রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে সালমা আক্তার। পাঠদান করার সময় তার বিদ্যালয়ের পাশের সড়ক দিয়ে ২৫-৩০টি রিকশায় মাইকিং করা হয়। মাইকিংয়ের বিকট শব্দে সালমা ক্লাসের পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। এতে তার মতো উপজেলার দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। উচ্চশব্দে মাইকিং করার কারণে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, উপজেলার চার লক্ষাধিক বাসিন্দার সমস্যা হচ্ছে।

বাংলাদেশের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী নীরব এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা দিনে ৫০ ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল (শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক), আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ এবং মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবেল। শব্দের মাত্রা এর বেশি হলে শব্দদূষণ হয়।

উচ্চমাত্রার শব্দ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দেখা গেছে, রায়পুর শহরে মাইকিং করার সময় শব্দের মাত্রা ৯০-১০০ ডেসিবেলের মধ্যে থাকে অথচ মানুষের জন্য সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ৪৫-৬০ ডেসিবেল। এ বিষয়ে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞরা বলেন, উচ্চমাত্রার শব্দে শ্রবণ ও মস্তিকের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে শ্রবণশক্তি পুরোপুরি নষ্ট হতে পারে। এমনকি মস্তিস্কে সমস্যাও হতে পারে।

রায়পুর উপজেলা শহরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, রায়পুর শহরের ১১টি ক্লিনিক ও তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আসেন। রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এসব চিকিৎসকের আসার কথা জানিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা প্রতিদিন পৌর শহরসহ উপজেলার সর্বত্র মাইকিং করান। মাসের পর মাস সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে এ মাইকিং।

রায়পুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর কাদের বলেন, গত রোববার তাঁর এক ঘণ্টার একটি ক্লাস ছিল। ক্লাস চলাকালীন কমপক্ষে পাঁচটি রিকশা নিয়ে মাইকিং করা হয়েছে। এতে পাঠদান ব্যাহত হয়। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মতো তাঁরাও অতিষ্ঠ। রায়পুর উপজেলা শহরের পোশাক ব্যবসায়ী সালেহ উদ্দিন বলেন, শহরে একটির পর একটি মাইক আসতেই থাকে। এতে তাঁর কান ঝালাপালা হয়ে যায়। মাইকের যন্ত্রণাদায়ক শব্দের কারণে মুঠোফোনে কথা বলাসহ কাজকর্ম করা যায় না।

গতকাল সকাল নয়টার দিকে পৌর শহরের মধ্য বাজারে স্কয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষে মাইকিং করতে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রায়পুর-ফরিদগঞ্জ সড়কের লেংলা বাজার এলাকায় মাতৃছায়া হাসপাতালের পক্ষে মাইকিং করতে দেখা গেছে। দুপুর ১২টার দিকে দেখা গেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রায়পুর মার্চেন্টস একাডেমির পাশ দিয়ে লক্ষ্মীপুরের একটি হাসপাতালের পক্ষে মাইকিং করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাইকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি বলেন, মাইকিংয়ের জন্য ক্লিনিক-মালিকেরা তাঁদের দৈনিক ১ হাজার ৪০০ টাকা করে দেন। সকাল নয়টা থেকে সন্ধা ছয়টা পর্যন্ত মাইকিং করেন তাঁরা।

রায়পুর ক্লিনিক ও প্যাথলজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তুহিন চৌধুরী বলেন, ‘মাইকিং করাতে আমাদের কাছেও খারাপ লাগে। প্রচারের জন্যই তা করা হয়। সমিতির সভায় সীমিতভাবে মাইকিং করানোর মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আবারও সবাই মিলে বসে বিকল্প ব্যবস্থার বা সপ্তাহে এক দিন শহরে মাইকিং করানোর সিদ্ধান্ত নেব।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহারিয়া শায়লা জাহান বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সভায় এ বিষয়টি উত্থাপন করেছি। বিষয়টি আমি সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব।

রায়পুর পৌরসভার মেয়র ইসমাইল খোকন বলেন, এ বিষয়ে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

(পিআর/এসপি/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭)