মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে আরো গবেষণার তাগিদ দিলেন রাষ্ট্রপতি
স্টাফ রিপোর্টার : স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বারবার একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে লেখক, গবেষক, সাংবাদিকদের আরো বেশি গবেষণা করার তাগিদ দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনের দরবার হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘১৯৭১: রেজিসটেন্স, রেজিলেন্স অ্যান্ড রিডেম্পশন’ (‘1971: Resistance, Resilience and Redemption’) শীর্ষক বইটি লেখেন রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. সরোয়ার হোসেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে তা নিশ্চিত করা আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র সুযোগ পেলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করতে উঠেপড়ে লাগে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অতীতেও এ চক্রটি আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বারবার বদলানোর অপচেষ্টা করেছে। সাময়িকভাবে এ চেষ্টা সফল হলেও চূড়ান্তভাবে তারা পরাস্ত হয়।’
অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেন, ‘ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতে চলে। কেউ তা বদলাতে পারে না। বরং যারা এ অপচেষ্টা করে তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।’
‘১৯৭১: রেজিসটেন্স, রেজিলেন্স অ্যান্ড রিডেম্পশন’ বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকর্ম বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘বইটিতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার অনেক উপকরণ রয়েছে। আমি আশা করব আমাদের প্রাজ্ঞ লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সিক্ত আগ্রহীগণ মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে গবেষণা চালাবেন। এতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে, নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ করতে পারবে। আর তাহলেই দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।’
বইটির লেখক জেনারেল সরোয়ারের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জেনারেল সরোয়ার মুক্তিযুদ্ধের সময় সাত বছরের বালক এবং পিতার কর্মস্থলসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচির মৌরিপুর এয়ার বেসের বাসিন্দা ছিলেন। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ না করে এবং না দেখেও মুক্তিযুদ্ধের ওপর এত বিশাল গবেষণাকর্ম সম্পাদন নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয়, সহসী ও চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ। এ জন্য আমি জেনারেল সরোয়ারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
ভবিষ্যতেও জেনারেল সরোয়ার তার গবেষণাকর্ম অব্যাহত রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাকে (সরোয়ার) অনুসরণ করে অন্য বিদগ্ধজনরাও মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হবেন।’
রাষ্ট্রপতি তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তিও চেয়েছিলেন, কিন্তু তার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় দেশ উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এবং বইটির লেখক মেজর জেনারেল মো. সরোয়ার হোসেন।
(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১১, ২০১৮)