সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পর নিখোঁজ হওয়া ছেলের সন্ধান পাওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের পরেশনাথ কর্মকারের ছেলে বৃদ্ধ লক্ষীপদ কর্মকার শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে মণ্টু লাল কর্মকারের সঙ্গে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার মঠবাড়িয়া গ্রামের বিষ্ণুপদ কর্মকারের মেয়ে সীমা রানী কর্মকারের সঙ্গে হিন্দু ধর্মমতে বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের অভিজিৎ কর্মকার নামের দেড় বছরের এক ছেলে রয়েছে। বিয়ের ছয় মাস পর থেকে আমার ছেলে মণ্টুকে নিজের বাপের বাড়িতে ঘর জামাই হিসেবে রাখার জন্য বৌমা সীমা চাপ সৃষ্টি করিয়া আসছিল। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়।

দেড় বছর আগে বাপের বাড়িতে যেয়ে সন্তান হওয়ার পর থেকে তার বৌমা সীমা আর তাদের বাড়িতে আসেনি। তিনি ও তার স্ত্রী বৌমাকে আনতে গেলে তাদেরকে অপমান করা হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও মঠবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যনকে অবহিত করা হয়। একপর্যায়ে তার বেহাই বিষ্ণুপদ কর্মকার বাদি হয়ে ২০১৬ সালের ৫ জুন তার বড় জামাতা আনন্দ কর্মকার, নাতি তাপস মজুমদার, বড় ছেলে রামপ্রসাদ কর্মকার, ছোট ছেলে মণ্টু লাল কর্মকার, ভাইপো দেব কুমার কর্মকারসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে পাইকগাছা আদালতে একটি চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মামলা (সিআরপি- ৩৯৩/১৬) দায়ের করেন।

এ ঘটনা জানার পর আমার ছেলে মন্টু লাল কর্মকার বাদি হয়ে ২০১৬ সালের ৯ জুন সাতক্ষীরা আদালতে বিষ্ণুপদ কর্মকারসহ আট জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মামলা(সিআরপি- ২২১/১৬) করে। মামলার খবর জানতে পেরে মঠবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যানকে মীমাংসার প্রস্তাব পাঠান তার বেহাই বিষ্ণুপদ কর্মকার।

২০১৬ সালের ২০ জুন সকাল ১০টায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মঠবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদে বসা হয়। শান্তিপূর্ণ সংসারের লক্ষ্যে উভয়পক্ষের মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ি মামলা তুলে নেওয়া হলেও সীমা তার বাড়িতে আসেনি। বার বার তাকে আনতে গেলেও সীমা না এসে সে ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদের লোকজনদের বার বার অপমান করে ফিরিয়ে দেয়। এ নিয়ে উভয় চেয়্যারম্যানকে অবহিত করা হলেও মঠবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান নিজের ব্যর্থতা প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, দীর্ঘদিন স্ত্রী ও সন্তানকে দেখতে না পেয়ে মন্টু শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা আপত্তি করেনি। একপর্যায়ে গত ৭ ফেব্র“য়ারি সকাল ৬টার দিকে মণ্টু শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। সেখানে যাওয়ার পর মন্টুর সঙ্গে কথা হলেও গত ৮ ফেব্র“য়ারি সকাল ১০টার দিকে মন্টুর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এরপর তারা সীমা ও তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে কোন সদুত্তর না পাওয়ায় পরদিন সকালে তার মেঝ জামাতা ধর্মদাস মজুমদার ও স্থানীয় গ্রাম পুলিশ রেজাউদ্দিন মঠবাড়িতে যায়। সেখানে গেলে সীমা ও তার বাবা জানায় যে মন্টু তাদের ওখানে গেলেও জামা কাপড় রেখে তারা যাওয়ার আগেই চলে গেছে বলে জানায়। একপর্যায়ে তারা ফিরে আসার পর তার বড় ছেলে রামপ্রসাদ কর্মকার বাদি হয়ে কালিগঞ্জ থানায় একটি মিসিং জিডি করে। এরপর থেকে সম্ভাব্য সকল জায়গায় সন্ধান করেও মন্টুকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার আশঙ্কা পুত্রবধু সীমা ও তার পরিবারের সদস্যরা মন্টুকে জীবনের ভয় দেখিয়ে কোন অজ্ঞাত স্থানে আটক রেখেছে বা নির্যাতন করে মেরে ফেলে লাশ গুম করেছে।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ছেলে মন্টুকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে পাওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তাপস মজুমদার, স্বপন কর্মকার, সুব্রত কর্মকার, আনন্দ কর্মকার।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৮)