রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : আজ ৮ ডিসেম্বর, লোহাগড়া হানাদার মুক্ত দিবস। মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে লোহাগড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা  যুদ্ধের মাধ্যমে লোহাগড়া থানা আক্রমন করে লোহাগড়াকে পাক হানাদার মুক্ত করেন। সর্বত্র পত্ পত্ করে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। স্বর্তঃস্ফুর্ত বিজয় উল্লাসে রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মুক্তিপাগল জনতা। 

১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের শুরুতেই লোহাগড়া থানার অধিকাংশ এলাকা পাক হানাদার মুক্ত হয়। এ সময় স্থানীয় রাজাকাররা থানায় আশ্রয় নেয়। পুলিশ এবং স্থানীয় রাজাকাররা মিলে থানা অভ্যন্তরে অস্ত্র ও গোলাবারুদের বিশাল মজুদ গড়ে তোলে। মধ্য নভেম্বরে মুক্তিযোদ্ধারা লোহাগড়া থানা আক্রমনের চুড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহন করে।

এ জন্য তৎকালীন বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ খসরুজ্জামানের উপস্থিতিতে ২ ডিসেম্বর নোয়াগ্রাম ইউপির আড়পাড়া গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা বাবু মীরের বাড়িতে এক গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে গ্রুপ কমান্ডার ইমান আলী,ওয়ালিয়ুর রহমান,নুরমিয়া সহ ৩০/৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। অপর দিকে,বীর মুক্তিযোদ্ধা মাকড়াইলের কবির হোসেনের নেতৃত্বে কমান্ডার শেখ ইউনুস আলী,লুৎফর বিশ্বাস,রওশন গাজী,আবুল হোসেন খোকন সহ ৪০/৪৫ জনের একদল মুক্তিযোদ্ধা গোপন বৈঠকের মাধ্যমে লোহাগড়া থানা আক্রমনের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

৮ ডিসেম্বর ফজরের আজানের সাথে সাথে শরীফ খসরুজ্জামান,কবির হোসেন,শেখ ইউনুস আলী, লুৎফর বিশ্বাস, আবুল হোসেন খোকন, মাসুম জমাদ্দারের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ৪ ঘন্টা ব্যাপী গেলিরা আক্রমনের মাধ্যমে পাকহানাদার বাহিনী পরাস্ত হয় এবং শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হন। যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে থানার সামনে উপজেলার কোলা গ্রামের হাবিবুর রহমান ও যশোর সদর উপজেলার জঙ্গল বাধাল গ্রামের মোস্তফা কামাল শহীদ হন।

এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ২২ জন পুলিশ সহ স্থানীয় রাজাকাররা আটক হয়। শহীদ হাবিবুর রহমানকে লোহাগড়া থানায় এবং শহীদ মোস্তফা কামালকে ইতনা স্কুল এন্ড কলেজ চত্তরে দাফন করা হয়। লোহাগড়া মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শুক্রবার দিনব্যাপি নানা কর্মসুচি গ্রহন করেছে। কর্মসুচীর মধ্যে রয়েছে পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, বর্ণাঢ্য র‌্যালী, শহীদ হাবিবুর রমানের কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা ও মিলাদ মহফিল।

(আরএম/এসপি/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৭)