স্পোর্টস ডেস্ক : গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে চার গোল। চারটিই অসাধারণ। কোনোটির চেয়ে কোনোটি কম নয়। প্রত্যেক গোলই এসেছে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। যার বদৌলতে ম্যাচ জিতেছে আর্জেন্টিনাও। দলের অধিনায়ক তিনি, সঙ্গে প্রাণভ্রমরাও। তার ওপরই চোখ থাকে সবার। ভক্তদের প্রত্যাশাও তিনি মিটিয়ে যাচ্ছেন সমান তালে। ফলে সমালোচনা উঠছেই, মেসিনির্ভর দল আর্জেন্টিনা।

মেসিকে বাদ দিলে আর্জেন্টিনা বড্ড ছন্দহীন। কিন্তু সেই সমালোচনাও উবে যাওয়ার পথে, যা পরিষ্কার হয়ে গেছে নক আউট পর্বের ম্যাচে। মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১-০ গোলের জয় দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। গোলটি করেননি মেসি, তবে তার বানিয়ে দেয়া বলেই গোল করেছেন রিয়াল উইঙ্গার অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। অবশ্য মারিয়া গোল দিলেও মেসির অসাধারণ জোগানের প্রশংসা সর্বত্র। মাঝ মাঠ থেকে যেভাবে তেড়েফুঁড়ে আগালেন মেসি, তাতে মনে হচ্ছিল শটটি নেবেন তিনিই। কিন্তু গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে আলতো টোকায় বল ছুড়ে দেন মারিয়ার দিকে, দক্ষ রিয়াল উইঙ্গার বিস্ময়করভাবে বল পাঠিয়ে দেন জালে। এই জয়ের পর একটা দাবি জোর করেই উঠছে, ‘আর্জেন্টিনা মেসিনির্ভর নয়’। তাদের গোল দেয়ার প্লেয়ার আরও আছে। এমন যখন অবস্থা মুখ খুলেছেন মেসি নিজেই। বলেছেন, ‘আমার ওপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল নয় আর্জেন্টিনা। পুরো দলই এখন ভালো খেলছে’।
এক সাক্ষাত্কারে বার্সা সুপারস্টার লিওনেল মেসি বলেছেন, ‘আমি মনে করি না দল আমার ওপরেই পুরোপুরি নির্ভরশীল। আমাদের দল মানসম্মত। সুতরাং আমি দলের শুধু একটি অংশ। আমরা জিতে চলেছি দলগত সমন্বয়েই’। খেলে থাকেন বার্সাতে। যেখানে তার অনেক সতীর্থই বিশ্বকাপের ট্রফিতে চুমু খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এটা কি মেসিকে খুব পোড়ায়? কিংবা এবারই কি সে আফসোস স্বস্তিতে পরিণত করতে চান মেসি? এমন প্রশ্নের জবাবে মেসি বলেছেন, ‘অবশ্যই আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জিততে চাই আমি। এটা সবার কাছে স্বপ্নের মতোই। তবে আমাকে দেশের বাইরে তুলনা করা উচিত নয়। আমি আর্জেন্টাইন, আমি এদেশেরই সন্তান।’ বার্সা সতীর্থের বিশ্বকাপ জেতা ঈর্ষা বাড়ায় তাকে। এমন কথাও অকপটে স্বীকার করেছেন রেকর্ড চারবারের ফিফা বর্ষসেরার খেতাব জেতা এই ফুটবলার। ‘আমি আসলেই ঈর্ষান্বিত তাদের জন্য (বার্সা সতীর্থ জাভি, ইনিয়েস্তারা), যারা ইতিমধ্যে জিতেছে বিশ্বকাপ। আমি এমন কথা অনেকবারই বলেছি। তবে এটা বলে বোঝাতে পারব না, একটি বিশ্বকাপ জেতার অনুভূতি কেমন হতে পারে। ক্যারিয়ারে তা একবার জিতে স্বাদ গ্রহণ করতে চাই’।
২০১০ বিশ্বকাপ ছিল মেসির জন্য ভিন্নরকমের। প্রথমবারের মতো ফিফা বর্ষসেরা হয়েই মাঠে নেমেছিলেন। মাঠ দাপিয়ে খেলেছেন, কিন্তু গোল পাননি। সেবার আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বিদায় নিয়েছিল। এবারও আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। তবে ভিন্নরূপে মেসি। গোল পাচ্ছেন নিয়মিত। বিগত চার বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে মেসির। হয়েছেন আরও পরিণত। সর্বপরি তার ঘর আলো করে এসেছে পুত্রসন্তান থিয়াগো। যার ছোঁয়ায় নাকি মেসিও হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য। এমন কথা নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন মেসি। ‘অবশ্যই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিগত কয়েকটি বছরে অনেক পরিণত হয়েছি আমি। এর মধ্যে অনেক ভালো ও খারাপ সময় অতিক্রম করেছি। যার মধ্যে দিয়ে পূর্ণ পেশাদার ফুটবলার ও ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেছি।’ ছেলে থিয়াগো প্রসঙ্গে মেসির মূল্যায়ন, ‘আপনি যখন বাবা হবেন, তখন অনেককিছুতেই পরিবর্তন আসবে। আমার বেলাতে সেই পরিবর্তন হয়েছে ব্যাপক হারে। আমাকে ভিন্নধাঁচে এনে দেয়ার জন্য, সেই সব দিকগুলোকে অশেষ ধন্যবাদ।’
পরশু রাতের ম্যাচে মেসি নাকি বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অন্যদের মতো আমিও ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কারণ, আমরা গোল করতে পারছিলাম না। জানতাম একটি ভুল করলেই বাড়ির পথ ধরতে হবে। আমরা কিছুতেই চাইছিলাম না ম্যাচটি ট্রাইব্রেকারে গড়াক। খেলাটা শেষ করতে চেয়েছি এর আগেই।’ সুইসদের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হয়েছে তাদের। মেসি এটা স্বীকারও করেছেন, ‘ম্যাচটা মোটেও সহজ ছিল না। বারবার বিদায়ের শঙ্কা পেয়ে বসছিল। শেষ অবধি আমরা জিতেছি, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

(ওএস/এইচআর/জুলাই ০৩, ২০১৪)