নিতাই সাহা, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) : উপজেলার নলুয়াপাড়া গ্রামের এক বিধবা নারী কেঁচো চাষী মোছাঃ রোকিয়া বেগম। এই গ্রামেই তার জন্ম হয়েছিল ১৯৭২ সালে। দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে রোকিয়া বেগম দ্বিতীয়। রোকিয়া বেগমের বাবা কৃষি কাজ করতেন। ১৯৮৪ ইং সালে বার বছর বয়সে তার পিতা মাতা একই গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আব্দুল ছালামের সঙ্গে তার বিবাহ দেন। তখন তার স্বামী কাঠের ব্যবসা করতেন। ইতিমধ্যে তিনি চার ছেলে ও তিন মেয়ে সন্তানের মা হয়েছেন।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাবে অল্প বয়সে সে কিছু বুঝে না উঠার আগেই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসাবে বাল্য বিবাহের শিকার হন তিনি।

অপরদিকে অধিক সন্তান নিয়ে দারিদ্রতার বেড়া জাল ভেংগে বের হতে পারেনি এই পরিবারটি। এক পর্যায়ে দারিদ্রতার কষাঘাতে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় সমিতিভূক্ত হয়ে নামে মাত্র সেবা মূল্যে ২০১৪ইং সালে কাঠের ব্যবসার জন্য প্রথম দফায় ১২ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন এবং যথারীতি তা পরিশোধ করেন। দ্বিতীয় দফায় ২০১৫ ইং সালের অক্টোবর মাসে আবারও একই ব্যবসার জন্য ১৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। কিন্তু বিধি বাম। ২০১৬ ইং সালের ১লা জুন তার স্বামী আব্দুল ছালাম মারা যান। মৃত্যুর পর সংস্থাটি তার নিয়ম মাফিক আসল এবং সেবামূল্যে সহ ৬ হাজার ২ শত ১৮ টাকা মওকুফ করেন।

রোকিয় বেগম সংস্থাটির একজন নিয়মিত সদস্যা। ইতিমধ্যে তার চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে একজন ঠেলাগাড়ী চালক বিয়ে করে ছয় মাসের মধ্যে পৃথক হয়ে যায়। দ্বিতীয় ছেলে রাজ মিস্ত্রির জোগালীর কাজ করেন, এত করে সংসার চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সমৃদ্ধি কর্মসূচীর উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মকর্তা চিনু রেমার পরামর্শে ২০১৬ ইং সালের জুলাই মাস থেকে ভার্মিকম্পোস্ট (কেঁচোচাষ) প্লান সম্পর্কে প্রশিক্ষণ এবং ধারনা নিয়ে প্লান্ট স্থাপন করেন।

সমৃদ্ধি কর্মসূচির সহায়তায় কেঁচো সার উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরন ও বাজারজাত করে এ পর্যন্ত এক শত পঁচিশ মন কেঁচো সার বিক্রয় করতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে প্রতিমাসে ২০মন সার উৎপাদন হয়। ১০ টাকা কেজি হিসাবে এ সার বিক্রয় করে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছেন। পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে। দিনে দিনে এর চাহিদা বাড়ছে। ভবিষ্যতে তার পরিবারে আরও স্বচ্ছলতা আসবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন(পিকেএসএফ)ও সহযোগীসংস্থা দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র(ডিএসকে) সমৃদ্ধি কর্মসূচির সহযোগিতায় নলুয়াপাড়া গ্রামের কেঁচো সার উৎপাদনকারী মোছাঃ রোকিয়া বেগম এর জীবনের প্রতি তার আত্ম বিশ্বাস বেড়েছে। একাগ্র কর্মই জীবন এবং স্বচ্ছলতা।

তিনি বলেন, তার পরিবার ছোট থাকলে তার আরও স্বচ্ছলতা থাকতো। শুধু তাই নয় ,অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়াকে সে মেয়েদের জীবনের জন্য অভিশাপ বলে ভারাক্রান্ত কন্ঠে প্রতিনিধিকে জানান।

সংস্থাটির এ প্রকল্পের সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ প্রকল্পাটি আরও কিচু কাজ রয়েছে হতদরিদ্র মানুষদের উন্নয়নের জন্য । সারা বাংলাদেশে ২১ টি ইউনিয়নের এ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এর মধ্যে এ উপজেলার একটি ইউনিয়ন হচ্ছে দুর্গাপুর সদর ইউনিয়ন।

(এনএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৭)