কক্সবাজার প্রতিনিধি : চলমান রোহিঙ্গা সংকটকে মানবতার চরম বিপর্যয় উল্লেখ করে সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরসে বলেছেন, রোহিঙ্গারাও মানুষ। এ হিসেবে সম্মানজনক জীবন যাপিত করা তাদের অধিকার। নিজ দেশের সরকারি বাহিনীর নির্যাতনে এভাবে তাদের বাস্তুচ্যুতি বর্তমান সভ্য সমাজে কাম্য নয়। সংকটের সঙ্গে বাংলাদেশের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রশ্ন জড়িত। মানবতা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বরাবরের মতো বাংলাদেশের পাশে থাকবে সুইজারল্যান্ড।

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরসে এসব কথা বলেছেন। নিজ দেশ মিয়ানমারে পাশবিকতার শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পৌঁছান। এর আগে বেলা ১১টার দিকে সুইস এয়ারফোর্সের বিশেষ বিমানে কক্সবাজার বিমান বন্দরে অবতরণ করেন তিনি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন সংকটের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের কুতপালংসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। এ সংকট শুরুর পর থেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের পাশে দাঁড়ায় সুইজারল্যাল্ড সরকার। তাদের অবস্থা সরেজমিন দেখতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসেন বাংলাদেশে সফররত সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরসে কুতপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লক ঘুরে দেখেন। ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের কাহিনী শুনেন তিনি। সুইস রাষ্ট্রপ্রধান কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৪ ব্লকের চিকিৎসা কার্যক্রম এবং ডি-৫ ব্লকের ত্রাণ কার্যক্রম পরিদর্শন ছাড়া সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর এনজিও চালিত নানা হাসপাতাল পরিদর্শন করেন সুইচ প্রেসিডেন্ট। এরপর কথা বলেন স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে।

সুইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইওএম ও ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

এদিকে, সুইস প্রেসিডেন্টের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকে ফিরে মেরিন ড্র্রাইভ কোটবাজার মরিচ্যাসহ পুরো উখিয়া জুড়ে অঘোষিত হরতাল চলেছে। নিরাপত্তার কারণে কোনো প্রকার যানবাহন এসব এলাকায় চলাচল করতে দেয়নি প্রশাসন। বন্ধ থাকে দোকানপাটও। একই অবস্থা ছিল কক্সবাজার শহরেও। মঙ্গলবার ভোর থেকেই এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে স্থানীয়রা।

উল্লেখ্য, চারদিনের সফরে সোমবার বাংলাদেশ এসেছেন সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে এক বৈঠকে-রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের মানবিক আচরণের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সফররত সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৮)