মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : প্রকৃতিও আজ হাসছে হাজারো পর্যটকের সাথে। মেলে ধরেছে তার সকল সৌন্দর্য। মৃদু বাতাসে সৈকতের নারিকেলকুঞ্জ ও ঝাউবাগানের পত্রমালাও সাগরের ঢেউয়ের সাথে দুলছে। গোটা সৈকতে জোয়ারে ভেসে আসা ছোট ছোট ঝিনুক যেন কার্পেটের মতো বিছিয়ে রয়েছে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে। সাগরের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট পর্যটকবাহী ট্রলার, লঞ্চ ও ডিঙি নৌকা। পুব আকাশকে পেছনে ফেলে সবাই ছুটছে পশ্চিম আকাশ পানে তাকিয়ে সৈকতে। পশ্চিমের আকাশ সিঁদুর রংয়ে রাঙিয়ে একটু পর অস্ত যাবে সূর্য। স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ হাজারো পর্যটক সৈকতের বালুকা বেলায় অপেক্ষা করছে শেষ স্মৃতি ধরে রাখতে। বিদায় জানাতে ২০১৭ সালকে। 

দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের রোববার বিকালের চিত্র এটি। হাজারো পর্যটকের আগমনে গোটা সৈকত জুড়ে উৎসবের আমেজ।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, হোটেল-মোটেলের সুবিধা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় গত এক যুগে এবারই কুয়াকাটায় হাজার হাজার পর্যটক ও দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। কুয়াকাটা সৈকত ছাড়াও কুয়াকাটাগামী আন্ধারমানিক নদীর উপর নিমর্মিত শেখ কামাল সেতু, টিয়াখালী নদীর উপর নির্মিত শেখ জামাল সেতু ও শিববাড়িয়া নদীর উপর নির্মিত শেখ রাসেল সেতুর উপরও ছিল বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে হাজার হাজার মানুষের ভীড়। এছাড়া পায়রা সমুদ্র বন্দর , গঙ্গামতি সৈকত ও কাউয়ার চরে অন্তত অর্ধশত পিকনিক পার্টির কয়েক হাজার পর্যটক নতুন বছরকে স্বাগত এবং পুরাতন বছরকে বিদায় জানাতে সমাগম হয়েছে।

কুয়াকাটার হোটেল কুয়াকাটা ইন ইন্টারন্যাশনাল এ এমডি ওয়াহিদুজ্জামান সোহেল, হোটেল বীচ হেভেন এর ম্যানেজার মো. রঞ্জু জানান, গত এক সপ্তাহ আগ থেকে কুয়াকাটার অধিকাংশ আলীশান হোটেল-মোটেলসহ সরকারি ডাকবাংলো আগাম বুকিং হয়ে গেছে। থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনকে ঘিরে রোববার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পর্যটক সমাগম হয়েছে। এ কারনে সৈকতে ছিলো উৎসবের আমেজ।

কুয়াকাটার ইলিশ পার্ক’র পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, বছরের শেষদিন উদযাপনকে ঘিরে ইলিশ পার্কে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যেগে কুয়াকাটা সৈকতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান রয়েছে আগত পর্যটকদের অংশগ্রহনে।

কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা টাঙ্গাইল কলেজ এর শিক্ষার্থী শাহরিয়ার, তিথি, তমালিকা, আদ্রিয়ান, জিয়ান জানান, তারা ৩৭ জন এসেছেন কুয়াকাটায়। এখানে তারা রাত্রিযাপস সহ ভোরের নতুন বছরের সূর্যোদয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকন করবেন। তাদের মতো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কুয়াকাটায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা কুয়াকাটায় এসেছেন বছরের শেষ সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে।

কলেজ শিক্ষার্থী সায়ন্তিনি. চন্দ্রা, তনময়, উজ্জল, আবির জানায়, তারা দুপুরে কুয়াকাটা এসেছেন । কিন্তু হোটেলে সিট পাননি। তারা জানালেন কুয়াকাটা সৈকতের অপরুপ সৌন্দর্য তাদের মুগ্ধ করেছে। রাতে হোটেলে জায়গা না হলেও আকাশের সাথে মিতালী ও সাগরের ঢেউয়ের আলীঙ্গন তাদের সৈকতে আঁকড়ে রাখবে। এখানে বসেই উপভোগ করবেন নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়। আগামী ভবিষৎ রচনা করবেন এখানে।

কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ও ট্যুরিষ্ট ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, রাতে কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সক্রিয় থাকবেন তারা। সৈকতের জিড়ো পয়েন্টসহ সৈকত জুড়ে থাকবে পুলিশি টহল।

(এমকেআর/এসপি/ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭)