হীরের কুচি ভোর

বলতে পারিস নাম ?
এইতো সবে পেরিয়ে এলাম পারুলবতী গ্রাম !

তাই কি বাজে আলো ?
হতেও পারে, পথ হারিয়ে যা দেখি সব ভালো !

ফুল বুঝি তোর হাতে ?
তা জানিনা, সারা শরীর ভিজেছে জোছনা তে !

দিসনে কেন ধরা ?
মনযে আমার পাহাড় চূড়োর পালক দিয়ে গড়া !

তুইকি পলাশ বাড়ি ?
ঠিক বলেছ, সারা আকাশ ঢেউ ছড়াতে পারি --- !

লিখিস চিঠি কাকে ?
যে আমাকে বাতাস বলে বিভোর হয়ে ডাকে !

মাথায় কিরে তোর ?
ও কিছু নয়, একটু খানি হীরের কুচি ভোর !

খেলতে খেলতে

খেলতে খেলতে জলকে চিনেছি,
খেলতে খেলতে একটি সাঁকো ;
ভাসিয়ে দিয়েছে হাওয়ায় আমাকে ----- !
ওদেরকে তাই ভুলবই নাতো !
খেলতে খেলতে খেলতে খেলতে
একদিন এক পাঠশালা এসে ,
চরকি ঘুরিয়ে নামতা শেখালো ।
গাছে গাছে সব নামতার বাড়ি ।
ওদের কি আজ ভোলা যায় বলো ?
খেলতে খেলতে খেলতে খেলতে ----
এর সাথে ভাব, ওর সাথে ভাব,
নেই মনে মনে একদম আড়ি ।
ওরা তো আমাকে খুব ভালোবাসে,
ওরা হাশি খুশি ; নয় রাশভারী ।
খেলতে খেলতে খেলতে খেলতে ------
খেলতে খেলতে এখন আমার
মনের উঠোনে বকম, বকম,
চরকি ঘুরছে ---- চরকি ঘুরছে----
ঘুরতে ঘুরতে অনেক রকম
অনেক কিছুই --খেলতে খেলতে খেলতে খেলতে !


ভুত মানে ফুল

মন উড়ে যায় চরকি ফুলে
একটা কোলাজ ইচ্ছে !
বাঁশ বাগানের হাওয়ায় দুলে
চাঁদকে চিঠি দিচ্ছে !!

পুব কোণে খুব মেঘ জমেছে
তার মানে তিন সত্যি !
হুতুম পুরের ভুতুম নেচে
বানায় ভুতের পথ্যি !!

কুটুম বলে কাটুম ভায়া
ভূত চেনা খুব শক্ত !
দাও দেখি ডুব এইতো ছায়া ;
হও ভূতেদের ভক্ত !!

ভূত মানে ভয় ? ঘুরছে মাথা ?
ভূত - না, নাচের ছন্দ !
ভূত মানে ফুল, শিউলি পাতা ;
বাবলা গাছের গন্ধ !!

সোলার টোপর ধুই

কোথায় পুপুর হাঁস ?
ঝাপুর ঝুপুর ঘাস !!

সবুজ ঘাসের ভুঁই !
কদম মাসের যুঁই !!

উতুম ভুতুম চর !
পাহাড় কুটুম ধর !!

কাটুম কোথায় ? চল !
বরফ পোতায় জল !!

জলের আপন ভাই !
বলেন ঝাঁপন গাই !!

মাচার ওপর পুঁই !
সোলার টোপর ধুই !!

ভাই বোন

দুধ সাদা ঢেউ ভোর !
রূপ ছড়াতেই ওঁর !!

বন পাখি এক ঝাঁক !
রোদ মেখে দেয় ডাক !!

ফুল ফোটানোর সুর !
দেয় ঢেলে ঝুর ঝুর !!

সেই সুরে ভাই বোন !
রোজ ভরে নেয় মন !!


বাঘ রাগ

ঘোরান হাতে জরীর ছড়ি
মাথায় পরেন পাগ মশাই !
আপন মনে ঘোরেন বনে
সোঁদর বনের বাঘ মশাই !!

নরম সুরে সোহাগ জুড়ে
বলেন আসুন ছাগ মশাই !
দাঁতের চাপে সঠিক মাপে
এবার ঘাড়েই দাগ বসাই !!


আশায় থাকি কুটুম পাখি

কুটুম পাখি, কুটুম পাখি,
কুটুম, কুটুম ,কুটুম !
আশায় বসে জানিসনা কি ?
পাপাই, তাতাই, টুটুম !!

নতুন সুরে দে শিস্‌ জুড়ে
মোহর মধুর শিস্‌টি !
উঠুক মেতে নিকট দূরে
হৃদয় ধানের শিস্‌টি !!

মাকনা পাখনা

কারন কিরে কারন কিরে
কাঁদছে কেন মাকনা ?
চোখের জলে দু-গাল ভাসে
একটু কাছে ডাকনা !!

সোহাগ ঢেলে এবার বাপু
একটু কথা রাখনা !
ওড়ার সাধে সে চায় শুধু
একটি জোড়া পাখনা !!

গোঁফ টোপ

গোঁফেই আমি নাম করেছি
পাগ চাপিয়ে টাকে ভাই !
বাহার করা গোঁফ জোড়াটি
যাই দেখিয়ে যাকে পাই !!

গোঁফের রাজা এই আমিটি
গোঁফ নাচিয়ে টাকা পাই !
গোঁফের নানা খেল দেখাতে
চীন, গড়িয়া, ঢাকা যাই !!

সানাই

আকাশ যেন ভীষণ খুশি ! হাজার তারার পোষাক পরে ,
আমরা যারা ছোটই আছি ; দেয় ঢেলে চুম আদর করে !
ফুল ফোটা ধুম সপন বরণ ! বাজায় তুলি আপন মনে !
বিভোর নেশায় পারুল পাতা , পাঠায় খবর জারুল বনে !
বনদারু মন ঢেউ তোলে রোজ -চারুখানের অলীক তুলি
কেবল বলে আয় না বুকে -নাচনা সুখে হরিণ গুলি
হরিণ নাচে হরিণ নাচে কাঁচ পোকারা বেড়ায় উড়ে
ও বাবলা বন ও বাবলা বন কি খুশি আজ পবন পুরে
হরিণ নাচে হরিণ নাচে ও মা ও বাঘ ওরাই পাখি
ওড়াই ওদের নীল আকাশে সবুজ ঘাসের সোহাগ মাখি
হাত বাড়িয়ে দেয় এঁকে পথ হাসেম খানের ছবির সারি
কেউ যেন এক বাউল ভুবন কেউ যেন এক খুশির জারি
কেউ যেন ঘাটশিলার নুপুর,পাথর কুচি, হীরের পাতা !
এমন করেই যায় ভরে রোজ,পাগল কবির লেখার খাতা !
হারিয়ে যাবার মন যেন গান,পবন পুরের আবীর ঢেলে --- !
বজেই চলে আলোর সানাই ---ভালোবাসায় মোহর জেলে !

কবি পরিচিতি :

গদাধর সরকার ( ছদ্ম নাম – মালিপাখি ), পিতা- নানুগোপাল সরকার, মাতা- লক্ষীরানী সরকার, জন্ম- ১২-১০-১৯৬৭, জন্মস্থান- কৃষ্ণনগর। শিক্ষা- মাধ্যমিক। পেশা-ভুমি ও ভুমি সংস্কার দপ্তরের কর্মচারী ।
নীল আকাশ, তিতলি, জীবনকুচি, পত্রিকায় লেখা প্রকাশ । বই – মালিপাখির ছড়া সংগ্রহ ( ডি এম লাইব্রেরী, কোলকাতা - ৬)

ঠিকানা – মালিপাখি, ( গদাধর সরকার ), মল্লিক পারা, কৃষন্ননগর, নদীয়া, ফোন- ৮৫৩৬৯৮৬০৪৩