যশোর প্রতিনিধি : যশোরের বাঘারপাড়ার কুখ্যাত রাজাকার আমজাদ মোল্যার পর এবার তার ছয় সহযোগী মানবতাবিরোধী অপরাধে ফেঁসে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে যশোর আদালতে হুলিহট্ট গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে আবু তাহেরের করা মামলাটি ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।

যশোর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাঘাপাড়া আমলী আদালতের বিচারক শাহাজান আলী মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানোর পাশাপাশি পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছেন। আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঘারপাড়ার হুলিহট্ট, প্রেমচারা, নরসিংহপুর ও উত্তর চাঁদপুর গ্রামে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে হুলিহট্ট গ্রামের ওলিউল্লাহর ছেলে ফয়েজ আহম্মেদ, এলাহী বকশের ছেলে হাফিজুর রহমান, বরকতউল্লাহর ছেলে আব্দুল কাদের বাবু, নরসিংহপুর গ্রামের আলীম বিশ্বাসের ছেলে গাজী গহর আলী বিশ্বাস, পদ্মবিলা গ্রামের মীর মতিয়ার রহমানের ছেলে মীর আবু তাহের মুকুট ও প্রেমচারা গ্রামের মৃত সোবহান মোল্লার দুই ছেলে আমজাদ মোল্লা ও সবুর মোল্লাসহ কয়েকজন।

একাত্তরে ইব্রাহিম ডাক্তারের নেতৃত্বে খাজুরা বাজারে রাজাকার ক্যাম্প গঠন করা হয়। প্রেমচারা গ্রামের মোজাম বিশ্বাসের বাড়ির কাচারী ঘর ক্যাম্পের দফতর হিসেবে ব্যবহার হতো। এ ক্যাম্পের নেতৃত্ব দিতেন আমজাদ মোল্লা ও সবুর মোল্লা। আমজাদ মোল্লা হুলিহট্ট ও নরসিংহপুর গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে শান্তি কামিটি গঠন করে। যার সেক্রেটারি ছিল হাজী গহর আলী বিশ্বাস।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাজদ মোল্লা, ইব্রাহিম ডাক্তার, ফয়েজ আহম্মেদ মীর আবু তাহের মকুট, হাফিজুর রহমান, আব্দুল কাদের বাবু ও হাজী গহর আলী বিশ্বাসের নেতৃত্বে হত্যা, গুম, নির্যাতন, লুটতরাজ অগ্নিসংযোগ করে।

প্রেমচারা গ্রামের নুর হোসেন দফাদারের ছেলে নওশের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ায় তার মা ফুলজান বিবিকে রাজাকার কমান্ডর মজিদ ও ওহাব গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া অভিযুক্তরা এলাকার আবু তাহের, নওয়াব আলী মন্ডল, সুরমান মন্ডল, ওয়াজেদ আলী মন্ডল ও আছুফ আলী সরদারের বাড়িতে হানা দিয়ে মালামাল লুটপাট করে। পরে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় তারা কয়েকজনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টাও চালায়।

বরিশাল থেকে আসা কয়েকজন নারী-পুরুষ ভারতে যাওয়ার সময় চতুরবাড়ির বাজারে অবস্থান নেয়। এ সংবাদ পেয়ে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ওলিউল্লাহ ও তার ছেলে ফয়েজ আহম্মেদসহ অন্যরা ১২ নারীকে অপহরণ করে। পরে তাদের খাজুরা বাজারের রাজাকার ক্যাম্পের ইনচার্জ ইব্রাহিম ডাক্তারের হাতে তুলে দেয়া হয়। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়ায় যায়নি।

মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের পর এসব রাজাকাররা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে এলাকার প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ সুযোগ পাননি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানবতাবিরোধীদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নিলে এ মামলা করা হয়।

(ওএস/এসপি/ ডিসেম্বর ০৬, ২০১৭)