প্রদীপ কুমার রায়, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) : ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শাখায় অর্ধ শতাধিক গ্রাহক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এক কর্মকর্তা ওই গ্রাহকদের হিসাব থেকে কুটকৌশলে টাকা উত্তোলন, ভুয়া ঋণ দেখিয়ে টাকা আত্মসাত ও গ্রাহকদের জমাদান করা টাকা হিসাবে না দেখিয়ে বিপুল টাকা নিজের পকেট ভারী করেছেন। এরমধ্যে হতাশাগ্রস্ত হয়ে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আবু মহসিন টেলু দেওয়ানজি মৃত্যুবরণ করেছেন।

পরিবারের অভিযোগ ব্যাংক প্রতারণার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়েও সুফল না পাওয়ায় এবং দফায় দফায় দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

অভিযুক্ত ব্যাংকটির এসবিআইএস সুপাভাইজার নুর মোহাম্মদকে ৭ সেপ্টেম্বর দুদক গ্রেফতার করেছে। তখন ১৮৬ জন গ্রাহকের নামে ভুয়া বিনিয়োগ ঋণ ও গ্রাহকের ৮ কোটি ৯৭ লাখ ১ হাজার ২১৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। তিনি বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৬ জানুযারি) দুপুরে রায়পুর প্রধান সড়কের একটি চাউলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা পরবর্তী করণীয় নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে সাংবাদিকদের জানানো হয় নুর মোহাম্মদ গত ৭/৮ বছর ধরে এ ব্যাংকে দায়িত্ব পালন করেছেন। গ্রাহকদের সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ১৮৬ টি ভুয়া বিনিয়োগ ঋণ তৈরি করে টাকা আত্মসাত করেন। সিসি ঋণের গ্রাহকরা তাদের হিসাবে টাকা জমা করলেও শুধুমাত্র জমা ভাউচারে স্বাক্ষর ও সীল দিয়ে রাখা হলেও তা হিসাবে জমা করা হয়নি। ঋণ নবায়নের কথা বলে গ্রাহকদের নিকট থেকে অলিখিত চেকে স্বাক্ষর করিয়ে রেখে পরে ওই চেক ব্যবহার করে নিজের ইচ্ছামতো টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন নুর মোহাম্মদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়পুর শহরের হাজী আলী আকবর সুপার মার্কেটের দেওয়ানজী বস্ত্র বিতানের আবু মহসিন টেলু দেওয়ানজির (সিএ-৮৭৯) ৪৬ লাখ টাকা, হায়দরগঞ্জের মো. মাইনুদ্দিনের সিয়াম এন্টারপ্রাইজের (সিএ-৭২১) ৩৬ লাখ, বোরহান উদ্দিনের আল আমিন এন্টারপ্রাইজের (সিএ-৩৫৮) ৩৭ লাখ, বাসাবাসি বাজারের ভুলু পাটওয়ারীর অভি ট্রেডার্সের (সিএ-৯৮৯) ১৯ লাখ ৫০ হাজার, নুর এন্টার প্রাইজের নামে ১৩ লাখ টাকা, বিল্লাল হোসেনের বিল্লাল স্টোরের ১৭ লাখ, আব্দুল মান্নানের মান্নান ট্রেডার্সের ৫৯ লাখ ৩৯ হাজারসহ ৫৭ জন গ্রাহকের টাকা প্রতারণার মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। এসব গ্রাহকদের হিসাব নম্বরগুলো প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত হলেও গ্রাহকরা কেউ অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

কাউছার মাহমুদ বলেন, আমাদের ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাত করলো ব্যাংক কর্মকর্তা আর হতাশাগ্রস্ত হয়ে আমার বাবাকে অকালেই চলে যেতে হয়েছে। প্রতারণার বিষয়টি উর্ধ্বত্বন কর্মকতাদের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো ফল না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় থাকতেন। প্রতারণার বিচারের পাশাপাশি আমরা এ হতাশা ও হয়রানি থেকে মুক্তি চাই। ভবিষ্যতে যেনো কেউ ব্যাংকে গিয়ে এভাবে প্রতারিত না হয়।

ইসলামী ব্যাংকের রায়পুর শাখার ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুল হাসান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমরা আমাদের অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। তদন্তের ফলাফল পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে গ্রাহকদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে না। আমরাও চাই তারা প্রতিকার ও তাদের টাকা-পয়সা ফেরত পাক। টেলু দেওয়ানজী মৃত্যুর বিষয়টি কেউ তাকে জানায়নি বলেও জানান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বাদী হয়ে রায়পুর থানায় মামলা করেছেন। আসামি নুর মোহাম্মদকে জেলা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।

(পিকেআর/এসপি/জানুয়ারি ১৭, ২০১৮)