পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি : বরগুনার পাথরঘাটা পৌরমেয়র ও তার লোকজন কার্তিক শীলের বাড়িতে সন্ত্রাসী তান্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার সময় ওই হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা করে পৌরমেয়র নিজে এবং তার লোকজন। 

হামলার সময় মারধর করে মারাত্মক আহত ছাড়াও পরিবারটির ঘরবাড়ি ভেঙ্গে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার ঘটনায় ওই পরিবারের নারীসহ ৭ জন গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদেরকে পাথরঘাটা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন, রাধারানী (৮৫) কার্তিক চন্দ্র শীল (৫৫)বিভা রানী(৪৫) বিমল শীল (৫২) শ্যামলী রানী (৪৫) সীমারানী (২০) ও মায়ারানী (৫০)।

বুধবার বেলা দেড়টার দিকে পাথরঘাটা পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড বড়ইতলা গ্রামে কার্তিক চন্দ্র শীলের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে। রাতে হামলাকারিদের আটক করতে থানার পুলিশ শহরের কয়েক জায়গায় অভিযান চালিয়েছেন। পাথরঘাটা থানার ওসি মোল্লা মোঃ খবীর আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

পাথরঘাটা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন আকনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে নির্যাতিত পরিবারটি।

নির্যাতিত কার্তিক চন্দ্র শীল জানিয়েছেন, দীর্ঘ ১০বছর ধরে তার প্রতিবেশী এনায়েত হোসেনের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হলে ৩টি মামলার-ই রায় পান কার্তিক শীল পরিবার। বুধবার দুপুরে বিরোধীয় ওই জমির ওপরে পুরাতন ঘর মেরামত করার সময় প্রতিপক্ষ এনায়েত হোসেনের লোকজন তাতে বাধা প্রদান করে বলে কার্তিক সংবাদ সন্মেলনে জানান।

বাধা উপেক্ষা করে ঘর মেরামত করতে গেলে বিষয়টি পৌরসভার মেয়রকে জানানো হয়। এ সময় মেয়র তার অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে কার্তিক শীলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘর ভেঙ্গে দেয়। ঘর ভাঙ্গার সময় স্থানীয় দু’জন সংসদ সদস্যর নামে দোহাই দিলেও মেয়র তা মানেননি বলে কার্তিক জানান। ঘটনার সময় ওই পরিবারের লোকজনদেরকে মারধর করেন পৌরমেয়র ও তার পারিষদের লোকজন।

কার্তিক শীল জানিয়েছেন, সাত মাস আগে এনায়েত হোসেন মারা যাওয়ার পর পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন এনায়েতের স্ত্রী ফারজানা বেগম (৩২) কে পাথরঘাটা আদার্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা পদে চাকরিতে সহযোগিতা করে। সেই সুবাদে মেয়রের সাথে ফারজানার সম্পকের্র উন্নতি ঘটে। ওই সুত্র ধরেই মেয়র আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে নিজেই রড দিয়ে আমাদেরকে পিটিয়েছেন।

হামলাকারীদের মধ্যে মেয়রসহ প্রতিবেশী এনায়েতের ভাগ্নে ছুটিতে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম তার ভাই মোঃ খোকন, পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক বিপ্লব রায়, পৌরসভার নৈশ প্রহরী বাদল ও রাখাল শীলের নাম উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, বিমল শীল, শ্যামলী রানী, মিলন চন্দ্র শীল, শীমারানী ও শেফালী রানী।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এই ঘটনার সাথে জরিত দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

ঐক্য পরিষদের সভাপতি অরুন কর্মকার জানিয়েছে, পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করে কাজটি ভাল করেননি। মেয়রের লোকজন আমাদেরকে বাধা প্রদান করায় আমরা আইনের আশ্রয় নিতে পারছি না।

এ বিষয়ে পৌরমেয়র আনোয়ার হোসেন আকন উত্তারাধিকার ৭১ নিউজকে বলেন, ঘটনাটি জেলা পরিষদের সদস্য এম.এ.খালেক এবং আমি সহ ৪ জন সালিশদার বসে মিমাংসা করার কথা ছিল। কিন্তু খালেক সাহেব অসুস্থ থাকায় আমরা বসতে পারিনি যে কারনে গন্ডগোলটি ঘটেছে। আর হিন্দু পরিবাটিকে মারের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।

(এটি/এসপি/জানুয়ারি ১৮, ২০১৮)