গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামে স্ত্রী রীতা চৌহানের শরীরে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে হত্যার চেষ্টাকারী স্বামী রিপন চৌহানকে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আটক করেছে পুলিশ।

জীবন বাঁচাতে দগ্ধ স্ত্রী নদীতে ঝাঁপ দিলে গুরুতর আহত অবস্থায় এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে গৌরীপুর হাসপাতালে প্রেরণ করে। বর্তমানে সে গৌরীপুর হাসপাতালের ফ্লোরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ঘটনার ৪ দিন অতিবাহিত হলেও স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত কোন খোঁজ খবর নেয়নি।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, একজন সিএনজি চালক দগ্ধ রীতা চৌহানকে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রেখে যান। এরপর তাকে ভর্তি করে হাসপাতালের যেসব ওষুধ আছে-তা দিয়ে চিকিৎসা চলছে। সোমবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে অভিভাবক না থাকায় চিকিৎসকরা অন্যত্র পাঠাতে পারছে না। পরে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. ইসতিয়াক আহাম্মেদ সমাজসেবা অধিদপ্তরের রোগী কল্যাণ তহবিল থেকে রোগীর প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করে দেন। ইউএনও মর্জিনা আক্তার ও গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার আহম্মদ, অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) তারিকুজ্জামান নির্যাতিতা নারীর পক্ষে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

পূর্বধলা উপজেলার হারধলা গ্রামের মৃত কানাই চৌহানের কন্যা রীতা চৌহান জানায়, প্রেমের সম্পর্ক সূত্র ধরে প্রায় ১৩বছর পূর্বে বোকাইনগর ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামের শ্রীরাম চৌহানের পুত্র রিপন চৌহানের সাথে বিয়ে হয়। এ বিয়ে তার পরিবারের লোকজন মেনে নিতে চায়নি। ভাসুর পল্লাদ চৌহান ও শাশুড়ী কুসুমি চৌহান ষড়যন্ত্র করে রীতা জোরপূর্বক তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলো। পল্লাদের স্ত্রী ও তার পুত্র মিলে একাধিকবার নির্যাতন চালিয়েছে রীতার উপর। গত শুক্রবার সন্ধ্যার পরে তাকে মেরে ফেলতে স্বামী রিপন চৌহান তার শরীরে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দেয়। এ সময় তার ভাসুর পল্লাদ চৌহান, শাশুড়ী কুসুমী চৌহানও তাকে নির্যাতন চালায়। দগ্ধ শরীরে বাঁচার জন্য বালুয়া নদীতে ঝাঁপ দেয়। সেখান থেকে এলাকাবাসী উদ্ধার করে তাঁকে হাসপাতালে পাঠায়।

স্ত্রীর অত্যাচার নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে রিপন চৌহান জানায়, কয়েকদিন পরপরই সে আমাকে ও আমার মাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। ওর অত্যাচার-নির্যাতনে আমরা অতিষ্ট। এ নিয়ে অসংখ্যবার সালিশও হয়েছে। রীতা চৌহান উশৃঙ্খল, কারো কথা মানে না। এ প্রসঙ্গে ইউপি মেম্বার আজিজুল হক বলেন, রীতা চৌহানকে সামাজিকভাবে কয়েক দফা দেন-দরবারের করে স্বামী-স্ত্রী ও পরিবারের মাঝে আপোষ করে দেয়া হয়। তবে সে উশৃঙ্খল। এ দিকে রীতা চৌহানের বোন মনি চৌহান জানায়, তার বোনের ওপর বারবারই অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এ বিষয়ে পল্লাদ চৌহান জানায়, রিপন চৌহান ও রীতা চৌহান অশালীন আচারণ করায় তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।

গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার আহাম্মদ বলেন, গরম পানি ছুড়ে স্ত্রীর শরীর ঝলসে দেয়ার অভিযোগে রিপন চৌহানকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ দায়েরের জন্য নির্যাতনের শিকার রীতা চৌহানের পরিবারের লোকজনকে খোঁজা হচ্ছে।

(এসআইএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮)