মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : নতুন করে বড়ধরনের কোন রাজনৈতিক মেরুকরণ না হলে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বহুপ্রত্যাশীত এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোট-মহাজোট ছাড়াও এর বাহিরের রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কৌশলে নিজের প্রার্থীতা জানান দিতে নির্বাচনী আসনে আগাম তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে ঘনঘন উপস্থিত হয়ে নিজ এলাকার সাধারণ মানুষদের সাথে বাড়াচ্ছেন যোগাযোগ ও সখ্যতা । কৌশলে গণসংযোগ করে চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা। 

৯১টি চাবাগান, পর্যটন আর প্রবাসী অধ্যুসিত জেলা মৌলভীবাজার সদর রাজনগর-৩ আসনটি বিভিন্ন কারনেই একটি সমৃদ্ধ নির্বাচনী এলাকা। এই আসন থেকেই বিএনপি দলীয় হেভিওয়েট প্রার্থী, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির বর্ষিয়ান সদস্য ও সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করে সদর ছাড়াও জেলার উন্নয়নের ইতিহাসের এক অভুতপূর্ব উন্নয়নের সমৃদ্ধ ইতিহাস রচনা করে গেছেন।

এবার আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই গুরুত্বপূর্ণ আসনটি পেতে জোড় লবিং চালাচ্ছেন বিশদলীয় জোটের গুরুত্বপূর্ণ সরিক খেলাফত মজলিশ। দলটির প্রার্থীর দাবী এই নির্বাচনী আসনে ব্যক্তি ইমেজ ও নির্বাচনী আসনে তাদের দলের অবস্থা আগের যেকোন সময়ের তোলনায় বর্তমানে অনেক শক্তিশালী।

নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড সমূহে রয়েছে তাদের শক্ত সাংগঠনিক ইউনিট। সে লক্ষে মৌলভীবাজার রাজনগর-৩ আসনে খেলাফত মজলিশের প্রার্থী হিসেবে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাওলানা আহমেদ বিলালকে প্রার্থী হিসেবে জোটের কাছে জোড় দাবী জানাবে দলটি। বিশদলীয় জোট প্রার্থী দেক বা না দেক, সেক্ষেত্রে দলটি এই আসনে প্রার্থীতার বিষয়ে অনড় থাকবে এমনটি জানিয়েছেন খেলাফত মজলিশের কেন্দ্রীয় দ্বায়িত্বশীল সূত্র।

ব্যক্তি মাওলানা আহমদ বিলালের সাথে জেলার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে জেলার ছোটবড় প্রায় সবগুলো মাদ্রাসার রয়েছে অত্যান্ত সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রাজনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালে নিজ খরচে এলাকার রাস্থাঘাটের উন্নয়ন করেছেন তিনি।

রাজনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় নানান বয়সীদের মাঝে আহমেদ বিলালের রয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা। নিজ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন ছাড়াও নির্বাচনী এলাকার দলমত নির্বিশেষে যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সাধ্যমত সবধরনের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

এদিকে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আহমদ বিলাল নিজের প্রার্থীতা জানান দিতে ইতিমধ্যেই জেলা সদর এর বিভিন্ন সড়কে বিলবোর্ড টানিয়ে ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারনা শুরু করে দিয়েছেন। এছাড়াও ঘরোয়া আড্ডা , বিয়ে-সাদী, বিভিন্ন দিবস, ওয়াজ মাহফিল সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান সমূহে সময়মত সক্রিয় উপস্থিত থেকে আগে থেকেই গণসংযোগ বাড়াচ্ছেন, কথা বলছেন সাধারণ মানুষদের সুখ-দুঃখ নিয়ে।

এদিকে দলটির জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম আগের তুলনায় বেশ সুবিধায় থাকলেও দু’একটি নির্বাচন ছাড়া উল্লেখযোগ কোন স্থানীয় নির্বাচনে এই দলটি এখন পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলায় তাদের দলের পক্ষে কোন প্রার্থী দেননি।

খেলাফত মজলিশের দ্বায়িত্বশীল সূত্রে জানাযায়, খেলাফত মজলিশ তার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অতিথের যেকোন সময়ের তোলনায় বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে বেশ বৈরি পরিবেশ থাকার পরেও মৌলভীবাজার জেলায় এখন অনেক শক্তিশালী। জেলার প্রত্যেক উপজেলা, পৌর শাখা, ইউনিয়নে ও ওয়ার্ড সমূহে দলটির সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। এসব ইউনিট দলীয়, জাতীয় ইস্যু এবং বিভিন্ন ধর্মীয় দিবসকে কাজে লাগিয়ে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। পাশাপাশি জোটভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের সক্রিয়তা দেখা যায়।

খেলাফত মজলিশ সূত্রে জানা যায় , আগামী একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিশদলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার মাসকয়েক পূর্বে জোট নেতাদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জোটের সরিকদল হিসেবে খেলাফত মজলিশের পক্ষে বেশ কয়েকটি আসন চাওয়া হয়েছে। এসব নির্বাচনী আসনের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র বর্তমান সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম, নাসের রহমানের নির্বাচনী আসন মৌলভীবাজার রাজনগর-৩ আসনটি খেলাফত মজলিশের প্রার্থী হিসেবে দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক ও রাজনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওঃ আহমেদ বিলালকে দেয়ার জন্য জোট নেত্রীর কাছে প্রস্থাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে খেলাফত মজলিশের কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গির হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, নির্বাচন এখনো অনেক দেরি, সে ক্ষেত্রে চা-পাওয়ার পর্যায়টা এখনো আসেনি।

তিনি বলেন, খেলাফত মজলিশ বিশদলীয় জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরীকদল হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হল আগামী একাদশ্ব জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমরা জোটবদ্ধভাবে করবো এবং মৌলভীবাজার-৩ আসনে আমাদের দলের সাংগঠনিক ভিত্তি যেহেতু অনেক মজবুত তাই উল্লেখযোগ্য আসনের মধ্যে এই আসনটি আমরা চাইবো ।

এই আসনটি চাওয়ার কারন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসনটি চাওয়ার ব্যাপারে আমাদের অনেক যুক্তি আছে, আহমেদ বিলাল রাজনগর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন, সে ক্ষেত্রে এই নির্বাচনী আসনে তার অনেক গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে, সুতরাং এই আসনটি আমরা জোটের কাছে প্রস্থাব করবো।

এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে আহমেদ বিলাল জানান, স্বাধীনতার পর এপর্যন্ত সংসদ নির্বচনে রাজনগর থেকে কোন প্রার্থী দাড়াঁননি । তিনি বলেন, এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া হলো আমরা যেকোন রাজনৈতিক দলই করনিা কেনো আপনি যেহেতু এই এলাকার সন্তান হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাই দলমত নির্বিশেষে আমরা আপনার পাশে থাকবো।

বিএনপি যদি এই আসনটি আপনাকে দিয়ে দেয় তাহলে মৌলভীবাজারের বিএনপির যে ভোটব্যাংক রয়েছে সেটি কি আপনার পক্ষে যাবে ? এমন প্রশ্নের জবাবে আহমেদ বিলাল বলেন, বিএনপির অভ্যান্তরিন কোন্দল থাকলেও উভয়গ্রুপই একচেটিয়াভাবে আমার পক্ষে মাঠে থাকবে, তাদের দলের নেতাদের সাথে কথা বলে এমন আভাস পাওয়ার দাবি করেন আহমেদ বিলাল।

তিনি আরো বলেন, রাজনগরে বিএনপির ভোট অনেক কম, সদরে বেশি, আর রাজনগর উপজেলায় ১৪টি চাবাগান থাকায় চা শ্রমিকের ভোটগুলি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাড়াঁবে। তবে এই চা জনগুষ্টির সাথে আমার যোগাযোগ আছে সবসময়, তাদের বিভিন্ন সহায়তা করি বিভিন্ন সময়ে, সেকারনে আমি আশাবাদী নির্বাচনে চা শ্রমিকের ভোট আমার পক্ষেই কাজ করবে।

মৌলভীবাজার রাজনগর-৩ আসনের আগামী একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খেলাফত মজলিশের প্রার্থী হিসেবে দলটির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড এরইমধ্যে আহমেদ বিলালের নামটি অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রায়ই চুরান্ত করে রেখেছেন, বাকি শুধু আনুষ্ঠানিকতা।

জোটের অন্যতম শরিক খেলাফত মজলিশের এই প্রার্থীর আগাম তৎপরতার বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির বর্তমান সহ-সভাপতি ও মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন জানান, এই মুহুর্তে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছেনা, তবে কেন্দ্র থেকে দল এবং জোটের পক্ষে যদি আহমদ বিলালকে প্রার্থী হিসেবে মনোয়ন দেয়া হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে আমরা যেহেতু দল করি তাই নির্বাচনে তার পক্ষে সাংগঠনিক নিয়মানুযায়ী কাজ করতে বাধ্য।

এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার কারাগার থেকে মুক্তি পরবর্তি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পেক্ষাপটের বিষয়ে নতুন করে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, এরকম পরিস্থিতিতে রাজনীতির মাঠে হয়তো শেষ পর্যন্ত নানান গুঞ্জন আর মেরুকরন ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপি নেতৃত্তাধিন বিশদলীয় জোট একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে কি যাবে ন সেটিও একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়াঁবে শেষ পর্যন্ত। এজন্য অপেক্ষা করতে হবে অনেক পথ।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮)