প্রবীর সিকদার


দলীয় প্রতীকে স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সরকারি সিদ্ধান্তের পর আওয়ামীলীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা বিক্রির অভিযোগ নতুন নয়। আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থেকেও টাকা কিংবা প্রভাব খাটিয়ে নৌকা দখল করবার সফল কিংবা ব্যর্থ চেষ্টা চলছে তো চলছেই! হাজার হোক সরকারি দলের প্রতীক বলে কথা! প্রিয় পাঠক, আজ না হয় শুনুন, ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার নৌকা প্রতীকের একখানি কড়চা!

তবে শুরু হোক সেই কড়চা! বিএনপির ভাবাদর্শে আসক্ত শুধু নয়, উপদেষ্টা-শিক্ষক নেতা সেলিম ভুঁইয়ার ঘনিষ্ঠ সহচর এক সাংবাদিক আজ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আওয়ামীলীগের স্বঘোষিত নেতা। তিনি একসময় বিএনপির প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিলেও এখন তিনি আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর আত্মীয়! ফরিদপুরের সংসদীয় এলাকা আলফাডাঙ্গা-বোয়ালমারী-মধুখালি থেকে তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থিতার জন্য দেদারছে টাকা ঢালছেন। আলফাডাঙ্গা সদরের কয়েক আওয়ামীলীগ নেতা ও কয়েকটি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি-সম্পাদকদের পকেটে ঢুকিয়ে আসন্ন ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য আলফাডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচন ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার আলফাডাঙ্গা সদর, গোপালপুর ও বুড়াইচ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি নিজের খেয়াল-খুশিমত প্রার্থী দিয়ে আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আলফাডাঙ্গায় আওয়ামীলীগেরর রাজনীতিকে বিভাজিত করে ফেলেছেন।

মন্ত্রীর সাথে আত্মীয়তার জোরে ওই স্বঘোষিত আওয়ামীলীগ নেতা ওই আসনের বর্তমান এমপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানের কোনও তোয়াক্কা না করেই স্থানীয় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে বিভাজনের সর্বনাশা ধারা বেগবান করার অপচেষ্টা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলফাডাঙ্গা-বোয়ালমারী-মধুখালি আসনে বর্তমান এমপি আব্দুর রহমান যেন আর আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না পান, আত্মীয় মন্ত্রীর সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে তিনি সবরকমের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সেই অপকর্মকে আরও বেগবান করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অংশ হিসেবেই তিনি আসন্ন একটি পৌরসভা নির্বাচন ও তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিড নেতাদের হাতে আওয়ামীলীগের প্রতীক নৌকা তুলে দেওয়ার কাজ হাতে নেন।

আলফাডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচন ও বুড়াইচ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনি হাইব্রিড নেতাদের হাতে নৌকা তুলে দিতে ব্যর্থ হলেও গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই হাইব্রিড নেতার পকেটে নৌকা ঢুকিয়ে দিতে তিনি সমর্থ হয়েছেন। যদিও আলফাডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলফাডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সাইফারের নৌকার বিরুদ্ধে এবং বুড়াইচ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আলফাডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আহসান উল্লাহ রানার নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দাড় করিয়ে রাখতে তিনি সফলতার পরিচয় দিয়েছেন।

আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই হাইব্রিড নেতার নৌকা প্রতীক প্রাপ্তিতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সারা আলফাডাঙ্গার বঙ্গবন্ধুভক্তরা। তারা ওই দুই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছেন। আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উড়ে এসে জুড়ে বসা কথিত হাইব্রিড নেতা আব্দুর রাজ্জাকের নৌকার বিরুদ্ধে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আহাদুল হাসান আহাদ। একই উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কথিত হাইব্রিড নেতা ইনামুল হাসানের নৌকার বিরুদ্ধে একই প্রতীক আনারস নিয়ে লড়ছেন ওই উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম।

আওয়ামীলীগের সাধারণ কর্মী সমর্থকেরা জানিয়েছেন, তৃনমূল আওয়ামীলীগের সমর্থন আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন ও গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর আনারস প্রতীকের পক্ষে থাকলেও আত্মীয়তার সূত্রে এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট আলফাডাঙ্গার এক স্বঘোষিত আওয়ামীলীগ নেতার ক্ষমতা ও টাকার দাপটের কাছে ওই দুই ইউনিয়নের দুই নৌকা প্রতীক ছিনতাই হয়ে যায়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামীলীগের সাধারণ নেতা কর্মী সমর্থকেরা আনারস প্রতীকের ওই দুই প্রার্থীকেই আওয়ামীলীগের আসল প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমে পড়েন। তাদের স্পষ্ট কথা, কে বা কারা আওয়ামীলীগের সত্যিকারের প্রার্থী সেটা ভোটের দিন তথা ২৮ ডিসেম্বর এলাকার ভোটাররা ব্যালটেই প্রমাণ করবেন। আলফাডাঙ্গা আওয়ামীলীগের হাজার হাজার নেতা কর্মী সমর্থকদের একটাই দাবি, ভোটের দিন ভোট ছিনতাইয়ের অপচেষ্টা হবে, নির্বাচন কমিশন যেন যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেন।

আওয়ামীলীগ একটি বড় দল। সেই দলে বিএনপি কিংবা জামায়াতের সুযোগ সন্ধানীরা ঢুকবেন কিংবা আওয়ামীলীগের সুযোগ সন্ধানীরা নানা ধান্ধায় ওদের দলে ভেড়াবেন, এটায় কি এমন আশ্চর্য হওয়ার আছে! কিন্তু ওরা ঢুকেই দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাইপাস করে পরিচালনার দায়িত্বে চলে যাবেন কিংবা বঙ্গবন্ধুর নৌকা প্রতীকে ভাগ বসাবেন, এটা মেনে নেওয়া অসম্ভব। আওয়ামীলীগ শুধু গতানুগতিক কোনো রাজনৈতিক দল নয়, আওয়ামীলীগ একটি দর্শন ও বিশ্বাসের নামও। আর তাইতো আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থেকেও আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা কর্মী সমর্থকদের অন্তরজ্বালা আমি হৃদয় দিয়ে অনুভব করি এবং যখন যেমন কষ্ট অনুভব করি, সেই কষ্ট সকলকে জানিয়ে দেওয়ার দায়বদ্ধতার প্রকাশ ঘটাই কলম চালিয়ে। আমি আশা করবো, আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা কর্মী সমর্থকদের প্রতি সম্মান জানাতে ডিগবাজি বিশারদদের হাতে নৌকা তুলে দেওয়ার শেষ নজির হোক ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা। আমি বিশ্বাস করি, আলফাডাঙ্গার সঠিক চিত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামীলীগ সভাপতির গোচরে দ্রুতই আসবে এবং দ্রুততার সাথেই পদক্ষেপ নিবেন তিনি; আলফাডাঙ্গার বঙ্গবন্ধুভক্তদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ দ্রুতই বন্ধ করবেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিনিধি হিসেবেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।