স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রতিভাকে খুঁজে বের করে তাদের মর্যাদা দিতে হবে। তাহলেই গুণিজনদের সম্মাননা দেয়া হবে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও উৎসাহিত হবে।

তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন স্বাধীন একটি দেশ। এ দেশে এখনও পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। যে কারণে মাঝে মধ্যে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাত আস।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে চলতি বছরের একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীবৃন্দ জাতীয় সঙ্গীত ও একুশের গান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক থেকে পাঠ করা হয়।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব সফিউল আলম। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ইব্রাহিম হোসেন খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতি ও জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করার জন্য বার বার চেষ্টা করা হয়েছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে অর্জন তা নস্যাৎ হতে দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, সংবিধান লংঘন করে যারা বারবার ক্ষমতায় বসেছে তারা জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দেশের সংস্কৃতিমনা মানুষের কারণে তারা পারেনি।

তিনি বলেন, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু করি। আমরা ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সে কাজ বন্ধ করে দেয়।

একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

অনুষ্ঠানে ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে একুশে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সম্মানিত ২১ ব্যক্তিকে এবার একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

এবার যারা একুশে পদক পেয়েছেন তারা হলেন- ভাষা আন্দোলনে আ জ ম তকীয়ুল্লাহ (মরণোত্তর) ও অধ্যাপক মির্জা মাজহারুল ইসলাম।

সমাজসেবায় নিরাপদ সড়কের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ইলিয়াস কাঞ্চন এবং অভিনয়ে হুমায়ূন ফরীদি (মরণোত্তর)।

সঙ্গীতে শেখ সাদী খান, সুজেয় শ্যাম, ইন্দ্র মোহন রাজবংশী, মো. খুরশীদ আলম ও মতিউল হক খান।

নৃত্যে একুশে পদক পেয়েছেন মীনু হক। নাটকে পেয়েছেন নিখিল সেন।

চারুকলায় কালিদাস কর্মকার এবং আলোকচিত্রে গোলাম মুস্তাফা এবার পদক পেয়েছেন।

এ ছাড়া সাংবাদিকতায় রণেশ মৈত্র, গবেষণায় ভাষাসৈনিক অধ্যাপক জুলেখা হক (মরণোত্তর), অর্থনীতিতে মইনুল ইসলাম, ভাষা ও সাহিত্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম খান (কবি হায়াৎ সাইফ), সুব্রত বড়ুয়া, রবিউল হুসাইন ও মরহুম খালেকদাদ চৌধুরী একুশে পদক পেয়েছেন।

পদকপ্রাপ্ত প্রত্যেকে একটি সোনার মেডেল, একটি সাম্মাননাপত্র ও এক লাখ টাকা পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন। ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিবছর বিশিষ্ট নাগরিকদের একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮)