প্রবীর বিকাশ সরকার : [ভূমিকা : আমার ৫৫ বছরের জীবনে বাবার সঙ্গে কেটেছে মাত্র ২৪-২৫টি বছর! জ্ঞান হওয়ার পর থেকে যেভাবে বাবাকে দেখেছি, চিনেছি, জেনেছি এবং বুঝেছি তার মূল্যায়নই হচ্ছে এই আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস বা স্মৃতিকথা ‘অতলান্ত পিতৃস্মৃতি’---এমন করে খোলামেলা খুঁটিনাটি কোনো স্মৃতিকথা আর কোনো বাঙালি লিখেছেন তার জন্মদাতা পিতৃদেবকে নিয়ে আমার অন্তত জানা নেই।]

প্রায়শ স্কুল ফেরার পথে বাবার অফিস হয়ে ফিরতাম। দীপু ও আমাকে নিয়ে গিয়ে ক্যান্টিনে সিঙ্গারা, লুচি, বিস্কুট বা কেক জাতীয় খাবার দিতে বলতো ম্যানেজারকে। বাবাও খেতো। তারপর চলে আসতাম। অনেক সময় কাজের চাপে বাবা যেতে পারতো না, এক টুকরো কাগজে লিখে দিত তাতেই কাজ হতো। কোনো-কোনোদিন দীপু যখন থাকতো না বাবার টেবিলে বসে সেদিনের সংগৃহীত সিগারেটের প্যাকেট ছিঁড়ে কার্ড তৈরি করতাম। এই কার্ড দিয়ে আমরা ছেলেবেলায় খেলতাম।

বস্তুত এই সিগারেটের প্যাকেট সংগ্রহ করার জন্যও বাবার অফিসে প্রায় প্রতিদিন যেতে হতো। অনেক সময় পুলিশের সাধারণ কনস্টবলরা সংগ্রহ করে রাখতেন। অল্প বয়সী কৃষ্ণদা ছিল অফিসের কেয়ারটেকার, থাকতো অফিসের লাগোয়া একটি সরু কক্ষে। আমাদের বাজার-সওদাও করে দিত সে। সেও তুলে রাখতো খালি প্যাকেট। পরে শফিক নামে একটি দরিদ্র ছেলেকে বাবা অফিসের বারান্দায় সিগারেট-পান-বিড়ি বিক্রির জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। রমনা সিগারেট কোম্পানির ম্যানেজারবাবুকে বলে মালামাল বাকিতে তোলার ব্যবস্থাও করেছিল। তার কাছ থেকেও নানা ধরনের সিগারেটের খালি প্যাকেট পেতাম।

তাছাড়া বাবা টানতো কিংস্টর্ক সিগারেট সেই প্যাকেট তো পেতামই। শুকুরকাকু নামে একটু পাগলাটে ধরনের মধ্যবয়স্ক লোক বাবার ছিলেন দারুণ ভক্ত। একমুখ দাড়ি, পাতার বিড়ি টানতেন, খুব বেশি কথা বলতেন। মূলত রিক্সা চালালেও ভালো ছুতারের কাজও জানতেন। তিনি একবার বাবার অনুরোধে চমৎকার দুটি লাটাই বানিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে ও দীপুকে। আমরা সাব-রেজিস্ট্রি বিল্ডিং এর মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম, কখনোবা ছোটরা সরকারি কলোনীর মাঠে গিয়ে। বাবাও সঙ্গ দিত ঘুড়ি ওড়ানোতে রোববারে বিকেলের দিকে অফিস থেকে ফেরার পর।

বাবা চিরকালের কর্মপাগল মানুষ কোনোদিন ছুটি কাটাতে দেখিনি একমাত্র সিরিয়াস কিছু না ঘটলে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববারেও সকালবেলা বাজার করে দিয়ে সোজা অফিস। বিকেলে ফিরে হয়তো বাড়ির সকল ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা না হয় ঘুড়ি ওড়ানো এমনকি মার্বেল পাথরের গুলিখেলাতেও সঙ্গ দিয়েছে। শিশু-কিশোরদের প্রতি খুব দুর্বল ছিল বাবা। একমাত্র রোববারেই সন্ধেবেলা হারিকেনের আলোয় নিজে বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দুভাইকে পড়াতো। বাবা ইতিহাসের বই আর রহস্যেপন্যাসের একনিষ্ঠ পাঠক। অবশ্য ক্যাসিক উপন্যাসগুলোই পড়ছিল অবসর গ্রহণ করার পর যা চাকরি জীবনের ব্যস্ততার জন্য পড়া হয়ে ওঠেনি। কোনো কাজেই আমরা কোনোদিন বাবার কাছ থেকে বাধাগ্রস্ত হয়নি। বাবা বলতো, ‘ছাত্রদের শুধু পড়ালেখা করলেই চলবে না, সমাজের সেবামূলক নানা কাজও করা দরকার। সাহিত্য-গানবাজনাচর্চা, খেলাধুলাও সমানে করতে হবে। তাহলেই পরিপূর্ণ মানব হওয়া যাবে নতুবা নয়।’

ছেলেবেলায় অন্যান্য ছেলেদের মতো খেলনা গাড়ির পাগল ছিলাম আমিও। কত খেলনা গাড়ি, স্টিমার, বিমান কিনে দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। দুদিনেই খুলে ফেলে আবার সাজাতে গিয়ে ভেঙ্গেচুরে শেষ। কিন্তু কিছুই বলতো না বাবা, হয়তো ভেবেছিল, কারিগরির দিকে আমার ঝোঁক আছে তাই কিভাবে যানবাহন তৈরি হয় এই কারিগরি কৌশল আয়ত্ব করার জন্য কৌতূহলবশত এগুলো ভেঙ্গেচুরে শেষ করছে ছেলে! করুক। আসলে শৈশব থেকেই আমার কৌতূহলের সীমারেখা নেই। সেইসঙ্গে প্রচণ্ড জেদি ও উচ্চাবিলাসী। যা চাইতাম সেটা কিনে দিতেই হতো যত দামিই হোক না কেন! তাই একবার বাবা খেদের সঙ্গে বলেছিল, ‘সব দেবো, শুধু আকাশের চাঁদ চেয়ো না! ওটা দিতে পারবো না।’ বলা যায় বড় ছেলে হিসেবে আদরযত্নের ভাগটাই বাবা বেশি দিয়েছে আমাকে। কড়া শাসন পেয়েছি মায়ের দিক থেকে। যে কারণে ভাইবোন সবাই মাকে বেশ ভয় করলেও বাবাকে সবাই মনে করতাম বন্ধু। কিন্তু যখন কলেজে উঠলাম তখন মাও আমার বন্ধু হয়ে উঠেছিল ক্রমে ক্রমে। কত আবদার যে মিটিয়েছে আমার, মনে হয় এমনটি অন্য কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারে চিন্তাই করা যেতো না! আমাদের পরিবারে দামি খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-আশাকের বিলাসিতা কোনোকালেই ছিল না। মা খুব সাজসজ্জা করতো তাও নয়।

নিজে আমাদের জামা-কাপড় হাতে, সেলাই মেশিনে তৈরি করে দিত। শার্ট ছিঁড়ে গেলে রিপু করতো নিপুণ আঙুলে। আহা, সেই সময় মধ্যবিত্তের টানাপোড়েনের মানসিক একটা আনন্দ যেমন ছিল তেমনি ছিল স্বপ্ন দেখার প্রবণতা। এখন সেসব উঠেই গেছে! বাবাকে যে আমি সত্যিই ভালোবাসি এবং আমার সকল গতির উৎস এটা প্রমাণিত হলো একবার যখন বর্ষাকালে বৃষ্টির মধ্যে ঘুটঘুটে অন্ধকারে খাল বেরোতে গিয়ে সাপে কামড়ালো বাবাকে! বিষধর সাপ নয় ঢোঁড়াসাপ। এর বিষ নেই। বাবা তো স্বাভাবিকই শুধু হাঁটুর নরোম মাংশে কয়েকটি লালচে গুটি গুটি দাগ। মা ডেটল ঢেলে ধুয়ে দিল। কিন্তু আমি তো ভয়ে মরি! আগেই বলেছি, সাপ-ব্যাঙে আমার দারুণ ভয়! সাপ কামড়ালেই মানুষ মরে যায় এটা ছিল আমার বদ্ধমূল বিশ্বাস। পরে হয়তো বাবার সারা শরীরে বিষ ছড়িয়ে যেতে পারে মনে করে মাকে বার বার জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হবে মা বাবার?’ মা বলল, ‘কিছুই হবে না ওতো সামান্য ঢোঁড়াসাপের কামড়, তাতে বিষ নেই। চিন্তা করিস না বাবা।’ তবুও আমি নিঃসংশয় হতে পারিনি।

বাবা তো দিব্বি স্নান সেরে খেয়েদেয়ে ঘুম দিয়েছে, ঠান্ডাও লেগেছিল। একটু কিছুতেই ঠান্ডা লেগে যায় বাবার। আমি ঘুমুই বাবার সঙ্গে এক পাশে আর ছোট ভাইটি অন্য পাশের খাটে মায়ের সঙ্গে। গভীর রাতে জেগে ওঠে হারিকেনের ঝাপসা আলোয় বাবার হাত স্পর্শ করে দেখলাম বেশ গরম। মানুষ মারা গেলে ঠান্ডা হয়ে যায় তার দেহ রহস্য গল্পে পড়েছি। তারপর দেখলাম নিঃশ্বাসের সঙ্গে বাবার বুক ওঠানামা করছে। তখন নিশ্চিন্ত হতে লাগলাম যে বাবা মারা যাবে না। সেদিন সত্যি অনুভব করলাম পিতা যে কী অপরিহার্য একটি অস্তিত্ব মানবসংসারে! যাদের পিতা নেই তাদের কষ্টটা অনুভব করতে শিখলাম। অনেক পরে যখন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিষ্ণু সাহা ও স্বপন সেনগুপ্তকে পেলাম তখন পিতৃহীন তাদের কথা ভেবে আমি খুব মনোকষ্টজলে সিক্ত হতাম। তাদের দুজনের প্রাণপ্রিয় বাবাকে পাকবাহিনী রাজাকারের সহায়তায় তুলে নিয়ে গিয়েছিল আর কোনোদিন ফিরে আসেননি তাঁরা। দুজনেরই অনেকগুলো ভাইবোন, বড় পরিবার, কত অমানুষিক কষ্ট, পরিশ্রম করে যে দুটি পরিবার দাঁড়াতে পেরেছে সেই ইতিহাস বড় বেদনাদায়ক। কোনোদিন কোনো সরকার থেকেই এরা কোনো প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি।

এজন্য তাদের দুঃখবোধও নেই, এটাই তাদেরকে সত্যিকার মহানুভবতায় উন্নীত করেছে। তাঁরা ধরে নিয়েছে, দেশমাতৃকার জন্য দুজন পুরুষ জীবনদান করার জন্যই জন্মেছিলেন। স্বপনের বাবা ছিলেন জেলা সড়ক ও জনপথ দপ্তরের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার আর বিষ্ণুর বাবা ছিলেন রাজগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। বাবাও আমার এই বন্ধু দুজনকে খুব স্নেহ করতো, মৃত্যুর আগেও তাদের খোঁজ-খবর নিয়েছে। যাইহোক, সাপে কামড়াবার পর থেকে বাবার জন্য আমার দুশ্চিন্তা হতে লাগলো যা এতদিন ছিল না। তাই বাবা যতক্ষণ পর্যন্ত না ফিরে আসতো আমি ঘুমুতে পারতাম না। জেগে থাকতাম, বই পড়তাম। মা বই পড়তো না হয় উঠোনে অন্যান্য বৌঝিদের সঙ্গে গল্প করতো শীতল পাটি বিছিয়ে। প্রতি ঘরে ঘরে সুর ধরে উচ্চকন্ঠে বই পড়ার রীতি ছিল তখন। ভুল পড়লে তাই বড়রা ধমক দিয়ে সঠিকভাবে শিখিয়ে দিতেন। সন্ধ্যারাতে কারো কারো ঘরে রান্না হতো, ডাল রাঁধার সেই সুগন্ধ বাতাসে খেলে বেড়াতো। মা সন্ধ্যেবেলাতেই রান্নাবান্না শেষ করে বাবার জন্য প্রতীক্ষা করতো। সন্ধ্যারাতেই আমি ও ছোটভাই পীযূষ খেয়ে নিতাম। যতই রাত হতে থাকতো ততই অস্থিরতা বাড়তো আমার।

বার বার খালের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ রাখতাম আলো-আঁধারিতে ওপার থেকে বাবা আসছে কিনা। কতবার যে ঘরবার করতাম। মা আমার এই আচরণের কারণ জানতো। কোনো-কোনোদিন মা-ই বলতো, ‘১১টা বেজে গেল এখনো তোর বাবা ফিরে আসছে না!’ আমি মার মুখে এই কথাটি শোনার প্রতীায় থাকতাম, সঙ্গে সঙ্গে সোৎসাহে বলে উঠতাম, ‘একবার বিহারি কলোনীর রাস্তায় গিয়ে দেখবো নাকি মা?’ মা নীরবে একটি হারিকেন জ্বালিয়ে হাতে দিয়ে বলতো, ‘বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। খালের পাড়টা তো অন্ধকার ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেই হবে।’ কোনো-কোনোদিন অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বাবাকে আসতে দেখতাম। সহসা বুকের ভেতর থেকে ভারী একটা কিছু নেমে যেতো, বর্ষার প্রথম জলের মতো খলবলিয়ে উঠতো মনটা। বাবা অবাক কন্ঠে বলতো, ‘তুমি ঘুমোওনি এখনো! কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছো? আমার হাতে তো টর্চবাতি আছে বাবা, ভয়ের কিছু নেই....।’ আমি বাবার হাত ধরে বলতাম, ‘তবুও......।’ বাবাও বুঝতো আমার মনের কথা। তাই এরপর আর কিছু বলতো না।

এভাবে অনেকদিন একটু একটু সাহস করে বাবার অফিস পর্যন্ত পা যুগল সম্প্রসারিত করেছি। বাবা তো আরও অবাক! তাঁর ছোট চোখের কোলে জলের চিকমিক দেখেছি অনুজ্জ্বল ঘোলা বৈদ্যুতিক আলোতেও। বলতো, ‘একা একা আসতে পারলে অত রাতে!’ মনে মনে বলতাম, ‘আসতে পারবো না কেন বাবা, তুমিই তো আমার মনের সাহস।’ বিহারিকলোনী, দোকানপাটের লোকজন সবাই আমাকে চিনতো যে আমি ‘বাবুর ছেলে।’ বাবাকে সঙ্গে করে বাসায় ফিরে আসতাম, ওইটুকু পথ তবুও কতবার যে থামতে হতো তাঁকে! দীনহীন, হতদরিদ্র লোকজন অধিকাংশ বলে এর এই সমস্যা ওর ওই সমস্যা; ছেলেটা এই করছে সেই করছে, একটা চাকরি, বাবু কিছু কি হবে? আবদারের পর আবদার! বাবা পকেট থেকে যতটুকু সাহায্য করার করতো। সমস্যা শুনে সমাধানের আশ্বাস দিত। এসব ছিল নিত্যমৈত্তিক ঘটনা। যারা এখন প্রবীণ তাঁরা এখনো বলেন বাবার সহানভূতির কথা। ছেলেবুড়ো কত মানুষ যে ‘আদাব বাবু’ ‘আদাব বাবু’ ‘আদাব..........’ কপালে হাত উঠিয়ে বাবাকে শ্রদ্ধাভরে সম্ভাষণ জানাতো পথে পথে তাই বার বার তাঁকে দাঁড়াতে হতো। বাবা তাদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করতো, ছেলেমেয়ের খোঁজখবর নিত। বাবা যে একসময় চরম দরিদ্র ছিল এটা কখনো ভুলে যায়নি তাই টাকার গরম বা অহঙ্কার এই পদার্থটি তাঁর মধ্যে সৃষ্টি হয়নি কোনোদিন। সহজ সাধারণ চরিত্রের মানুষ এবং স্লিম, বেতের মতো মসৃণ দীর্ঘদেহী এই পুলিশ অফিসার মানুষটির জন্য গর্বে বুক ভরে যেতো আমার। মাঝেমধ্যে হাটে-বাজারে একসঙ্গে গিয়েও একই সম্মান পেতে দেখেছি মানুষটাকে। ভালো মাছটা, ভালো কাপড়টা, ভালো ফলটা, নতুন বইটা জোর করে ব্যাগে না হয় হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছে, ‘বাবু টাকার দরকার নেই, আপনার আশীর্বাদ থাকলেই হলো, এটা নেন বাবু।’

বাবা টাকা সাধলেও নিতে চাইতো না। রাগত স্বরে ধমক দিয়ে বলতো, ‘এটা অন্যায় মিয়া। টাকা রাখো!’ অতঃপর হেসে ইতস্তত ভঙ্গি করে তারা টাকাটা গ্রহণ করতো। দাঁত দিয়ে জিভ্ ধরে বলতো, ‘বাবু আপনি আছেন বলেই তো এই ব্যবসা করে পেট চালাচ্ছি নইলে ভিক্ষা করতে হতো এই বাজারে! গরীবকে দেখার কেউ নেই বাবু।’ কারো কারো আকুতি,‘ স্যার, আমাদের দিকে একটু নজর রাখবেন স্যার......।’

এই জন্যেই বাবা বাজার-হাট করতে চাইতো না। দোকানপাটে যেতো না। মা যেতো, না হয় অফিসের কোনো কর্মচারীকে পাঠাতো। বাবা বাসা আর অফিস। আমার খুব খারাপ লাগতো। এটা তো এক ধরনের ঘুষ, অন্যায় কাজ! পুলিশ বলেই কি এটা করছেন ওরা? এই প্রশ্নটির উত্তর পেয়েছিলাম একদিন কৃষ্ণদার কাছে। শুনে থ হয়ে গিয়েছিলাম। বাবাকে নতুন করে আবিষ্কার করেছিলাম সেদিন। কীভাবে ব্যাখ্যা করে, কী ধরনের মানুষ বলবো বাবাকে সত্যিই ভেবে পাইনি! সরকারি অফিসার যারা সচিব---আমলা বলে পরিচিত তাঁরা তো আসলে জনগণের চাকর। জনগণের পরিশোধিত করের টাকায় তাঁদের জীবন চলে। এঁরা যে খুব একটা বুদ্ধিমান তাও নয়। এঁরা স্রেফ রাষ্ট্রযন্ত্রের করণিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে এঁরাই রাষ্ট্রের কর্ণধারের মতো আচরণ করেন, মানুষকে সহজেই অবজ্ঞা করেন, দিনের পর দিন কাজের ফাইল আটকিয়ে রাখেন, অবৈধভাবে উৎকোচ গ্রহণ করেন যা সম্পূর্ণভাবেই নিয়ম-নীতি বহির্ভূত, অনুচিত এবং এই ধরনের মানসিকতা হীনমন্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়। রাষ্ট্রের একজন কর্মচারী হিসেবে বাবার মধ্যে কোনোদিন এই ধরনের অনৈতিকতা দেখতে পাইনি। ...চলবে

আলোকচিত্র : এই সেই প্রাচীন কেন্টিন এখনো আছে, নেই শুধু বাবা। বাবা সবসময় যে ছোট্ট পুলিশ ল বইটি পাঠ করতো তার মধ্যে তাঁর হাতে লেখা ইংরেজি মেমো।

(এএস/জুলাই ০৩, ২০১৪)