হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : ছোট বোনকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনার জের ধরে বাহুবল উপজেলার খোজারগাঁও গ্রামে ১২ বছর বয়সী স্কুলছাত্র হাবিব মিয়াকে খুন করেছে টিনএজ বালক শামীম মিয়া। আজ বাহুবল থানায় প্রেস ব্রিফিংকালে সে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। এর আগে গতকাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে শামীম।

স্বীকারোক্তিতে শামীম মিয়া (১৮) জানায়, তার ছোট বোনকে হাবিব মিয়া উত্ত্যক্ত করতো। এ বিষয়টি তার পরিবারকে জানালেও তারা এ ব্যাপারে হাবিব মিয়াকে কোন ধরণের শাসন করেননি। এতে অতিষ্ঠ হয়ে শামীম মিয়া তার সহপাঠিদের নিয়ে হাবিব মিয়ার লিঙ্গ কেটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে হত্যা করে।

শনিবার বিকেলে বানিয়াগাঁও মাদ্রাসায় তাফসির মাহফিলে যোগ দিতে বাড়ি থেকে বের হয় ওই গ্রামের আব্দুল হান্নানের পুত্র স্থানীয় বিহারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্র হাবিব। রাতে সে আর বাড়ি ফেরেনি। বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে খোঁজ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে রবিবার বানিয়াগাঁও এলাকার একটি জমিতে তার লিঙ্গ কাটা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে তার পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে সনাক্ত করে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

শিশু হাবিবের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনকে দায়িত্ব দেন। নাজিম উদ্দিন এর রহস্য উদঘাটনে বাহুবল থানা পুলিশকে নিয়ে মাঠে নামেন। খুনের রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ নিহত হাবিব মিয়ার সহপাঠী একই গ্রামের তিন কিশোরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ খুনের রহস্য অনেকটা বুঝতে পারে। পরে সন্দেহভাজন হিসেবে একই গ্রামের আমির আলীর ছেলে শামীম মিয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে শামীম খুনের সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে।

গতকাল সোমবার রাতে শামীম মিয়াকে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করলে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে সে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেয়।

শামীম জানায়, নিহত স্কুলছাত্র হাবিব তুচ্ছ কারণে তার বোনকে থাপ্পর মারে। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ব্লেড দিয়ে হাবিবের লিঙ্গ কেটে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ হত্যার সাথে আরো কয়েকজন জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তাদের নাম প্রকাশ করছে না। তবে সূত্র জানায়, নিহত হাবিবের লাশ উদ্ধার করা হলেও তার কেটে ফেলা পুরুষাঙ্গ খোঁজে পায়নি পুলিশ।

এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার বাহুবল থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এতে হাবিব হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেয় ঘাতক শামীম।

সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জানান, হাবিবকে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে ঘাতক শামীম। এ ঘটনায় হাবিবের পিতা ৩ জনকে আসামী করে বাহুবল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। প্রেস ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন থানার ওসি মাসুক আলী, তদন্তকারী কর্মকর্তা মরম আলীসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

(এমইউএ/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮)