স্টাফ রিপোর্টার : পথচারীদের বিড়ম্বনা তবুও ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারদের জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের বারবার অভিযানের পরও ফের দখল হয়ে যাচ্ছে পথচারীদের চলাচললের ফুটপাত। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বারবার দখল হচ্ছে ফুটপাত।

অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, নিজস্ব বাহিনী না থাকা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতা না করায় দখলমুক্ত করার পর আবারও তা অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে।

নানা উদ্যোগের পর এবার বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পুনর্বাসনের জন্য ৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। এ প্রকল্পের মধ্যে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মাধ্যমে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দেয়া, ভ্যানগাড়ি সরবরাহ, ক্ষুদ্র ঋণ, হকারদের বিদেশ পাঠানো, হলিডে মার্কেট চালু, তাদের রেজিস্ট্রেশন ও আইডি কার্ড প্রদান করা হবে।

সে লক্ষ্যে সাম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রকল্পের আওতায় একটি অংশ হিসেবে হকাররা নির্ধারিত স্থানেই থাকবেন। তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে তাদের দেয়া হবে ভ্যানগাড়ি। নির্ধারিত নিয়মের মধ্যেই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। অফিস চলাকালে তারা রাস্তায় বসতে পারবেন না। অফিস টাইম ছাড়া এবং ছুটির দিনে সকাল ও সন্ধ্যায় তারা রাস্তায় বসতে পারবেন। ভ্যানগাড়ি রাখার জন্য আলাদা স্থানও দেয়া হবে। ব্যবসা শেষে নির্দিষ্ট সময় পর তারা ভ্যানগাড়ি চালিয়ে আবার ফিরে যাবেন।

প্রকল্প বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হকারদের পুনর্বাসনের জন্য আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প পাঠিয়েছি। প্রকল্প পাস হলে এর মাধ্যমে হকারদের পুনর্বাসন করা হবে।

ডিএনসিসির এমন প্রকল্প বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হকার্স সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক আবুল হোসেন বলেন, সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে প্রকল্পে যেন কোনো দুর্নীতি না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, পুরো ঢাকা শহরে প্রায় ৩ লাখ হকার আছে যার মধ্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেই প্রায় ২ লাখ, সে কারণে এ ১০ কোটি টাকার প্রকল্প খুবই অল্প।

তিনি হকারদের দোকান পরিচালনা করার জন্য ভ্যান বরাদ্দ বিষয়ে সমালোচনা করে বলেন, ভ্যানে দোকন দেয়া এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটপাত আর সেই ফুটাপাতে যদি ভ্যানে দোকান থাকে তাহলে তো এটা কোনো সমাধান হলো না। আমরা বারবার সিটি কর্পোরেশনের কাছে জানিয়ে এসেছি ফুটপাতে হকারদের জন্য এক তৃতীয়াংশ জায়গা রাখা হোক আর পথচারীদের জন্য দুই তৃতীয়াংশ চলাচলের জন্য জায়গা রাখা হোক।

হকারদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বারবার আবেদন জানিয়ে আসছি হকারদের জন্য বহুতল হকার মার্কেট করার। সেখানে কোনো দোকান বরাদ্দ নয় বরং ফুটপাতে যেভাবে বসে সেভাবেই হকার মার্কেটে বসানো হোক। কারণ একজন হকার মার্কেটে পুরো দোকান নেয়ার সামর্থ রাখে না।

এর আগেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হকার উচ্ছেদ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ, অভিযান পরিচালনা করার পাশাপাশি ফুটপাতকে হকারমুক্ত রাখতে ডিএসসিসি স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগও দিয়েছিল। বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও কার্যকর তেমন একটা ফলফল পাইনি ডিএসসিসি।

এছাড়া উচ্ছেদ হওয়ার পরও বারবার ফুটপাত দখল করেছে হকাররা। যদিও উচ্ছেদের তীব্র বিরোধিতার পর হকাররা নিজেদের স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দফায় দফায় সভা সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ২০, ২০১৮)