ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীর কালিকাপুরস্থ পাবনা সুগার মিলের সামনের জমি অন্যের দখলে চলে যাওয়ায় সোমবার দুপুরে শ্রমিক-কর্মচারী-আখচাষীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সমাবেশে বক্তারা উত্তরাঞ্চলের রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান পাবনা সুগার মিলের সামনে হাইওয়ে সংলগ্ন জমি অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ এবং আখচাষীরা মিলের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন । মিলজোন এলাকা এবং মিলের সীমানা প্রাচীরের পূর্বাংশে নিটল-টাটা গ্রুপ স্থাপনা তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণ করে এসব জমি করায়ত্ব করার ঘটনার প্রতিবাদে এই কর্মসূচির আয়োজন করেন। পাবনা চিনিকলের ওয়ার্কাস ইউনিয়ন, আখচাষী কল্যাণ সমিতি এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে চিনিকলের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং আখচাষীরা অংশগ্রহন করেন।

এসময় মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, পাবনা সুগার মিলের প্রতিদিন ১,৫০০ মেঃটন আখ মাড়াই করে বার্ষিক ১৫,০০০ মেঃটন চিনি উৎপাদন করার ক্ষমতা রয়েছে। মিলটির কোন পরীক্ষামূলক খামার না থাকায় আখের উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন ও চাষীদের মধ্যে সরবরাহ করতে না পারায় চাষীরা আখচাষে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছেন। ফলে চাষীরা মিলটিতে চাহিদা অনুযায়ী আখ সরবরাহ করতে পারছেন না। এছাড়া মিলটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে বহুমুখী উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী রয়েছে। পর্যাপ্ত জমি না থাকায় মিলের জুস প্লান্ট, মিনারেল ওয়াটার, কো-জেনারেশন প্লান্ট, রিফাইন্ড সুগার, বায়োগ্যাস ও বায়োফার্টিলাইজার প্লান্ট ইত্যাদি প্রকল্প স্থাপন করে উৎপাদন বহুমুখীকরণ সম্ভব হচ্ছে না।

সমাবেশে ওয়াকার্স ইউনিয়নের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বর্তমানে এই মিলে মোট ৬০ একর জমি রয়েছে। যারমধ্যে ১৫ একর লেগুন ও রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া অবশিষ্ট ৪৫ একর জমিতে আবাসিক স্থাপনাসহ অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে। বহুমুখী উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য পাবনা সুগার মিলের আরও জমির প্রয়োজন। মিলের সামনে উত্তর পার্শ্বের হাইওয়ে রাস্তা পর্যন্ত প্রায় ২৭.৪৮ একর জমি রয়েছে। এই জমি অধিগ্রহণ করে উল্লেখিত বহুমুখী উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য মিলে কর্মরত কর্মকর্তা এবং শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছেন।

ওয়াকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জল বলেন, মিলের সীমানা প্রাচীর থেকে পূর্বাংশে ইতোমধ্যে নিটল-টাটা গ্রুপ স্থাপনা তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফলশ্রুতিতে পাবনা চিনিকল লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে বিরূপ প্রভাব পড়বে ।

আখচাষী মুরাদ আলী মালিথা ও আব্দুল মালেক মালিথা নিটল-টাটা গ্রুপ স্থাপনা তৈরীর জন্য জমি করায়ত্ব করার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এতে আখের জমি কমে যাবে এবং আখ চাষীরা আখ চাষে আরো নিরুৎসাহিত হবে। নিটল-টাটা গ্রুপের স্থাপনা অন্যত্র সরিয়ে বর্ণিত জমি সরকারী মূল্যে পাবনা সুগার মিলের অনুকূলে অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা মিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

জমি করায়ত্ব করার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিপূর্বে ওয়ার্কাস ইউনিয়ন, আখচাষী কল্যাণ সমিতি এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের যৌথভাবে সরকারের উর্দ্ধতন মহলে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম সরেজমিনে পাবনা চিনিকল এলাকা পরিদর্শন করেন।

এসময় আবুল কাশেম বলেন, দেশের স্বার্থে সরকারের ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশে আরেকটি প্রতিষ্ঠান তৈরী হলে সমস্যার সৃষ্টি হবে। মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশগ্রহনকারী শ্রমিক, কর্মচারী ও আখচাষীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন পাবনা চিনিকলের মঙ্গলের জন্য যা কিছু করা সম্ভব তা করা হবে।

(এসকেকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮)