স্টাফ রিপোর্টার : অনেক নাটক আর বিতর্কের পর দেশের সরকারি আট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ‘সিনিয়র অফিসার’ পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ শুক্রবার। কিন্তু আলোচিত এই পরীক্ষার বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। পরীক্ষা অনুষ্ঠানে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেছেন পরীক্ষার্থীরা। কেন্দ্রে আসন বিন্যাস না করা, প্রশ্নপত্র সময়মতো না পাওয়া, এক বেঞ্চে দুজনের জায়গায় পাঁচজন বসানোসহ নানা অব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রে বিক্ষোভ-ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

পরীক্ষা নিয়ে রীতিমতো প্রহসন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পরীক্ষার্থীদের। হেমায়েত উদ্দিন নামের এক পরীক্ষার্থী জানান, কেন্দ্রগুলোতে আসন বিন্যাস নেই। যে যার মতো বসেছে। বসতে না পেরে অনেক জায়গায় মারামারি হয়েছে। পরীক্ষার নির্ধারিত সময় ছিল সাড়ে তিনটা, কিন্তু কোথাও কোথাও পৌনে চারটাতেও পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্ন যায়নি। মোবাইল ফোন নিয়ে অনেকে পরীক্ষার হলে গেছেন। যে যার মতো ছ‌বি তুলে‌ছেন। আসন না পেয়ে অনেকে বিক্ষোভ করেছেন।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এক হাজার ৬৬৩টি শূন্য পদের বিপরীতে বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত পরীক্ষা হয়।

রাজধানীর মিরপুরের হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেননি। তারা সবাই কলেজের মাঠে অবস্থান করেন।

পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাত্র ৪০-৫০ জনের রুমে ১০০-১৫০ জনের বসার ব্যবস্থা করা হয়। তারপরও সবার জন্য আসন দিতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা কলেজের জানালা-দরজা ভাঙচুর করেন।

কেন এমন অব্যবস্থাপনা জানতে চাইলে কেন্দ্রটির অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ৪০ শতাংশ অনুপস্থিত ধরে আসনের ব্যবস্থা করতে। আমরা সেভাবেই করেছি। কিন্তু উপস্থিতি বেশি হওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরীক্ষা পরিদর্শনে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক বলেন, ‘কখনো দেখিনি ৪০ শতাংশ অনুপস্থিত ধরে আসনের ব্যবস্থা করা হয়। আমরা কয়েক দিন আগে ওই কলেজের অধ্যক্ষের কাছে আসন ব্যবস্থার কথা জানতে চাইলে তিনি এ কথাটাই বলেছিলেন। তখন আমরা নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি উল্টো আমাদের ওপর খেপে যান। আজ এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী এই কলেজের অধ্যক্ষ।’

গত বছর দেওয়া ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষাসহ পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা না করতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের দেওয়া এই আদেশ শর্তসাপেক্ষে ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন চেম্বার বিচারপতি। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন স্থগিতের আদেশ দেয়ায় আট ব্যাংকের পরীক্ষা হয় আজ।

সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে ৫২৭টি, জনতা ব্যাংক লিমিটেডে ১৬১টি, রূপালী ব্যাংক লিমিটেডে ২৮৩ টি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডে ৩৯টি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ৩৫১টি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ২৩১টি, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনে ১টি ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি) ৭০টি পদসহ মোট ১৬৬৩ পদের নিয়োগ পরীক্ষা হয়।

গত রবিবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, কর্মকর্তা ও কর্মকর্তাসহ (ক্যাশ) বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষাসহ যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ না করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

গত বছর দেওয়া পৃথক বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

এর আগে ২০১৬ সালের পৃথক বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে তিনটি ব্যাংকে বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করা ২৮ প্রার্থী গত বছরের শেষ দিকে ওই রিটটি করেন।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১২, ২০১৮)