শরীয়তপুর প্রতিনিধি : মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এক মুক্তিযোদ্ধাকে অশ্লীল ভাষায় বকাঝকা করা ও হুমকি প্রদান করার প্রতিবাদ জানিয়ে সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হকের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে জাজিরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

সম্প্রতি শরীয়তপুরের জাজিরায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আলী হোসেন খান নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম মোজাম্মেল হক অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালাগালি করেন। এক পর্যায় তিনি ওই মুক্তিযোদ্ধাকে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করেন। ফলে ওই মুক্তিযোদ্ধা এখন সাংসদের ভয়ে পরিবার-পরিজন ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এর প্রতিবাদে শরীয়তপুরের মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের আয়োজনে বিক্ষোভ, মানববন্ধন কর্মসূচী ও স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।

বুধবার এমপির নিজ এলাকা জাজিরা উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল জলিল হাওলাদার, যুদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুর রহমান খান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব মুন্সীর নেতৃত্বে সহস্রাধিক লোক কর্মসূচীতে অংশ নেয়।

এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি শরীয়তপুর জেলা সদরে এবং ২২ জানুয়ারি ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একই দাবিতে বিক্ষোভ-মানববন্ধন করেন হাজার হাজার লোক। এছাড়াও দেশের অন্যান্য স্থানে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড অনুরূপ কর্মসূচি পালন করে আসছে।

দেশের গর্বিত সন্তানদের অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করায় শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্যের পদত্যাগ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করা হয়। পরে তারা বিক্ষোভ করে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেলা রহমাতুল্লাহ এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, জাজিরা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই রজনীগন্ধা ফুলে সটীক দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধিত করেন মোজাম্মেল হক। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন খানের কাছে ফুল নিয়ে গেলে তিনি সাংসদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'আপনি রাজাকার লালন করেন, আপনি রাজাকারের সন্তানকে মূলনা ইউপি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি আপনার হাত থেকে এই ফুল নিতে পারিনা'। সাংসদকে মুখের উপর এমন কথা বলে দেয়ায় তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন মোজাম্মেল হক। তিনি মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেনকে উত্তেজিত হয়ে বলেন, 'আপনি বাজে কথা কথা বলবেননা, ফালতু কথা বলেন কেন ? আপনি কি সার্টিফিকেট দেন নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের ? আপনার থেকে আমার বয়সটা কি কম নাকি ? রাখেন, ফালতু কথা বলেন। আর কোনদিন বলবেন না কিন্তু, বেয়াদ্দপ। খবরদার আর কোনদিন বলবেনা, তাইলে খুব-খুব ক্ষতি হয়ে যাবে আপনার। বালের মুক্তিযোদ্ধা হইছো তুমি, বেয়াদ্দপ। আর একদিন যদি শুনি একটা বাজে কথা, তাইলে কিন্তু খবর আছে। আমি তোমার সম্পর্কে জানি কিন্তু, তুমি খুব বাজে বাজে কথা বলো, খবরদার আর একদিন কিছু শুনি যদি...' ।

মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধিত করার সময়ে এভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ভৎসনা করায় হতবিহবল হয়ে পরেন শত শত মুক্তিযোদ্ধা। পরে এর ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী ফুঁসে উঠেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা।

(কেএনআই/অ/জানুয়ারি ২৪, ২০১৮)