শরীয়তপুর প্রতিনিধি : বাজারে পেয়াঁজের দর ভালো থাকায় মৌসুম শুরুর একমাস আগেই অপরিপক্ক পেয়াঁজ তুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন শরীয়তপুরের চাষিরা।  গত টানা তিন বছর ভরা মৌসুমে বাজারে পেয়াঁজের দাম কম থাকায় লোকসান গুনতে হয়েছিল কৃষকদের। এবছর কয়েকগুন বেশী  দাম পাওয়ায় তারা আগাম বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ বিষয়টিকে দেখছেন ইতিবাচক দৃষ্টিকোন থেকে। আগাম পেয়াঁজ কর্তনের ফলে একই জমিতে নতুন ফসল করার সুযোগ পাচ্ছেন বলেও জানান কৃষি বিভাগ।

বাংলাদেশ সহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে গত ২-৩ মাস যাবৎ যেভাবে পেয়াঁজের ঝাঁজ বেড়েই চলছিল, ঠিক সে মুহুর্তে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছেন শরীয়তপুরের পেয়াঁজ চাষিরা। পেছনের বছরগুলোতে ধারাবাহিক লোকসান গুনার কারনে, তারা পেয়াঁজ কর্তনের মৌসুম হওয়ার এক মাস আগেই পেয়াঁজ তোলা শুরু করে দিয়েছেন। ক্ষেত থেকেই কৃষক মুরিকাটা কাচাঁ পেয়াঁজ বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে। আর এতটা উচ্চ মূল্য পাওয়ায় বেজায় খুশি পেয়াঁজ চাষিরা।

এ বছর শরীয়তপুর জেলার ৬ উপজেলায় ৩ হাজার ২ শত ৫০ হেক্টর জমিতে পেয়াঁজের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে শুধু জাজিরা উপজেলাতেই আবাদ হয়েছে ২ হাজার ২ শত ৩৬ হেক্টর। এ বছর কৃষকের প্রতি বিঘা জমিতে পেয়াঁজ আবাদে খরচ হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। ভরা মৌসুমে প্রতি বিঘায় ফলন হওয়ার কথা ৬০ থেকে ৬৫ মন। কিন্তু বাজারে দর ভাল থাকায় মৌসুমের অন্তত ৪ সপ্তাহ আগেই পেয়াজ তুলে ফেলায় ফলন পাওয়া যাচ্ছে এর অর্ধেক পরিমান। কিন্তু লাভের অংকটা অনেক বড়। অন্যান্য বছর যেখানে এক টন পেয়াঁেজর সর্বোচ্চ দাম পাওয়া গেছে মাত্র ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ বছর সেখানে দাম পাওয়া যাচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। নতুন আগাম পেয়াঁজ বাজারে আসায় আমদানীকৃত ভারতীয় পেয়াঁজের চাহিদা কমে গেছে অনেকটা এবং প্রতি কেজিতে দামও কমেছে ৫-১০ টাকা। শরীয়তপুরের স্থানীয় বাজারগুলো এখন শরীয়তপুরের নতুন পেয়াঁজে ভরে গিয়েছে।

জাজিরার পেয়াঁজ চাষি মোকছেদ মোল্যা, চুন্নু শেখ, ইদ্রিস মাদবর, আবুল কালাম বেপারী, শিপন আক্তার ও সুরুজ মিয়া জানান, টানা তিন বছরের লোকসান পোষাতেই তারা অপরিপক্ক পেয়াঁজ কর্তণ করে বাজারজাত করছেন। কারন, মৌসুমের সময় সরকার বিদেশ থেকে আমদানি করায় তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এভাবে পেয়াঁজ আগাম তোলায় ফলন অর্ধেক পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তারা। কিন্তু, দাম পাওয়া যাচ্ছে ৭-৮ গুন বেশী। তারা আগাম পেয়াঁজ তুলে একই জমিতে কেউ কেউ নতুন করে পেয়াঁজের বীজ রোপন করবেন আবার কেউ উচ্ছে, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করার কথা জানিয়েছেন।

স্থানীয় আঙ্গারিয়া বাজারের খুচরা সব্জি বিক্রেতা আব্দুল হক ছৈয়াল ও মোক্তার হোসেন জানান, গত এক সপ্তাহ যাবৎ বাজারে নতুন পেয়াঁজ আসতে শুরু করেছে। তারা বলেন, দেশী পেয়াঁজ বাজারে আসায় ভারতীয় বা বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পেয়াঁজের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে এবং দাম কমেছে। বাজারে বর্তমানে ভারতীয় পেয়াঁজ প্রতি কেজি ৭০ টাকা এবং দেশী নতুন পেয়াঁজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, পর পর তিন বছর পেয়াঁজ আবাদ করে লোকসানের মুখে পরে কৃষক, তাই এবছর লক্ষ্যমাত্র থেকে কিছুটা কম জমিতে আবাদ হয়েছে। এ বছর কৃষি আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষি বিভাগের সহায়তায় পেয়াঁজের মাঠের অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু, এবার দেশী ও আন্তর্জাতিক বাজারে পেয়াজের দাম বেশী থাকায় কৃষক আগাম পেয়াঁজ কর্তন করে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলন অর্ধেক হলেও তারা প্রতি বিঘা জমি থেকে ৭০-৮০ হাজার টাকা মুনাফা পাচ্ছেন। আমরা এ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই বিবেচনা করছি। কৃষক সন্তোষজনক মুনাফা করায় আমরাও খুশি।

তিনি আরো বলেন, একমাস আগে অরিপক্ক পেয়াঁজ তুলে নিয়ে নতুন করে একই জমিতে আরেকবার পেয়ঁজের চারা রোপনসহ মিষ্টি কুমড়া ও উচ্ছের মত অন্যান্য সব্জি চাষ করার সুযোগ পাচ্ছেন কৃষক।

(কেএনআই/এসপি/ডিসেম্বর ২১, ২০১৭)