সমরেন্দ্র বিশ্ব শর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) : নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা সদরে ১শ ৮৫ বছরের প্রাচীনতম বিদ্যাপিঠ কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়টিতে বছরের ৮ মাসই পরীক্ষা কেন্দ্রের ভ্যানু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে গড়ে ২ মাসও ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণ করতে না পেরে তাদের লেখাপড়া মারাত্বক ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। 

১৮৩২ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৮৬২ খ্রি: ময়মনসিংহ জেলার তৎকালীন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মি. বেব্রসের সহযোগীতায় বিদ্যালয়টি মিডিল ভার্নাকুলার স্কুল হিসেবে চালু করা হয়। ১৮৯২ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মাধ্যম ছিল ইংরেজী। তখন সংক্ষিপ্ত নাম ছিল মিডিল ইংলিশ স্কুল। বিদ্যালয়টি কান্দিউড়া এম.ই.স্কুল নামে আখ্যায়িত হয়ে ১৮৯২ সাল থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় প্রচুর সুনাম অর্জন করে।

এরপর তৎকালীন ময়মনসিংহের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মি.স্প্রাই এর আন্তরিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি ১৯১৪ সাল হতে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাই ইংলিশ স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯১৫ সাল থেকে শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পরিক্ষা দেয়ার সুযোগ পায়। এরপর ১৯২৬ সালে কেন্দুয়া উপজেলার চিথোলিয়া গ্রামের পাল চৌধুরী পরিবারের জগন্নাথ কলেজের জনৈক অধ্যাপক মহিম চন্দ্র চৌধুরীর নিকট থেকে ৩,০০০/- (তিন হাজার) টাকা অনুদান পেয়ে কেন্দুয়া স্প্রাই ইন্সটিটিউশনের সঙ্গে জয়হরি নাম যুক্ত হয়ে কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই ইন্সটিটিউশন হিসাবে রূপ লাভ করে।

এভাবে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত শিক্ষা বিস্তারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিকুলতার সম্মুখিন হলেও স্বাধীনতা লাভের পর বিদ্যালয়টি শিক্ষার মান এগিয়েই যেতে থাকে। নেত্রকোণা জেলা তথা দেশের অন্য সকল এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের মধ্যে এই বিদ্যালয়টি একটি বিশেষ স্থান নিয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে দখল করে রেখেছিল। ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ কেন্দুয়ার কৃতি সন্তান বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ বিদ্যালয়ে এসে এক সুধি সমাবেশে বিদ্যালয়টি জাতীয় করনের ঘোষণা দেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টি কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হিসাবে পরিচিত।

এলাকাবাসী ও ছাত্র অভিভাবকদের দাবি, এই বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে বছরের প্রায় ৮ মাসেই বিভিন্ন পরিক্ষা কেন্দ্রের ভ্যানু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পি.এস.সি, জে.এস.সি, এস.এস.সি, এইচ.এস.সি, ডিগ্রী, পরীক্ষা কেন্দ্রের ভ্যানু হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বছরে গড়ে ২ মাসও ক্লাশ করতে পারেনা। এতে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসম্মত লেখাপড়ার অভাবে ভাল ফলাফল অর্জন করতে পারছেনা।

ছাত্র অভিভাবক প্রবীর বিশ্বাস ও আশরাফ উদ্দিন ভূঞা জানান, এভাবে একটি প্রতিষ্ঠান লেখাপড়ায় পিছিয়ে যাক তা আমরা চাইনা। আমরা শত শত ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকের শূন্যপদ জরুরী ভাবে পূরণের দাবি জানাই। পাশাপাশি পরিক্ষা কেন্দ্র অন্যত্র স্থানান্তরের জন্যও অনুরোধ করি।

ওই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২১ পদে আছেন মাত্র ১০ শিক্ষক। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৮ শতাধিক। এই কম সংখ্যক শিক্ষক দিয়ে ৮ শতাধিক ছাত্র ছাত্রীর পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতেহয় শিক্ষকদের। শিক্ষকরা জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে ক্লাশ চালিয়ে যান।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো: জুলফিকার হোসেন বলেন, একদিকে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট অপর দিকে পরিক্ষা কেন্দ্রের ভ্যানু হিসেবে বছরের অধিক সময় ব্যবহৃত হয়। যে কারণে এই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠগ্রহনের ক্ষেত্রে তাদের ন্যায্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি শিক্ষক সংকট দূর করলে সুষ্ঠু পাঠ দানের মাধ্যমে এই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ফলাফলের মাধ্যমে মাথা উঁচু করে দাড়াবার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন।

(এসবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮)