আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : জিয়া অর্ফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্যান্যদের ১০বছর ও আর্থিক দন্ডিত রায়ের পর বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির কোন তৎপরতা নেই বরিশালের আগৈলঝাড়ায়। কেন্দ্র ঘোষিত দলের কোন কর্মসূচি পালন না হওয়ায় দলের তৃনমূল পর্যায়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে দলের তৃণমুল নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, খালেদা জিয়ার রায়ের বিরুদ্ধে দল থেকে অব্যাহতভাবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিলেও এখানের নেতারা তার একটি কর্মসূচিও পালনের জন্য কর্মীদের কোন নির্দেশনা দেয়নি।

তারা অভিযোগে আরও বলেন, নির্বাচনের সময় দলের টিকিটের জন্য মরিয়া হয়ে দৌড় ঝাপ করা কেন্দ্রীয় কোন নেতার দেখা মিলছে না এলাকায়। উপজেলা পর্যায়ের কোন নেতাকেও এখন মাঠে পাচ্ছেন না তারা। এমনকি তৃণমুল নেতা কর্মীদের সাথে ফোনেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা পর্যায়ের নেতারা পুলিশী হয়রানীর অযুহাতে পুলিশ ও আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে আতাঁত করে চলছেন। নেতাদের আতাঁত দলের জন্য আত্মঘাতি বলেও মন্তব্য করেছেন কর্মীরা।
সূত্র মতে, ৮ই ফেব্রুয়ারী খালেদা জিয়ার রায়ের কয়েকদিন আগে থেকেই উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও আত্মগোপনে গিয়ে কর্মীদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মতবিরোধ আর গ্রুপিংয়ের কারণে দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে আগৈলঝাড়ার উপজেলা বিএনপি’র সকল কার্যক্রম। নেই কোন দলীয় অফিসেরও অস্তিত্ব। গ্রুপিংয়ের কারণে এলাকায় আসে না বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান, সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনসহ। তারা ঢাকায় বসে ফোনে দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখলেও বর্তমানে তা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছেন। যার প্রভাব পড়বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

সূত্র মতে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই আগৈলঝাড়ায় বিএনপি দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরে। তখন এই আসনের চারদলীয় ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান। নির্বাচনে হেরে তার সমর্থিত আ. লতিফ মোল্লাকে আহবায়ক করে আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গঠনের পর মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপির অপর নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমানের নেতাকর্মীরা কোনঠাঁসা হয়ে পরে।

২০০৯ সালের ২৭ নভেম্বর লতিফ মোল্লার বাড়িতে বিএনপি’র অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে আব্দুল লতিফ মোল্লা সভাপতি ও কুদ্দুস সমর্থিত এসএম আফজাল হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। এর পর থেকে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় দুটি গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়ে নেতাকর্মীরা দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পরে। দলীয় বিভত্তির চরম পর্যায়ে পৌছলে কেন্দ্রীয় বিএনপি ২০১০সালের ৯অক্টোবর আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।

এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান তার মনোনীত উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন লাল্টুকে আহ্বায়ক করে আরেকটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান সমর্থিত নেতা কর্মীরা।

পরবর্তীতে এস.এম আফজাল হোসেন সিকদারকে সভাপতি ও আবুল হোসেন লাল্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬১সদস্য বিশিষ্ট আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপি সভাপতি মেজবা উদ্দিন ফরহাদ ও সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ২০১১সালের ১২ সেপ্টেম্বর এই কমিটি অনুমোদন দেয়। আফজাল-লাল্টুর কমিটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর বিএনপি’র নেতা কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় ও টানপোড়েনের সৃষ্টি হয়।

জেলা উত্তর বিএনপি’র সভাপতি ও সম্পাদক অনুমোদিত কমিটি প্রত্যাখান করে সংবাদ সম্মেলন করেন সেই কমিটির সভাপতি এসএম আফজাল। কমিটি মনোপুত না হওয়ায় ইঞ্জিনিয়ার সোবহান দলের কাছে বিচার দিলে কেন্দ্রীয় বিএনপি বরিশাল জেলা উত্তর সভাপতি ও সম্পাদককে চিঠি দিয়ে নতুন কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেয়। যা পরবর্তিতে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। প্রধানত গ্রুপিংয়ের কারণে আগৈলঝাড়ায় বিএনপি তাদের তাদের কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। যার প্রভাব পৌছেছে এখন তৃণমুল পর্যায়ে।

গ্রুপিং আর আভ্যন্তরীণ দ্বন্দের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা বিএনপি সাধারন সম্পাদক এসএম আফজাল হোসেন বলেন, দলীয় চেয়ার পার্সনের রায়ের আগে থেকেই পুলিশী হয়রানীর ভয়ে নেতা কমীরা বাড়িতে ঘুমাতে পারছে না। এই অবস্থায় থেকে কিভাবে দলীয় কর্মসূচী পালন করবো ? নেতা কর্মীরা এক জায়গায় ৫/৬জন জড়ো হতে চাইলেই আগে থেকে প্রশাসন জেনে যায়। তাই পুলিশী হয়রানী আর গ্রেফতারের আতংকে কর্মসূচী পালন করা যাচ্ছে না।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮)