সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী মোড়লের ছেলে নুরল মোড়লকে আটকের তিনদিন পর দেবহাটার আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন রতন হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর মধ্যবর্তী সময়কার চাঞ্চল্যকর কাহিনী বেরিয়ে এসেছে। শুক্রবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানানো হয়েছে।

শুক্রবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা জেলা কারাফটকে এক সাক্ষাৎকারে নুরুল বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের জানান, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারি পরবর্তী কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে সহিংসতা শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিম্বাসী মানুষদের নিয়ে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন।

এ উদ্যোগে সাড়া দেন ন্থানীয় এক সাংসদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের এক দু’ নেতা, বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কালিগঞ্জ শাখার সভাপতি মোসলেম আলীসহ কয়েজন। ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর মোসলেম আলীকে জামায়াত শিবির মুকুন্দপুর চৌমুহুনীতে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার পর জামায়ত শিবিরকে প্রতিহত করতে তিনি মাঠে নামেন। সারা জেলার মধ্যে কালিগঞ্জেই প্রথম প্রতিহত করা শুরু হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজ সেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াত, শিবির ও বিএনপির লোকজন কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে তাকে পরিকল্পিতভাবে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করতে গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে তার কালিকাপুর ঘের থেকে চোখ বেঁধে তুলে আনে।

পরে তাকে সাত্তার মোড়লের শাওন ফিস এ মারপিট করেন উপপরিদর্শক হেকমত আলী, উপপরিদর্শক ইসরাফিল, উপপরিদর্শক মামুন, সহকারি উপপরিদর্শক জাহিদ, উপপরিদর্শক সুজিত, সিপাহী সোহরাব ও সিপাহী ফিরোজসহ পুলিশের একটি দল। পরে তাকে থানায় নিয়ে এসে অমানুষিক নির্যাতন চালান থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবীর দত্ত ও উপপরিদর্শক হেকমত আলী ।

পুলিশের লাঠির আঘাতে তার দু’ পায়ের হাঁটু, দু’হাত ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। রাতে তাকে খাবার ও গরম কাপড় না দিয়ে ক্রসফায়ারে দেওয়ার জন্য চোঁখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবার ভোর চারটার দিকে তাকে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশে নিয়ে যাওয়ার পর রাখা হয় পুলিশ লাইনে।

বৃহষ্পতিবার বিকেলে তাকে দেবহাটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেন রতন হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। জেলে পাঠানোর আগে ব্যাথার জন্য ঔষধ চাইলেও তাকে দেওয়া হয়নি। করানো হইনি প্রাথমিক চিকিৎসা। কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা আদায় করতে চেয়েছিলেন। তবে সাংবাদিকদের ভূমিকার কারণে তিনি জীবনে বেঁচে গেছেন বলে দাবি করেন।

শতাধিক মানুষের সামনে পুলিশ মঙ্গলবার তাকে গোয়াল ঘেষিয়া নদীর চরের মাছের ঘের থেকে আটক করে পেটালো। তার ছেলে রনিকে ও পেটালো। বড় জিপ গাড়িতে করে থানায় নিয়ে এলো। থানায় নির্যাতনের শব্দ সাংবাদিকরাও শুনেছেন। অথচ বৃহষ্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় তাকে নলতা হাসপাতালের সামনে থেকে গ্রেফতার করেছে বলে যে দাবি করেছে তার কোন প্রমান দিতে পারবে না। পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুললে তাকে বিভিন্ন বিচারাধীন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমাণ্ডে এনে হাত ও পা ছাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে তাকে হুমকি দেন ওসি। তবে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবীর দত্ত ও উপপরিদর্শক হেকমত আলী সাংবাদিকদের কাছে নুরুলকে আটক ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন।

এদিকে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম জানান, বৃহষ্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কালিগঞ্জের নলতা হাসপাতালের সামনে থেকে নুরুলকে আটক করেন বলে জানান। একইসাথে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানানো হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি আদালতে তারসহ চারজনের রিমাণ্ড শুনানী হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন রতন হত্যা চেষ্টা মামলায় পুলিশ আগে থেকে আটক রাখা শিবির নেতা তালা উপজেলার মঙ্গলানন্দকাটি গ্রামের আব্দুল গফুর ও শ্রীমন্তকাটি গ্রামের শিমুল মোড়ল, কালিগঞ্জের বন্দকাটি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান আওয়ামী লীগ কর্মী নুরুল মোড়লকে যেভাবে এ মামলায় সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমাণ্ডের আবেদন জানানো হয়েছে তাতে ন্যয় বিচার বিঘ্নিত হবে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ১২, ২০১৮)