সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা : কালের পরিক্রমায় গরবিনী কেন্দুয়ার ইতিহাসে আরও একটি নতুন নাম যুক্ত হল ‘দৈনিক ধানসিঁড়ি’ নামের একটি পত্রিকা। এক কথায় আমি বলতে চাই সময়ের সিঁড়ি বেয়ে ‘দৈনিক ধানসিঁড়ি’ প্রকাশনা কেন্দুয়ার একটি নতুন সূর্যোদয়।

বহু প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক এবং লোক্জ সংস্কৃতির চারণ ভূমি এই কেন্দুয়া। ব্রিটিশ ভারত আমল থেকেই কেন্দুয়া এক গর্বিত ঐতিহ্যের অধিকারী। কিন্তু মেহনতী, নির্যাতিত, সুবিধা বঞ্চিত এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবী কি? তা জাতির সামনে তুলে ধরতে বিভিন্ন সময়ে অনিয়মিত যে কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ হয়েছে তা মাঝ পথেই আবার যাত্রা থেমে যায়। এই থেমে যাওয়াটা আমি মনেকরি দুটো কারণে হতে পারে। এর মধ্যে একটি হতে পারে অর্থনৈতিক সহায়তার অভাব, অন্যটি সৃজনশীলতায় ধারাবাহিকতার ছন্দপতন।

আমার জানামতে আশির দশকে সৈয়দ নুরুর রহমানের সম্পাদনায় ‘চেতনা’ আমার সম্পাদনায়, ‘নবারুণ’ ‘এইতো সময়’ সাংবাদিক লাভলু পাল চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘ইদানিং কথা’, দুজাহান তালুকদারের সম্পাদনায় ‘মাসিক দরিয়া’, কেন্দুয়া আদর্শ শিশু বিতানের প্রধান শিক্ষক আবু সাদেকের সম্পাদনায় ‘সময়’ এবং এর পরবর্তী ২০০০ সালে আমার সম্পাদনায় ‘দুর্জয়’ নামে অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। সে সময় কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের উদ্যোগে আমার সম্পাদনায় ‘শেকড় সন্ধানে একটি পত্রিকায়’ প্রকাশ হয়েছিল, আশা ছিল এটি নিয়মিত প্রকাশ হবে কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি।

২০০০ সালের পরবর্তী সময়ে তরুন লেখক মাঈন উদ্দিন সরকার রয়েলের সম্পাদনায় ‘মাসিক কেন্দুয়া’ এবং তরুন ছড়াকার জিয়াউর রহমান জীবনের সম্পাদনায় ‘আমাদের কেন্দুয়া’ নামে একটি অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ হয়ে খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। দিক চক্রবাল বর্ণচ্ছটা রাতের কালো আধাঁর ভেদ করে নতুন সূর্যের মুখ দেখলেও সকালেই ঝড়ে পড়ে যায় সে পত্রিকা গুলো। এই ঝরেপড়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক ও পরিতাপের।

সংবাদপত্র সমাজের দর্পন এবং সাংবাদিকগণ দেশ ও জাতির বিবেক। এটি রাষ্ট্রের চতুর্থতম স্তম্ভও। একটি সংবাদ পত্রের মাধ্যমে একটি দেশের অনেক উন্নয়ন, অনেক দিক নির্দেশনা প্রকাশ পেয়ে থাকে।

সংবাদপত্রটি যদি সার্বজনীন ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে সকল মহলের একটি মুখপাত্র হিসেবে সমাজে খ্যাতি অর্জন করে। আর যদি সংবাদ পত্রের নীতিমালা অনুসরণ না করে মনগড়াভাবে সংবাদ প্রকাশ হয়, তাহলে সংবাদ পত্রের নীতিমালা লংঘিত হয় বলেই মনে করি।

কেন্দুয়া পৌরশহরে কুন্ডুলী গ্রামের তরুণ সাংবাদিক এ.এইচ. রনি কে. রুহির সম্পাদনায় এবং তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কবি জীবনানন্দ দাসের ‘আবার আসিব ফিরে, ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে’ ইত্যাদি কবিতার ছন্দের অবলম্বনে ‘দৈনিক ধানসিঁড়ি’ নামক পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। যা এক কথায় আবারও বলতে চাই ‘দৈনিক ধানসিঁড়ি’ কেন্দুয়ার নতুন সূর্যোদয়।

এই সূর্য কিরণ যাতে সবখানে পরে এবং এই সূর্য কিরণকে যাতে কোন কুয়াশা বা কালো মেঘ আচ্ছন্ন করতে না পারে সেজন্য আমার প্রাণপ্রিয় কেন্দুয়া মায়ের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে বিনয়ের সঙ্গে দাবী রাখব, একটি ছোট শিশুকে প্রতিটি মানুষ যেভাবে অসম্প্রদায়িক চেতনায় আদর করে, যত্ন করে, সেভাবেই ‘দৈনিক ধানসিঁড়ি’ পত্রিকাটিকে আদর যত্ন করে বাঁচা বাড়ার সংগ্রামে আগামীর পথ চলতে আরও সাহসী করে তুলবেন।

পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের প্রতি আমার দাবি থাকবে, কারো লেজুরবৃত্তি না করে কারও বিরুদ্ধে প্রতিহিংস্যা পরায়ন না হয়ে, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাওয়া কেন্দুয়ার সাহিত্য ও লোকজ সংস্কৃতির খবর নিয়মিত নিখূঁত ভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে কোন কার্পন্যতা করবেন না। সেই সঙ্গে আশা করি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে ‘দৈনিক ধানসিঁড়ি পত্রিকা’ নতুন প্রজন্মের নতুন নুতন সাংবাদিক ও লেখক তৈরি করে অতীতের সব দাবি পূরণ করে এগিয়ে যাবে দূর থেকে বহুদূর।

লেখক : দৈনিক সমকাল, কেন্দুয়া প্রতিনিধি, সভাপতি কেন্দুয়া উপজেলা প্রেসক্লাব, কেন্দুয়া, নেত্রকোণা।