শরীয়তপুর প্রতিনিধি : সম্পন্ন হলো পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান স্থাপনের কাজ। সকল ষড়যন্ত্র, হতাশার আর অনিশ্চয়তার ধুঁয়াশা ভেদ করে পদ্মা বহুমূখি সেতুটি এখন আরো দৃশ্যমান। ৩০০ মিটার ইস্পাতের কাঠামো এখন কোটি মানুষের চোখের সামনে। রবিবার সকালে ৩৮ ও ৩৯ নং পিলারের উপর বসানো হয়েছে  সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান। প্রস্তুত রয়েছে ৪০ নং পিলারটিও। যে কোন সময় এইটির উপরও বসবে ৩য় স্প্যান।

যতই দিন গড়াচ্ছে ততই যেন একেকটি খুঁটি আকাশের পানে মাথা উঁচু করে তার নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে সফল রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার দৃঢ়তার ফসল কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা অংশে ৩৮ ও ৩৯ নং পিলারের উপর দ্বিতীয় স্প্যানটি (ইস্পাতের তৈরী সুদীর্ঘ কাঠামো) বসানোর পর এখন ৩৯ ও ৪০ নং পিলারের তৃতীয় স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি নেয়া হবে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের প্রকৌশলীগন।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নং নং পিলারের উপর বসেছে দেশের বৃহত্তরএই প্রকল্পের প্রথম স্প্যানটি। জানুয়ারীর মধ্য ভাগ থেকেই কথা হচ্ছিল দ্বিতীয় স্প্যান বসানোর বিষয়ে। ১৯ জানুয়ারী সেতুর মাওয়া সাইটের জেটি থেকে স্প্যানটি উঠানো হয় ১৭০ ফিট উঁচু প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রেনের উপর। ২০ জানুয়ারী বিকেলে স্প্যান বাহী ক্রেনটি যাত্রা শুরু করে ৫ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে জাজিরা পয়েন্টের দিকে।

সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছার আগেই ২২ জানুয়ারী বিকেলে ৩২ নং পিলারের কাছে এসে নাব্যতা সংকটের কারনে আটকে যায় স্প্যানবাহী ক্রেন। এরপর নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে রাতদিন চলে নদী খননের কাজ । ২৭ জানুয়ারী ভোরে স্প্যান বহনকারি ক্রেনটিকে আনা হয় ৩৮ ও ৩৯ নং পিলারের কাছে। সকাল ১০ টা থেকে চলে স্প্যান বসানোর চেষ্টা। টানা ৭ ঘন্টা চেষ্টা করেও সম্পন্ন করা যায়নি স্প্যান বসানো। বরিবার সকাল ৯ টা ১৫ মিনিটে স্প্যানটি উঠানো হয় পিলার দ্বয়ের উপর। এরপর আরো কয়েক ঘন্টা চলে এর কারিগরি কর্মযজ্ঞ।

২০১৪ সালের ২৮ জুন চায়না মেজর ব্রীজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানীর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই শুরু হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের দেশের সর্ব বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প পদ্মা বহুমূখি সেতু নির্মানের কাজ। কংক্রিট ও ইস্পাতের তৈরী দ্বিতল বিশিষ্ট এ সেতুতে মোট পিলার বা খুঁটি থাকবে ৪২টি। এক পিলার থেকে আরেক পিলারের দুরত্ব ১৫০ মিটার। মোট স্প্যান বসানো হবে ৪১টি। একেকটি স্প্যানের ওজন ৩ হাজার ১ শত ৪০ মেট্রিক টন। পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিলারের নিচে ৬টি করে পাইল বসানো হচ্ছে। এ সেতুতে মোট ২৪০টি পাইল বসানো হবে। এ পাইল গুলো ৯৬ মিটার থেকে ১২৮ মিটার মাটির গভীরে বসানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত শতাধিক পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতল বিশিষ্ট এই সেতুর নিচ দিয়ে চলবে রেল গাড়ি আর উপর দিয়ে যাতায়াত করবে যান ও পন্যবাহি পরিবহন। পানির স্তর থেকে ৬০ ফিট উঁচু হবে মূল সেতু। সেতুর প্রস্থ্য হবে ৭২ ফিট বা ৪ লেন। চার হাজারেরও বেশী দেশী বিদেশী জনবল দিন-রাত করে সেতু নির্মানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সেতু নির্মানের প্রায় ৫৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ।

দ্রুততার সাথে সেতু নির্মানের অগ্রগতি দেখে আনন্দ আর গর্বের যেন শেষ নেই জাজিরা প্রান্তের নাওডুবা এলাকার সেই সব ক্ষতিগ্রস্তদের, যারা তাদের চৌদ্দ পুরুষের ভিটেমাটি সমর্পণ করেছেন স্বপ্নের এই সেতু সোপানে। একদিন দেশে ও বিদেশে থাকা কোটি মানুষের মত হতাশা ছিল তাদেরও। কিন্তু, স্বদম্ভে উঁচু শীড়ে দাঁড়ানো একের পর এক পিলার আর তার ওপরে ইস্পাতের কাঠামো বসতে দেখে পেছনের সব কিছুই যেন ভুলে গেলেন অশ্রুসজল চোখে আনন্দানুভূতি ব্যক্ত করা অশতিপর বৃদ্ধ খবির উদ্দিন ঢালী, যুবক ইদ্রিস আলী হাওলাতার, শহিদুল্লাহ মাদবরসহ অনেকে। প্রতি দিনই সেতুর অগ্রগতি দেখতে ভীড় করছে শত শত মানুষ। তাদেরও যেন আনন্দের শেষ নেই স্বপ বাস্তবায়নের সোনালী আভা দেখে। সেতুর অগ্রগতিতে উচ্ছসিত মাদারীপুরের হাসান আলী মৃধা, ফরিদপুরের ভাঙগা থানার শাহাদাদ হোসেন ও শিবচরের আব্দুল হান্নান।

(কেএনআই/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০১৮)