স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে সম্পদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদে দেয়া বক্তব্য ‘মিথ্যাচার’ ও এক ধরনের ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলে দাবি করেছে বিএনপি। গতকাল (বুধবার) সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি করেন।

তিনি বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) সংসদে প্রধানমন্ত্রী যে সম্পদের কথা বলছেন, যে সম্পদের নাম দেয়া হয়েছে বাস্তবে সেই সম্পদের কোনো অস্তিত্বই নেই। মিথ্যাচার করে গোটা দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী বিভ্রান্ত করেছেন। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন এটা এক ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহিতাও বটে।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অশ্রাব্য, হিতাহিত কাণ্ডজ্ঞানহীন, বিবেচনাহীনভাবে সভ্যতা ও সুরুচির ওপর হিংস্র আগ্রাসন। আমি এহেন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।’

সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘শপথ ভঙের’ সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন উনি (প্রধানমন্ত্রী) সত্য কথা বলবেন, মিথ্যা কথা বলবেন না। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি মিথ্যা কথা বলতে পারেন না, সারা জাতিকে বিভ্রান্ত করতে পারেন না। অথচ সংসদে তিনি মিথ্যাচার করছেন। এখনও বলছি, এ সমস্ত বন্ধ করেন, মিথ্যাচার বন্ধ করেন। জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা বন্ধ করেন। জাতি কখনও বিভ্রান্ত হবে না, হয়নি কোনো দিন।’

সংসদে প্রধানমন্ত্রী ‘অসত্য বক্তব্য’ দেয়ায় মানহানি মামলা হতে পারে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যেন গণতন্ত্রের ওপর বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ। দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রাখা হয়েছে তা শুধু অনভিপ্রেত বা দুঃখজনই নয় বরং এটি রাজনৈতিক পরিবেশ এবং আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় ও সন্দেহের দানা বাধবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার ভীতির কারণেই ক্ষমতাসীনদের মস্তিষ্কের গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সাধারণত এসব কথা বলি না। কিন্তু উনি (প্রধানমন্ত্রী) গতকাল বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যেসব উচ্চারণ করেছেন এটাতে আরেকটা মানহানি মামলা হতে পারে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর প্রতিবাদ করেননি। এটা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যাচার। আমরা এখান (নয়া পল্টন কার্যালয়) থেকে সংবাদ সম্মেলন করেছি। শুধু তাই নয়, আমরা উকিল নোটিস পাঠিয়েছি, তার জবাব তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এখনও দেননি। এটা প্রমাণিত যে, তিনি ওই উকিল নোটিসের জবাব না দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন তার বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। মিথ্যাচার করেছেন জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘আজকে যে রাজনৈতিক সঙ্কট, দেশে যে দুরাবস্থা -এ দিনটির সূচনা হয়েছিল গণতন্ত্রকে হত্যা করে বেআইনি ও অসাংবিধানিক ফখরুউদ্দিন (ফখরুউদ্দিন আহমেদ) সরকার। সেই সরকার সম্পূর্ণ পরিকল্পিভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার নীল নকশা করে ২০০৮ সালে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে আজকের এ অবৈধ ও অনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা এ দিনকে ঘৃণা ও ধিক্কারের সঙ্গে স্মরণ করছি।’

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন, নাজিমউদ্দিন আলম, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন, রফিক শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১১, ২০১৮)