নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর ধামইরহাটে জয়িতা নারী নির্বাচিত হলেন ফাতেমাতুজ্জহুরা। উপজেলার পৌর সদরের দক্ষিণ চকযদু গ্রামের মোঃ সমির উদ্দিনের মেয়ে ফাতেমাতুজ্জহুরা (২৮)। ফাতেমার ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। কিন্তু বাবা মার অভাবের সংসারে তার স্বপ্ন পূরণ হলো না। স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।

অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ফাতেমার সঙ্গে উপজেলার কয়রাপাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের বিয়ে হয়। স্বামীর চাহিদা মত যৌতুক দিতে না পারার কারণে প্রতিনিয়ত তাকে নির্যাতন সহ্য করতে হতো। ঠিকমতো ভরণ পোষণ পেত না। অবস্থা বেগতিক দেখে ফাতেমা নিজের পায়ে দাঁড়ানো চেষ্টা করে। প্রথমে সে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল পালন শুরু করে। পরে সেলাই বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অন্যের কাপড় চোপড় সেলাই করতে শুরু করে। তখন থেকে ফাতেমার উপার্জন শুরু হতে থাকে। টাকা পয়সা উপার্জন হওয়ার ফাতেমার সঙ্গে তার স্বামীর সর্ম্পক উন্নতি হতে থাকে।

বর্তমানে ফাতেমা দুই কন্যা সন্তানের জননী। বড় মেয়ে হাসনাত জাহান (১৩) অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে। ছোট মেয়ে হাওয়া জান্নাতের বয়স ৪ বছর। অভাব দারিদ্রতা ও নির্যাতনকে পরাজিত করে ফাতেমা এখন স্বাবলম্বী মহিলা। আবার সে পড়াশুনা শুরু করেছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে ধামইরহাট এমএম ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয়েছে।

বর্তমানে সে স্নাতক ২য় বর্ষে অধ্যরনরত। ফাতেমা একবার উপজেলার উমার ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। নিজের সংসার চালিয়ে সে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজে বর্তমানে জড়িয়ে পড়েছে।

স্বামী পরিত্যক্তা, গরিব অসহায় নারীদের ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, হতদরিদ্রদের সাহায্য করাসহ বিভিন্ন কাজে তাদেরকে সক্রিয় সহায়তা করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মনোরঞ্জন পাল বলেন, আমাদের সমাজে এ রকম বহু নারী রয়েছেন যাঁরা জীবন সংসারে অনবরত সংগ্রাম করছেন। অধ্যবসায় ও পরিশ্রম করলে জীবনে সফলতা আসে তার বাস্তব দৃষ্টান্ত ফাতেমাতুজ্জহুরা। তিনি পিছিয়ে পড়া নারীদের মধ্যে থেকে উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নারী নির্বাচিত হয়েছেন।

(বিএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮)