প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে প্রাথমিক পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় হওয়ায় ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদানের বেঁধে দেয়া সময় অতিবাহিত হলেও সঠিক জবাব পাননি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা।

জানা গেছে, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর উপজেলার ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফলাফলে বিপর্যয় ঘটে। ফলে ওই এলাকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ হতাশ হয়ে পড়ে। এবারে পিএসসি পরীক্ষায় বাঘ আছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭জন, কৈলাশকুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫ জনের মধ্যে ৪জন, কালুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩২ জনের মধ্যে ১৬ জন, কিশামত ছিনাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৩ জনের মধ্যে ২২ জন, ছত্রজিৎ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯ জনের মধ্যে ৮ জন, মেখলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩১ জনের মধ্যে ১৯ জন, নাফাডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২ জনের মধ্যে ১০ জন, পোর্দ্দারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬ জনের মধ্যে ৫ জন, হরিশ্বর তালুক শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১১ জনের মধ্যে ৪ জন ও আবুল কাশেম বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৪ জনের মধ্যে ৮ জন পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়।

এসব প্রতিষ্ঠানে ফলাফল বিপর্যয় ঘটলে উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ প্রশাসনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে হতাশ হয়ে পড়েন অভিভাবকরা। গত ৩১জানুয়ারী রাজারহাট উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নোটিশের জবাব আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।

কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নোটিশ হাতে পাওয়ার পর বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার জন্য জোর তদবির চালিয়ে যােেচ্ছন। এদিকে প্রাথমিক শিক্ষার মান আরো উন্নয়ন করার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করেন। কিন্তু এ বছর কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বেশীরভাগ জাতীয়করণকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পিইসি’র পরীক্ষার ফলাফলে বিপর্যয় ঘটে। অর্থাৎ জেলার মধ্যে ফলাফলে নবম স্থান।

অভিভাবকদের অভিযোগ, জাতীয়করণ হওয়ার পর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সঠিক পাঠদান হয় না। সদ্য জাতীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় বিদ্যালয়গুলো তাদের হেয়ালিপনায় চলে। প্রতিষ্ঠানের উপর তাদের তত গুরুত্ব নেই। কিন্তু নোটিশ হাতে পাওয়ার পর বেঁধে দেয়া সময় ৫কর্মদিবস অতিবাহিত হলেও কোন লিখিত সঠিক জবাব দিতে পারেনি ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ। ফলে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা অফিসের মধ্যে রশি টানাটানি চলছে। উভয়ের কঠোর ভূমিকায় যে কোন মুহূর্তে এর প্রতিফলণ ঘটতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জানান, বিষয়টি স্যারের সাথে মিটানোর চেষ্টা চলছে। তবে ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানান, এবারের বন্যায় ১মাস প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। তবে ওই এলাকার অভিভাবকরা জানান, প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল কিছু সময় ঠিক আছে। কিন্তু এর প্রভাব ফলাফলে পরতে পারে না।

৯ জানুয়ারী মঙ্গলবার এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, উপযুক্ত জবাব না পেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(পিএমএস/এসপি/জানুয়ারি ০৯, ২০১৮)