে দশানন।

(পদাঘাত শেষে বিভিষণ মঞ্চ থেকে অবসাদ মুখে নেমে যায়, রাবণ অগ্নিমূর্তীতে সেটা দেখে তারপর মঞ্চ থেকে নেমে যায়। মঞ্চে আলো নিভে যায়, নেপথ্যে পাঠ চলতে থাকে)

অপমানে লঙ্কা ছেড়ে যায় বিভিষণ
চার জন মন্ত্রী সাথে করিল গমন।
বড় ভাই কুবের থাকেন কৈলাশে
বিভিষণ রওনা হন তাহারই সকাশে।
কুবের বড় মহাজন বড় ধনপতি
শিব হয়েছেন সখা দেখে শুদ্ধমতি।
অস্ত্র শ্স্ত্র আর সাথে ভারাক্রান্ত মন
বিমানে চড়িয়া করে কৈলাশে গমন।
কুবেরের পরামর্শে বিভি শিবের কাছে যায়
উপায় খুঁজিতে সব শিবকে শুধায়।
(মঞ্চে আলো জ্বলে শিব ধ্যান মগ্ন। বিভিষণের প্রবেশ।)
বিভিষণ: প্রণাম দেব।
শিব: প্রণাম।
বিভিষণ: আপনার বলে বলিয়ান হয়ে রাবণ আজ মহা পরাক্রমশালী। সে রামচেন্দ্রের স্ত্রী সীতাকে অপহরণ করে অশোক কাননে আটকে রেখেছে। রামচন্দ্র তাঁকে উদ্ধারের জন্য হাজার হাজার কপি সৈন্য নিয়ে সুমুদ্র পাড়ে অপেক্ষা করছেন।
শিব: তার পাপ মুক্তির সময় হয়ে এসেছে।
বিভিষণ: আমি তাকে অনেক বুঝিয়েছি। লঙ্কার ধ্বংস আসন্ন। সে উল্টো ভুল বুঝে আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল।
শিব: পরাজয় যখন আসন্ন হয় তখন সব রাজারাই ধরাকে সরা জ্ঞান করে।
বিভিষণ: আমাকে লঙ্কা ছেড়ে চলে আসতে হলো। এছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না।
শিব: সেতো দেখতেই পাচ্ছি। তুমি কিছুই অন্যায় করোনি।
বিভিষণ: রামের হাত থেকে রাবণ এবং লঙ্কাকে রক্ষা করার একটি উপায় বের করুন দেব।
শিব: সত্য প্রতিষ্টার জন্য স্বয়ং নারায়ণ রাম রূপে দশরথ রাজার ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছেন। রামচন্দ্রের হাতেই রাবণের মৃত্যু হবে। তুমিই হবে লঙ্কার পরবর্তি রাজা।
বিভিষণ: আমি রাজা হলে লোকে বলবে ভাইয়ের সাথে বেঈমানী করে রাজা হয়েছি। সেটা আমার পক্ষে নম্ভব নয়। তার চেয়ে আমার এই কৈলাশই ভাল।
শিব: রামের হাত থেকে তাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। সবই ভবিতব্য। তুমি যাও রামকে সাহায্য করো। তোমার জন্য এই কর্তব্যই নির্ধারিত আছে।
বিভিষণ: তাই বলে আপন সহোদরের বিরুদ্ধাচরণ। সেটা কিভাবে সম্ভব।
শিব: সত্য এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা সমাজের প্রথম এবং প্রধান বিষয়। এছাড়া তোমার আর কোন উপায় নেই। লোকে তোমাকে ধার্মিক বিভিষণ বলে জানে। ধর্ম প্রতিষ্ঠায় তোমার প্রথম কর্তব্য।
বিভিষণ: এছাড়া কি আর কোন উপায় নেই মহাদেব।
শিব: আমি তো এই ভবিতব্যই দেখতে পাচ্ছি।
(মঞ্চে আলো নিভে যায়, নেপথ্যে পুথি পাঠ শোনা যায়, আবছা আলো জ্বলে, রাম তার সৈন্যদল সহ যুদ্ধংদেহী ভাবে মঞ্চের এক পাশ থেকে হেটে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
শংকরের আদেশে বিভি যায় রামের দলে
ন্যায় প্রতিষ্ঠা পাবে রাবণ মরিলে।
সীতা বসে বসে কান্দে অশোক কাননে
যুদ্ধের প্রস্তুতি চলে শ্রীরাম রাবণে।
ব্রহ্মা পুত্র নল করে সাগর বন্ধন
লঙ্কায় পৌঁছে যায় রাম আর লক্ষণ।
(মঞ্চে আলো নিভে যায়, মঞ্চে দুর্গার প্রবেশ, শিব গাঁজার কলকে টান দিতে উদ্যত)
দুর্গা: আমি সারা বন বাদার ঘুরে ঘুরে মরছি আর তিনি এখোনে বসে ধ্যান করছেন।
শিব: (কলকেতে টান দিয়ে।) কি সমাচার দেবী পার্বতী।
পার্বতী: (কলকেটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে) ভাঙ খেয়ে তো নিজেরে আবিষ্ট করে রেখেছ। ওদিকে লঙ্কায় কি হচ্ছে দেখতে পাচ্ছ?
শিব: লঙ্কায় লঙ্কা কান্ড ঘটছে।
পার্বতী: ছাড় এসব রসিকতা। আমি বুঝিনা, রাবণের মত দুরাচার কেন তোমার এত ভক্তি করে।
শিব: ও অমর হতে চায় এজন্য। কিন্তু তুমি রাগ করছ কেন।
পার্বতী: রাগব না। সে সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এরকম হলে মর্তের লোকে কি তোমাকে পুজবে।এতদিন যাওবা মানুষ একটু পুজতো। আর সীতার কিছু হলে আর পায়ে ফুলচন্দন পড়বে না।
শিব: এই মাত্র বিভিষণ এসেছিল। আমি ওকে রামের দলে পাঠিয়ে দিয়েছি।
পার্বতী: আবারও রসিকতা আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না। মানুষ কেন এই ভাঙ্গরকে পুজা করে।
শিব: অত হতাশ হইও না রানী। রাবণ দশ হাজার বছর তপস্যা করেও অমর বর পায়নি। নারায়ণ স্বয়ং যাকে বিনাশ করার জন্য দ্বারে হাজির, আমি তাকে রক্ষা করার কে? রাম এখন লঙ্কার দ্বারে। কয়েক দিনের মধ্যেই রাবণের পতন হবে।
পার্বতী: তাই যেন হয়। তানা হলে আর পুজো পাওয়া লাগবে না। তা আপনি কি আজ বনবাসীই থাকবেন না গৃহবাসী হবেন।
শিব: আমার গৃহ আর বন সবই সমান।
পার্বতী: হ অত ঢং করতে হবে না। আজকের মত অনেক হয়েছে। চলুন ঘরে চলুন।
(শিবকে টানতে টানতে পার্বতি মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যান।)
চলবে-