গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : জানমালের নিরাপত্তা ও লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারের দাবিতে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা শহরে সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। শনিবার রাত থেকে ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট পালন করছেন। স্বর্ণশিল্প ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বানে এ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে।

ধর্মঘটের অংশ হিসেবে প্রতিটি জুয়েলারি দোকানে তালা ঝুলিয়ে এবং কালোপতাকা উত্তোলন করে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন।

সোমবার দুপুরে মানববন্ধন কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হলেও পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে ব্যবসায়ীরা তা স্থগিত করেছেন। তবে ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে।

গলাচিপা স্বর্ণশিল্প ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা অভিযোগ করেছেন, শনিবার রাতে উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র স্বর্ণকার পট্টিতে সশস্ত্র ডাকাতরা হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ‘মা স্বর্ণ শিল্পালয় এ্যান্ড জুয়েলারি’ নামক স্বর্ণের দোকানে হানা দিয়ে নগদ অর্থসহ ৩১ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতদের মুর্হুমুর্হু হাতবোমার বিস্ফোরণ উপেক্ষা করে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় তারা দুই ডাকাত ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। কিন্তু ঘটনার পর ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ আর কাউকে গ্রেফতার কিংবা আটক করতে পারেনি।

উপরন্তু প্রশাসনের পদস্ত কোন কর্মকর্তা একবারের জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন কিংবা তাদের পাশে দাঁড়ায় নি। স্বর্ণশিল্প ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি শ্যামল কর্মকার অভিযোগ করেন, পুলিশসহ প্রশাসনের ভূমিকায় তারা জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। তারা দোকান খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। সমিতির আওতায় উপজেলা শহরে ছোট বড় ৬৬ টি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। এসব দোকানের ওপর দু’ শতাধিক পরিবারের জীবিকার সংস্থান হয়। অব্যাহত ধর্মঘটের কারণে অনেক পরিবারেই আর্থিক সঙ্কট দেখা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এরপরেও জানমালের নিরাপত্তা না পাওয়া পর্যন্ত তারা ধর্মঘট অব্যাহত রাখবেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ডাকাতির ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের কোন ধরণের সহায়তা তারা পান নি। অন্য ডাকাতদের ধরা এবং লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারেও পুলিশের তেমন উল্লেখযোগ্য তৎপরতা নেই। সমিতির একাধিক সদস্য জানান, তাদের জুয়েলারিগুলোতে গ্রাহকদের গচ্ছিত বহু স্বর্ণলঙ্কার রয়েছে। যা নিয়ে তারা এখন রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন। দোকান খুলতে তারা সাহস পাচ্ছেন না।

এদিকে, সোমবার কয়েকবার স্বর্ণকার পট্টি ঘুরে কেবল মানুষের জটলা ছাড়া কিছুই দেখা যায় নি। প্রতিটি দোকানে তালা ঝুলছে এবং কালোপাতাকা উড়ছে। অন্যদিকে, শনিবার রাতের ডাকাতির ঘটনায় স্বর্ণ দোকানের মালিক নির্মল কর্মকার গলাচিপা থানায় ৬ ডাকাতের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

ধৃত দুই ডাকাত মোঃ কিবরিয়া ও কামরুল ইসলাম কামাল ছাড়াও মামলায় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার আমির হামজা, বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি গ্রামের আদম আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন অলি, বরিশাল কোতোয়ালি থানার আনোয়ার ও ঝালকাঠির নান্নু ডাকাতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ডাকাতরা ঘটনার দিন সকালে বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে একত্রিত হয়। বিকালে লোহালিয়া খেয়া পার হয়ে গলাচিপা আসে। কয়েকজন ডাকাত আগেই গলাচিপা আসে।

উল্লেখ্য, এ ঘটনার মাত্র দিন কয়েক আগে ডাকাতরা গলাচিপার চরকাজল শাখা কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা করে এবং একই ব্যাংকের পানপট্টি শাখায় ডাকাতিতে ব্যর্থ হয়ে একজনকে জবাই করে হত্যা করে।

এছাড়া আমখোলা ইউনিয়নে ছৈলাবুনিয়া গ্রামে ট্রিপল মার্ডার ছাড়াও গলাচিপা শহরের দু’টি বাড়িতে ভয়াবহ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, চুরি-ডাকাতির চেষ্টা হয়েছে আরও কয়েকটি বাড়িতে। এসব ঘটনায় জনমনে চরম উদ্বেগ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহিদ হোসেন জানান, ডাকাতির মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত হচ্ছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়েছে।

(এসডি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮)