মাঈনুল ইসলাম নাসিম 


বিদেশেতে সন্তান মারা যায় পাড়া পরশী না জানিতে আগে জানে মা। জন্মদাতা মা তো জানবেনই, কিন্তু যে মা-মাটির প্রতি এতো দেশপ্রেম প্রবাসী বাংলাদেশিদের, সেই দেশ কী আদৌ খবর রাখে তার সোনার সন্তানদের? দেশের মাটিতে আদৌ সম্মান পান প্রবাসীরা? মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশমাতৃকার জন্য লড়ে যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধারা মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান পাচ্ছেন এবং এটা অবশ্যই তাদের প্রাপ্য। ভুলে গেলে চলবে না, একাত্তরে অর্জিত ভৌগলিক স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি বিশ্বজুড়ে অকুতোভয় প্রবাসীরাই প্রিয় মাতৃভূমির অর্থনৈতিক মুক্তি সংগ্রামে সবচাইতে নিবেদিত। রেমিটেন্স যোদ্ধা এই দেশপ্রেমিক বাংলাদেশিদের মৃত্যু পরবর্তি কখনোই রাষ্ট্রীয় সম্মান বা মর্যাদা দেয়া হয়নি, যদিও সময় এসেছে আজ দিনবদলের।

অর্থনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা তথা দেশপ্রেমিক প্রবাসী বাংলাদেশীরা যৌক্তিক কারণে অবশ্যই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশে বসবাসরত জনগণ যারা নিজেরা সৎ থেকে বৈধ পথে অর্থ উপার্জন করছেন তাদের অবদানও কম নয় দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে। কি দেশে কি বিদেশে অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধ সবাই করছেন কিন্তু যুদ্ধের ময়দানের ভিন্নতাই রেমিটেন্স যোদ্ধা প্রবাসীদেরকে প্রতি মুহূর্তে প্রতিষ্ঠিত করছে তাদের প্রাপ্য মর্যাদার আসনে। অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধের ময়দান দূর প্রবাসে কতটা অমসৃন কন্টকাকীর্ণ বিপদসংকুল ও প্রতিকুল, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ভেতরে অবস্থান করে তা শুধু অনুমানই করা সম্ভব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শই বলে থাকেন, “প্রবাসের কষ্ট বেদনা আমি বুঝি কেননা প্রবাসী ছিলাম আমি নিজেও, ছিলাম শরণার্থী”। বঙ্গবন্ধু কন্যা যদি সত্যি সত্যিই অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধে সংগ্রামরত প্রবাসী যোদ্ধাদের কষ্ট বেদনা অনুভব করেন, তবে সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি চাইলেই পারেন সোয়া এক কোটি প্রবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হতে। রাষ্ট্রীয় খরচে প্রতিটি প্রবাসীর মরদেহ দেশে নেয়ার বহুদিনের পুরনো দাবী কিন্তু তিনি পূরণ করেছেন। যদিও কিছু কিছু দূতাবাসের নিজস্ব দুর্বলতার পরিণতিতে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রবাসীরা এখনো বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া সুযোগ থেকে, তথাপি রাষ্ট্রীয় খরচে প্রবাসীদের মরদেহ দেশে প্রেরণের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য।

রেমিটেন্স যোদ্ধাদের প্রাপ্য স্বীকৃতির ধারাবাহিকতায় আজ তাই সময় এসেছে তাদের মরদেহকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান জানাবার। বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে যখনই কোন প্রবাসীর মরদেহ পৌঁছবে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সমূহে, তখনই তাদের কফিন ঢেকে দেয়া চাই লাল-সবুজের জাতীয় পতাকায়। দূর প্রবাসের অর্থনৈতিক মুক্তিযোদ্ধাদের কফিন জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত হলেই বরং শান্তি পাবে একাত্তরের বীর শহীদদের আত্মা। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের কফিনে শোভা পেলেই বাড়বে আমাদের জাতীয় পতাকায় মর্যাদা, সার্থক হবে লাল-সবুজের অস্তিত্ব এবং আভিজাত্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সোয়া এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি আপনার সঠিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১৬, ২০১৮)