খুলানা প্রতিনিধি : বেসরকারি কালখানাগুলোর মতো এবার খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলোর ভাগ্যও অনেকটা অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সরকার বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনকে (বিজেএমসি) কোম্পানিতে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়ায় এ আশংকা তৈরি হয়েছে।

এদিকে, মিল চালু ও বকেয়া পাওনার দাবিতে এতোদিন শুধুমাত্র শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্দোলন করলেও কোম্পানিতে রূপান্তর করার খবরে এর কর্মকর্তারাও আন্দোলনে নেমেছে। তারা নানা আন্দোলন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে ফুঁসে উঠছে।

অপরদিকে, অধিকাংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকল ও জুটপ্রেস বন্ধ এবং বকেয়া পাওনার দাবিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীরাও দীর্ঘ দিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, সরকার বিজেএমসিকে কোম্পানিতে রূপান্তর করতে যাচ্ছে, এ খবর গত ১৮ জুন খুলনায় সংশ্লিষ্টরা জানতে পারেন।

সরকারের এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবিতে তাৎক্ষনিকভাবে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিলের শ্রমিক নেতারা প্লাটিনাম সিবিএ কার্যালয়ে বৈঠক করেন।

শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বৈঠকে সরকারের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে এ প্রতিবাদে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

কর্মসূচির মধ্যে ছিলো গেটসভা, বিক্ষোভ মিছিল ও শ্রমিক জনসভা। পরবর্তীতে ২ জুলাই থেকে আরো ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

এর মধ্যে ২ জুলাই থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মিল গেটে সভা, ৬ জুলাই সকাল ১০টা থেকে ১১টা রাজপথে মানববন্ধন, ৭ জুলাই মিলগুলোর প্রধান কার্যালয় ২ ঘণ্টা ঘেরাও, ৮ জুলাই ১০ টা থেকে ১১টা রাজপথ অবরোধ এবং ৯ জুলাই ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মিলগুলোর প্রধান কার্যালয়ের সামনে অনশন।

প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমীন, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, শ্রমিক নেতা সৈয়দ জাকির হোসেন, হুমায়ুন কবির খান ও সাইফুল ইসলাম লিটু জানান, বিজেএমসিকে কোম্পানিতে রূপান্তরের জন্য সরকারের উদ্যোগ শ্রমিকদের জন্য অপ্রত্যাশিত।

লোকসান কমাতে পাবলিক কোম্পানি করে সরকার ৫১ শতাংশ শেয়ার রেখে বাকি ৪৯ শতাংশ শেয়ার পাবলিকের কাছে ছেড়ে দিলে মিলগুলোর অবস্থা বেসরকারি মহসেন, সোনালী, এ্যাজাক্স, দাদাম্যাচ ফ্যাক্টরিসহ বন্ধ হওয়া অন্যান্য জুট মিলের ভাগ্য বরণ করবে।

মিলগুলো বন্ধ হলে এ অঞ্চলটি রুগ্ন শিল্পাঞ্চলে পরিণত হবে। সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

এদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল হোল্ডিং কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেয়ার চেষ্টাকে 'গভীর ষড়যন্ত্র' বলে উল্লেখ করেছেন নগর বিএনপির নেতারা।

কর্মরতদেরও মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী স্বল্প বেতনে চাকরি করতে বাধ্য করা হবে। এমনকি পাটকলগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি। এর প্রতিবাদে বিজেএমসির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা আন্দোলন করছে বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে, বেসরকারি জুট মিল মহসিন ও সোনালী চালু এবং এজাক্সসহ অন্য সকল বন্ধ মিল পূর্ণাঙ্গ চালু ও বকেয়া পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধ, ঘেরাও, লাঠি মিছিল, মশাল মিছিল ও স্বারকলিপি প্রদানসহ ৯ দিনের কর্মসূচি পালন করছে বেসরকারি পাটকলের শ্রমিকরা।

খুলনার মহসেন, সোনালী, অ্যাজাক্রা জুট মিল চালু এবং আংশিক বন্দকৃত মিলগুলো পুর্ণাঙ্গ চালু ও শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনার দাবিতে ব্যাক্তি মালিকানাধীন পাট সুতা বস্ত্রকল সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে তৃতীয় দফায় এ কর্মসুচি ঘোষণা করা হয়।

২৮ জুন থেকে কর্মসূচি শুরু হয়। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সাগর ও স্প্যাশালাইজড জুট মিল গেটে সভা, ৪ জুলাই আফিল গেট থেকে ফুলবাড়ীগেট পর্যন্ত লাঠি মিছিল, ৬ জুলাই সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ৩ ঘন্টা আফিল গেট, শিরোমনি ও ফুলবাড়ীগেটে রাজপথ অবরোধ এবং ৯ জুলাইয়ের মধ্যে মিল চালু ও বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করা হলে ১০ জুলাই প্রতিনিধি সভার মাধ্যমে লাগাতার রাজপথ, রেলপথ অবরোধ কর্মসূচিসহ কঠিন কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলেও শ্রমিক নেতারা জানান।

বেসরকারি পাট, সুতা, বস্ত্রকল সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়কারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ বলেন, অবিলম্বে বন্ধ পাটকল চালু ও বকেয়া পরিশোধ করা না করা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

(ওএস/এটিঅার/জুলাই ০৩, ২০১৪)