স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ মামলায় প্রবীণ শফিক রেহমান, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত গত মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেয়া হলেও বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে। চার্জশিটে অন্য অভিযুক্তরা হলেন- বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। তারা তিনজনই বর্তমানে আমেরিকায় রয়েছেন। অভিযোগপত্রে মামুন ও মিজানুরকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, অভিযুক্তদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে আইনি প্রক্রিয়ায় আনার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মামুনের ছেলে রিজভী আহাম্মেদ যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের কাছ থেকে সজীব ওয়াজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন এবং পরে তা অন্য আসামিদের সরবরাহ করেন। আর প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান এই ষড়যন্ত্রে অর্থ যোগানোর পাশাপাশি পরামর্শদাতা হিসেবে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ এনেছে পুলিশ।

আমেরিকাপ্রবাসী মামুন বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। পরিবার নিয়ে কানেটিকাটের ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে বসবাস করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আমেরিকার ভার্জিনিয়ায় বসবাস করেন। তার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত গোপন তথ্য পেতে এফবিআইএর এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার অপরাধে ২০১৫ সালের ৪ মার্চ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় নিউ ইয়র্কের একটি আদালত। সিজার আদালতের রায়ে কারাগারে যাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়।

এরপর জয় ফেইসবুকে এক পোস্টে লেখেন, “আমাকে যখন কেউ হত্যার চেষ্টা করছে, সেটিও তখন আমি খুবই ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে নিচ্ছি। যারা এর জন্য দায়ী, তারা বিএনপির যতো উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বই হোক না কেন, আমি তাদের হদিস বের করে বিচারের মুখোমুখি করব।”

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের নথিতে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলের ক্ষতি করার জন্য তার ব্যক্তিগত তথ্য পেতে সিজার এফবিআইয়ের এক এজেন্টকে ঘুষ দিয়েছিলেন। ঘুষ দিয়ে তথ্য পাওয়ার পর সিজার তা বাংলাদেশি এক সাংবাদিককে সরবরাহ করেছিলেন এবং বিনিময়ে প্রায় ৩০ হাজার ডলার পেয়েছিলেন বলেও নথিতে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায়ের পর জয়কে অপহরণের চক্রান্তের অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৭ ও ১২০ (বি) ধারায় ঢাকার পল্টন থানায় এই মামলা দায়ের করেন।

সেখানে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের আগে মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার একত্রিত হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

২০১৬ সালের এপ্রিলে শফিক রেহমানকে তার ইস্কাটনের বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ইস্কাটনে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে সে সময গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, জয় সংক্রান্ত ‘কিছু তথ্য ও গোপনীয় নথিপত্র’ সেখানে পাওয়া গেছে। অন্যদিকে শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান সে সময় দাবি করেছিলেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিক’ হিসেবে নিবন্ধ লেখার জন্যই তার স্বামী ওই তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।

পাঁচ মাস কারাগারে থাকার পর সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্তি পান যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক। পরে হাকিম আদালত এ মামলায় তাকে পুলিশ প্রতিবেদন পর্যন্ত জামিন দেয়।

এ মামলার অপর আসামি খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকার কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার হন। পরে কারাবান্দি অবস্থায় ২০১৬ সালের এপ্রিলে তাকে জয়কে অপহরণ ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সাড়ে তিন বছর জেলে থাকার পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে মাহমুদুর রহমানও জামিনে মুক্তি পান।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৮)