নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের বড়াইগ্রামের জোনাইল সেন্ট লুইস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ধর্মপল্লীর সহকারী পাল-পুরোহিত ফাদার ওয়াল্টার উইলিয়াম রোজারিও’র নিখোঁজের ৫ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত তাকে উদ্ধারে কোন অগ্রগতি নাই। 

তবে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বলছেন, ফাদার ওয়াল্টার নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন আগে শনিবার বিকেলে জোনাইল মারিয়া বাদ ক্যাথলিক চার্চের সামনে দুই মোটরসাইকেলে অজ্ঞাত ৫ যুবক সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলো। চার্চের সামনে লাগানো সিসি ক্যামেরায় ঠিক এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। ওই আরোহী যুবকদের পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগসহ র‌্যাবের বিশেষ টীম চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।

অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জোনাইল সেন্ট লুইস উচ্চ বিদ্যালয়ের ও জোনাইল এলাকার একাধিক বর্তমান ও প্রাক্তণ ছাত্র জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক ফাদার ওয়াল্টার নবম শ্রেণীর জনৈক এক ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন আনতে নিষেধ করার কারণে ওই ছাত্রীর কতিপয় বন্ধুরা ফাদারকে দেখে নিবে বলে হুমকী দিয়ে আসছিলো। এমনও হুমকী দিয়েছিলো যে ফাদারের একটুকরো মাংসও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

এদিকে বুধবার সকাল ৮টার দিকে নিখোঁজ ফাদার ওয়াল্টারের মোবাইল নাম্বার থেকে তার বড় ভাই বিমল রোজারিও’র মোবাইল ফোনে একটি মিস্ড কল আসার পর পূণরায় কলব্যাক করলে পরে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এর আগের রাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। যা পুলিশ তদন্ত শেষে জানিয়েছেন ওই চক্রটি ফাদার ওয়াল্টার নিখোঁজকে কেন্দ্র করে প্রতারণার জাল ফেলেছিলো মাত্র। সবমিলিয়েই আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর বিভিন্ন দপ্তর মনে করছেন ফাদার ওয়াল্টার অপহৃত হয়েছেন।

সাত ভাইয়ের মধ্যে ওয়াল্টারের জৈষ্ঠ্যভাই অর্জুন রোজারিও জানান, দিন যত পার হচ্ছে ততই পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে উৎকন্ঠা বাড়ছে। অত্যান্ত সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত সদালপী ও মিষ্টভাষি সকলের ছোট ভাই ফাদার ওয়াল্টারকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান তিনি।
নাটোর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই জানান, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। অনেক বিষয় গোপন রেখেই আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর বিভিন্ন বিভাগ উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বনপাড়া পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পরিমল গমেজ জানান, শুক্রবার মহামান্য পোপ ফ্রান্সিস এর খ্রিষ্টযোগে অংশ নিতে স্থানীয় খ্রিস্টান ধর্মপল্লীর ফাদার-সিস্টার সহ সাধারণ খ্রিস্টভক্ত অনেকেই ঢাকায় গিয়েছেন। তারা ফিরে এলে ফাদার ওয়াল্টারের উদ্ধারের জোর দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান সহ অন্যান্য কর্মসূচী দেয়া হবে।

সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ফাদার ওয়াল্টার বনপাড়া থেকে জোনাইলে তার কর্মস্থলে ফেরার উদ্দেশ্যে নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল যোগে রওনা দেওয়ার পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে বনপাড়া পৌর শহরের মিশন পাড়া এলাকার মৃত সিলভেস্টার রোজারিও’র ছেলে।

(এডিকে/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০১৭)