বাকৃবি প্রতিনিধি : শুকনা বোরো ধান চাষ পদ্ধতিকে কৃষকের মাঝে বিস্তার ঘটাতে পারলে পানির অপচয় রোধ ও অর্থনৈতিক সাশ্রয় হবে। এই প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারলে ফলন বাড়বে, কৃষক এবং দেশ উপকৃত হবে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদীয় সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ বিষয়ক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

সেমিনারে কৃষিতত্ব বিভাগের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আবদুস সালামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান।

এসময় শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ বিষয়ে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা ও উত্তোরণের উপায় নিয়ে সেমিনারে উপস্থিত সকলের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়।

জানা যায়, দেশে প্রচলিত কাঁদা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষে প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় ৩-৫ হাজার লিটার পানি খরচ হয়। নতুন কোনো জাতের উদ্ভাবন ছাড়াই বোরো ধান চাষে পানি সেচের পরিমাণ অর্ধেক দিয়ে ফলন বাড়ানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান ও তার গবেষক দল।

অধ্যাপক ড. মো. মশিউরের উদ্ভাবিত ‘শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ’ প্রযুক্তিতে জমিতে পানি সেচের পরিমাণ কমানোর ফলে প্রচলিত কাঁদা পদ্ধতির তুলনায় ধানের ফলন বেশি হয়। এতে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক লাভবান হবেন কৃষক।

ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, প্রচলিত কাঁদা পদ্ধতিতে বোরো ধানের জমিতে যে পরিমাণ সেচ দিতে হয় তার অর্ধেক সেচ দিয়েই ফসল ফলানো যাবে। এ প্রযুক্তিতে সামান্য অংকুরিত বীজ জো (জমির অনুকূল আর্দ্রতা) অবস্থায় জমিতে সরাসরি লাইনে লাগাতে হবে। তবে বীজ বপন করতে হবে ফেব্রুয়ারির ১ম সপ্তাহে।

এ পদ্ধতির অন্যন্য উপকারি দিক সম্পর্কে তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি খুব সামান্য উত্তোলন করতে হয় বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের খরচ কম হয়। জমিতে পানির পরিমাণ কম থাকায় কাঁদা পদ্ধতির তুলনায় এ পদ্ধতিতে গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কম হয়। এ পদ্ধতিতে ধানের জীবনকাল ১৫ দিন কমে যায়। এতে আমন ধান কাটার পর সরিষা, আলু বা অন্যান্য রবি শস্য চাষের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। ফলে কৃষক একটি বাড়তি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।

এ পদ্ধতি সম্পর্কে ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ বর্তমানে একটি লাভজনক ও সময়োপযোগী প্রযুক্তি। এ পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ করলে যেমন লাভবান হবেন কৃষক, তেমনি লাভবান হবে সরকার ও দেশ।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৮)