পূর্ব প্রকাশের পর সপ্তম দৃশ্য

(অন্ধকারে মঞ্চ, নেপথ্যে রামায়ণের সুরে পাঠ চলতে থাকে)
বানর সৈন্যরা করে রাম জয় গান
সুরে সুরে করে তারা যুদ্ধের আহ্বান।
(দুই পাশ থেকে দুই পক্ষের ধ্বণি শোনা যায়)
রাম পক্ষ: জয় রাম চন্দ্রের জয়, জয় রাম চন্দ্রের জয়
রাবণ পক্ষ: জয় লঙ্কেশ্বরের জয়, জয় লঙ্কেশ্বরের জয়
রাম পক্ষ: জয় রাম চন্দ্রের জয়, জয় রাম চন্দ্রের জয়
রাবণ পক্ষ: জয় লঙ্কেশ্বরের জয়, জয় লঙ্কেশ্বরের জয়

(মঞ্চে আলো জ্বলে দুইপাশ দিয়ে রাম রাবণ প্রবেশ করে যুদ্ধংদেহী ভাবে, দুজনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, নেপথ্যে পাঠ চলতে থাকে)

রণ সাজে যুদ্ধক্ষেত্রে রাম আর রাবণ
দুই পক্ষে শুরু হয়ে যায় মহারণ।
রাক্ষস মরিল যত তত বানর মরে
কার কত সৈন্য মরে গুনিতে না পারে।
বজ্রদ্রং মরে, ধুম্রাক্ষ মরে মরে অকম্পন
শত শত রাক্ষস মরে, মরে প্রহস্ত স্বজন।
ত্রিবিশা, মহাপাশ মরে মরে দেবান্তক
মরে মহোদর সাথে যোদ্ধা নবোন্তক।
ইন্দ্রজিৎ মরে, অতিকায় মরে মরে কুম্ভকর্ণ
মরে পুড়ে ছাই হয়ে যায় লঙ্কাস্বর্ণ।

(যুদ্ধ শেষে রাবণ মঞ্চে পড়ে)

রাম: আমি রাম চন্দ্র রঘু বংশে আমার জন্ম। এমন ব্যবস্থা করবো যে তোর বংশে বাতি দেবার কেউ থাকবে না।
রাবণ: হে মা অম্বিকা, হে মা তাঁরা আমাকে রক্ষা করো। শঙ্কর আমাকে তাজ্য করেছে। তুমি আমাকে রক্ষা করো মা। তোমার সন্তানের জীবন আজ সংকটাপন্ন। তুমি আমাকে দেখা দেও মা।
(লক্ষণ এবং হনুমান ধ্বণি দিতে দিতে মঞ্চে ঢুকে, অন্য পাশ দিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করে দেবী অম্বিকা)
লক্ষণ: জয় রাম চন্দ্রের জয়।
হনুমান: জয় ভগবান রাম চন্দ্রের জয়।
(হনুামন গদা দিয়ে রাবণকে আঘাত করতে যায়, অম্বিকা হনুমানকে বাঁধা দেয়।)
অম্বিকা: ভক্ত রাবণ, তুমি উঠে এসো। তুমিতো জানো তুমি শিবের বরে বলীয়ান। এভাবে তোমার মৃত্যু হবে না। তুমি উঠে এসো।
(অম্বিকা দেবীকে দেখে রাম অস্ত্র ফেলে দেয়, রামের ধনুর্বান ফেলা দেখে লক্ষণ এবং হনুমান তাঁদের যুদ্ধাস্ত্র ফেলে দেয়)
রাম: (ধনুর্বান ফেলে দিয়ে) প্রণাম মা অম্বিকা।
অম্বিকা: তথাস্তু।
(রাবণকে সাথে নিয়ে অম্বিকা মঞ্চে থেকে নেমে যায়।)
রাম: মা অম্বিকা স্বয়ং রাবণের সহায়। তাহলে কী রাবণ সংহার করে সীতাকে উদ্ধার করা হবে না। তাহলে কেন এ পন্ডশ্রম। কেন এত হত্যা, কেন এত রক্তপাত। কেন এত সৈন্য সংগ্রহ, কেন এত কষ্ট করে সাগর বন্ধন, কেন এত আয়োজন ।
(রাম বিষণ্ণ মনে মাটিতে বসে পড়ে, ব্রহ্মার মঞ্চে প্রবেশ করে)
ব্রহ্মা: জয় রামচন্দ্রের জয়
রাম: নমঃস্তে ব্রহ্মাদেব।
ব্রহ্মা: নমঃস্তে।
রাম: রাক্ষসরাজ রাবণ সীতাকে অপহরণ করে অশোক কাননে বন্ধী করে রেখেছে। তাঁকে উদ্ধার করতে না পারলে ক্ষত্রীয় কুলে জন্ম বৃথা।
ব্রহ্মা: তুমি হতাশ হইও না।
রাম: আমিতো রাবণ বধের কোন উপায় দেখছি না দেব । স্বয়ং মহেশ্বরী এসে রাবণকে রক্ষা করেছেন।
ব্রহ্মা: রাবণ বধের জন্য শঙ্কর তোমাকে অকালে চন্ডির আরাধনা করতে বলেছেন। তোমাকে শরৎ কালে দশভুজার বোধন করতে হবে। অকালে মহেশ্বরীর বোধন করো তাহলেই দেখবে সব দুঃখ ঘুচে যাবে।
রাম: বসন্তকাল পুজার শুদ্ধ সময়। শরৎকাল পুজার অকাল। তার বোধন করতে হয় কৃষ্ণা নবমীর দিনে। সেদিন তো গত হয়েছে। সকালে শুক্লা ষষ্ঠি। পুজা হবে কিভাবে।
ব্রহ্মা: আমি তোমেকে বিধান দিচ্ছি। ষষ্ঠি কল্পতেই তাকে বোধন করো।
রাম: তথাস্তু ব্রহ্মাদেব।
ব্রহ্মা: রাম চন্দ্রের জয় হোক।
(সপ্তম দৃশ্য শেষ)

চলবে...