স্টাফ রিপোর্টার : খালেদার জিয়ার দুর্নীতির মামলা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আলাদা কোনো মানদণ্ড নেই বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেছেন, সংস্থাটি একটি নির্দিষ্ট রীতি অনুযায়ী কাজ করে। কোনো একটি মামলা নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করার সুযোগ নেই।

২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সংস্থাটির কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন দুদক চেয়ারম্যান।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের করা একটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের এবং তার ছেলে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামির ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। যদিও এই মামলায় দুদকের পক্ষ থেকে সব আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করা হয়েছিল।

বিচারিক আদালতের দণ্ড বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবীরা। এখন দুদকও সাজা বাড়াতে আপিল করবে কি না- এমন প্রশ্ন ছিল সংস্থাটির প্রধানের কাছে।

জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের লিগ্যাল টিম আছে। সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পরে এগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। লিগ্যাল টিম ওগুলো দেখবে। এরপর তারা আমাদের কাছে সুপারিশ করবে। কমিশন বসবে। তারপর কী সিদ্ধান্ত নেয় তার অপেক্ষা করতে হবে এখন।’

খালেদা জিয়ার আপিল দুদক কীভাবে মোকাবেলা করবে-এমন প্রশ্নে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘দুদকের স্টাবলিস্ট প্রসিডিওর (প্রতিষ্ঠিত কার্যপদ্ধতি) অনুযায়ী দুদক কাজ করবে। পার্টিকুলার (নির্দিষ্ট) কোনো মামলার বিষয়ে আমার মন্তব্য নেই। যে কোন মামলার বিষয়েই আমাদের একটি স্ট্যান্ডার্ড (মানদণ্ড) প্রসিডিওর আছে, ঐতিহ্য আছে।’

‘নতুন করে কিছু আবিষ্কার না করে ওই ঐতিহ্য অনুযায়ী মামলাগুলো যেভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন সেভাবেই দুদক তাদের মামলা পরিচালনা করবে।’

দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তবে তার থেকেও বড় অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় পদত্যাগ করা বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিষয়ে দুদক নমনীয় কি না-এমন প্রশ্নে দুদক প্রধানের কাছে। উচ্চ আদালতের একটি আদেশেও এই বিষয়ে আপত্তি ছিল- এ বিষয়টিতেও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় তার।

জবাব আসে, ‘যেহেতু সবাই স্বাধীন, আদালত তাদের কথা বলবে, আর আমরা আমাদের কথা বলব। আমরা আমাদের প্রসিডিওরের বাইরে কোন কিছু করতে পারব না।’

‘এ বিষয়ে চিন্তভাবনা করেই দুদক কাজ করে থাকে, হুট করেই কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে রাজি নয়।’

‘আপনার আজকে যেটা দেখছেন কালকে সেটা নাও দেখতে পারেন। তাই কে আইনের মধ্যে আর কে আইনের বাইরে বা কে বহাল তবিয়তে আছে এটা ঢালাওভাবে বলা সমীচীন নয়। দেশের প্রত্যেকেই আইনের মধ্যে রয়েছে।’

সংস্থার কাজে সন্তুষ্ট নন দুদক চেয়ার‌ম্যান

দুর্নীতি রোধে জনপ্রত্যাশার তুলনায় দুদক কতটুকু সফল- জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘জাতির প্রত্যাশা যুক্তিসঙ্গত। তবে গত দুই বছরের প্রত্যাশার সঙ্গে কাঙ্খিত মাত্রায় প্রত্যাশার পূরণ হয়নি।’

‘তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক যথেষ্ট কার্যক্রম হাতে নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।... আইন মূলত প্রতিপালন করার জন্যই তৈরি হয়। কিন্তু এটা ইনফোর্স করা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। আমি বরাবরই বলে আসছি, দেশে দুর্নীতি বন্ধে দুদকের একার পক্ষে সম্ভব নয়। দুর্নীতি রোধ ও দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে এখানে সবার সহযোগিতা ও এক সঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন।’

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮)