রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কলিয়া গ্রামে সকল প্রকার নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে দেলোয়ার হোসেন অ্যান্ড কোং নামে একটি নয়া ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। তার অনুকূলে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও কৃষি বিভাগসহ কোন বিভাগেরই লাইসেন্স ও প্রত্যয়ন মেলেনি। অপরিকল্পিতভাবে কৃষি জমি বিনষ্ট করে ইটভাটা নির্মাণের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

ওই ইটভাটা নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু সরকার দলীয় কতিপয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার প্রভাব খাটিয়ে মালিক ইটভাটা নির্মাণের কাজ চালিয়েই যাচ্ছেন। এ নিয়ে এলাকার সাধারাণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন (২০১৩) অনুযায়ী আবাসিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার এবং গ্রামীণ বা ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তা থেকে অন্তত অর্ধ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ বাসাইলের কলিয়া গ্রামে সব ধরণের নিয়ম ভঙ্গ করে স্থাপন করা হচ্ছে ইটভাটা। ভাটার দু’পাশেই এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পাশেই দু’টি বাজার, বসত বাড়ি ও তিন ফসলী জমিও রয়েছে। ৫০ গজের মধ্যেই রয়েছে গ্রামীণ সড়ক। সেই রাস্তা দিয়ে তিন টনের অধিক মালামাল বহনকারী ট্রাক চলাচল করছে- যা ইটভাটা স্থাপন আইন ও নীতিমালার পরিপন্থী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সকল প্রকার সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে ইটভাটা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ইট বানানোর কাজও চলছে পুরোদমে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ইটভাটার উত্তরের কাউলজানী দক্ষিণ পাড়া গ্রামের হোমিও চিকিৎসক আলতাফ হোসেন বলেন, এখানে ইটভাটার কাজ শুরু হলে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হবে মানুষ। গাছে কোন ধরণের ফল আসবে না। বাড়ি-ঘরেও মানুষ বসবাস করতে পারবে না। অবিলম্বে ভাটার নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে হবে। এ

কই গ্রামের শরীফ খান বলেন, ইটভাটার চারপাশেই রয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কোমলমতি শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হবে। পরিবেশের উপর নেমে আসবে বিপর্যয়। মজনু ভূইয়া বলেন, ভাটার পাশেই রয়েছে আমাদের প্রচুর জমি। এসব জমিতে বছরে তিনটি ফসল হয়। ইটভাটা হলে কোন ফসল হবে না। আমরা দ্রুত এই ভাটা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

কলিয়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, আমরা কোন প্রতিবাদ করতে পারছি না। আমরা চাই না এখানে ইটভাটা নির্মাণ হোক। কিন্তু কে শোনে কার কথা ? এলাকার প্রভাবশালী অনেককেই ম্যানেজ করেছে। যে কোনভাবেই হোক ইটভাটা বন্ধ করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই।

এ ব্যাপারে ভাটা মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভাটা নির্মাণের অনুমতির জন্য সবগুলো অধিদপ্তরে আমি আবেদন করেছি। এখনও অনুমতি পাইনি। তবে দ্রুতই অনুমতি পেয়ে যাবেন বলে দাবি করেন তিনি।

বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, এখানে কিভাবে ইটভাটা করছে বুঝতে পারছি না। এটি তিন ফসলি জমির ফসল বিনষ্ট করবে। আমাদের কাছে প্রত্যয়ন চাওয়া হয়েছে। শেষে আমরা তিন ফসলের জমিরই প্রত্যয়ন দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা ভাটার মালিককে নোটিশ করেছি সকল প্রকার কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য। এরপরেও কার্যক্রম চালিয়ে গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহান স্বপ্না বলেন, ইটভাটা নির্মাণের জন্য তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। আমি সরেজমিনে সেখানে যাব। যদি লাইসেন্স না নিয়ে থাকে তাহলে ইটভাটার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(আরকেপি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮)