কবীর চৌধুরী তন্ময়


লেখার শিরোনাম এভাবে লিখতে চাইনি। আবার এই ধরনের শিরোনাম দিয়ে লিখবো তা ভাবিও-নি। কিন্তু বাস্তবতা এটাই। সত্য কথাগুলো সব সময় তিক্ত স্বাধ গ্রহণে বাধ্য করে। যেমন খালেদা জিয়া, তারেক জিয়াকে নিয়ে বিব্রত খোদ বিএনপি। অতীতে তারেক জিয়াকে নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাকর্মী বেশ কোনঠাসা হয়ে পড়লেও এবার স্বয়ং খালেদা জিয়াকে নিয়ে দলের মধ্যে কানা-ঘোষা চলছে। আবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়াকে সশ্রম পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নেতৃত্বসহ ২০ দলের জোট প্রধান নিয়ে নানান টানা-পোড়ানো চলছে। কেউ কেউ আবার দলের আরেক দুর্নীতিবাজ হিসেবে আদালত কর্তৃক সাব্যস্ত হওয়া তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হওয়ায় বেশ ভরকে আছেন। প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও ভিতরে-ভিতরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

থাক সে কথা, ফিরে আসি শিরোনামের প্রাসংগিগকতা নিয়ে। ইতোমধ্যেই খালেদা জিয়া দুর্নীতিতে সাব্যস্ত হয়ে বিচারিক আদালত থেকে সশ্রম পাঁচ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগারে আছেন। তিঁনি যে এবারের মত রেহায় পাচ্ছেন না সেটি খোদ খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম বুঝতে সক্ষম হয়েছে।

আদালতে পেস করা তথ্য-উপাত্ত এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধান ভিত্তিক সংবাদ, কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কত টাকা, কে কবে কীভাবে উত্তোলন করে লোপাট করেছে তার চুলছেড়া বিশ্লেষণ করে অবগত হয়েছেন-এবার আর বিচারহীনতার সেই ইনডেমনিটির অপসংস্কৃতি অব্যাহত রাখা যাবে না। তাই সুকৌশলে আদালতের প্রতি অনাস্থা, বিচারক পরিবর্তন, সময় নষ্ট, আদালতে অনুপুস্থিত থেকে স্বেচ্ছায় গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং মামলার সাথে সম্পৃক্ত নয় এই ধরনের বক্তব্য প্রদানসহ জজ মিয়ার মত আরেক নাটক সাজানোর চেষ্ঠা করেছিল।

এখানেও বসে থাকেনি তারা। ১৯৯৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ৪ লাখ টাকা তুলে বগুড়া জেলার গাবতলী থানার দাড়াইল মৌজায় ১৭টি দলিল মূলে ২ দশমিক ৭৯ একর জমি ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় ক্রয় করা হলেও সেখানে গড়ে তোলা হয়নি কোনও এতিমখানা। গণমাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ হওয়ার পরে এ মামলাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে ওই জমির বুকে নতুন করে সাইন বোর্ডও দৃশ্যমান করেছে।
লজ্জাজনক হলেও সত্য, বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ খোদ খালেদা জিয়াও এতিমখানায় কোনও দুর্নীতি হয়নি মর্মে জাতির সামনে বার-বার মিথ্যাচার করেছে। জনগণের করুণা লাভে অনেক চেষ্ঠা করেছে। শুধু তাই নয় খালেদা জিয়ার কিছু হলে দেশ অচল করে দেওয়া হবে মর্মে হুমকি-ধমকিও দিয়েছিল। কিন্তু জিয়া এতিমখানা কোথায় (?) এটি বিএনপির দলীয় সিনিয়র আইনজীবীসহ খোদ খালেদা জিয়াও বলতে পারেনি।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে ঘিরে তথ্য-উাপাত্ত সংগ্রহ করে বিচার-বিশ্লেষণের পরে দায়িত্ব নিয়ে দলীয় সিনিয়র আইনজীবী ও নীতিনির্ধারণী ফোরাম একান্ত বৈঠকে বসলেন। কীভাবে এতিমখানার দুর্নীতির মামলা থেকে কোনও মতে রক্ষা পাওয়া যায় তার বিস্তর আলোচনা, আইনের ফাঁক-ফোকড় তন্ন-তন্ন করে খুজেও বেলা শেষে সে অংকের রেজাল্ট মিলাতে পারেনি। খালেদা জিয়াসহ দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম হতাশ। অবশেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে- (১) মাঠে গালগল্প করে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা। (২) জনগণকে বুঝাতে হবে এটা সরকারের প্রতিহিংসার মামলা। (৩) খালেদা জিয়াকে বিএনপিতে রাখতে হলে বা দলীয় সদস্যপদ ধরে রাখার জন্য সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৭ (সাত) ধারা সংশোধন করতে হবে।

কী ছিল (?) বিএনপির গঠনতন্ত্রের সেই ৭(সাত) ধারায় (ক)-তে আছে, ‘১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতি আদেশ নং ৯-এর বলে দন্ডিত ব্যক্তি, (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি দলের সদস্য হতে পারবে না।’

পাঠক! বিএনপি এখানে ‘দণ্ডিত’ ও ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ দুটো অপশনকে বেছে নিয়েছে। কারণ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অপরাধী হিসেবে বিচারিক আদাল কর্তৃক ‘দন্ডিত’ এবং ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ সাব্যস্ত হতে যাচ্ছেন বলেই রীতিমত রাতের অন্ধকারে গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা পরিবর্তন আনতে তারা কৌশল গ্রহন করে।

বিএনপির মধ্যে তারেক জিয়াকে নিয়ে শুধু এখন নয়, অতীত থেকে বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মীর মধ্যে তিক্ত অভিজ্ঞতা বিরাজ করছে। পারলে তাকে অনেক আগেই ছুড়ে করে ফেলে দিত। কারণ এখানে সবচেয়ে বড় বাধা বেগম খালেদা জিয়া। তিঁনি পরিবারতন্ত্র ছাড়া অন্য কিছু বুঝে না। তাই বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান তারেক রহমানকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায় না মর্মে অভিমত প্রকাশ করার পরেও খালেদা জিয়া তার পুত্র তারেক রহমানকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করেছে। যা বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতে দলের নেতৃত্ব অটো তারেক জিয়ার হাতে চলে যায়।

খালেদা জিয়ার এই সিদ্ধান্তে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ভিতরে-ভিতরে ক্ষোভ রাখলেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দল থেকে বহিঃষ্কার হওয়ার আশঙ্কায় প্রকাশ্যে কেউ তেমন কিছু বলেনি। তবে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য-বিবৃতির মাঝে অনেক সময় তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করে বিএনপি শুধু বিরোধীদলের স্ট্যাটাস থেকেই বঞ্চিত হয়নি, রীতিমত মাঠ গোছাতে বা মাঠের রাজনীতি শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। আবার বেগম খালেদা জিয়ার দুর্বল নেতৃত্ব, তারেক জিয়ার ঔদ্ধত্য বক্তব্য অনেক অপছন্দের হলেও চুপচাপ সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে।
দলে খালেদা জিয়ার চেয়ে তারেক জিয়া একটু ভিন্ন প্রকৃতির। সে রীতিমত অ্যাকশন পছন্দ করেন। দলের প্রবীন নেতা বা দলের জন্য নিবেদীত ত্যাগী নেতাকর্মী যেই থাকুক, সেটা তার কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। যত বড় নেতাকর্মীই তাঁর বিরুদ্ধে গিয়েছে, তাদের এক ধরনের সাইজ করার সিদ্ধান্ত অতীতেও নিয়েছে এবং বেগম খালেদা জিয়াকে এই ধরনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগও করেছে।

খুব বেশি দিনের কথা নয়। লন্ডনে মা-ছেলের একান্ত আলাপকালেও এক ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সুত্রপাত ঘটে। তারেক রহমানের অনেক সিদ্ধান্তে বেগম জিয়ার সম্মতি না থাকায় খালেদা জিয়াকে দলীয় পদ থেকে সরে দাঁড়াতেও বলা হয়। তখন উপস্থিত একান্তজন মিলে-মিশে পরিবেশ শান্ত করতে এগিয়ে আসে।

এখানে একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন, বিএনপি সিনিয়র নেতাকর্মীরা তারেক জিয়াকে নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে যতটা আলোচনা সভা ও গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ শিরোনাম করে, মাঠের দৃশ্য তার উল্টো। পাহাড় সমান মামলা, একের পর এক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার বিরুদ্ধে বিএনপির শক্ত কোনও আন্দোলন চোখে পড়েনি। তার উপর তাকে বাংলাদেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে তেমন কোনও সিন্ধান্তও গ্রহণ করা হয়নি। বরং সময় যাক, কাল দেখা যাবে এই করে-করে রীতিমত তারেক রহমানের রাজনৈতিক অবস্থানকে পুরোপুরি ধ্বংসের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।

এখানে তারেক জিয়াকে নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মীদের তেমন কোনও মাথা ব্যাথা যে নেই, তা বিএনপির দলীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করলে বেরিয়ে আসে। ২০০২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১৩(২) ধারায় ঢাকার (বিশেষ জজ আদালত-৩) বিচারিক আদালতের দেয়া রায় বাতিল করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি অর্থদন্ড দিয়েছে। তখন তারেক জিয়ার দলীয় সদস্য পদ রাখার চিন্তা শুধু বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মীই নয়, খোদ খালেদা জিয়াও করেনি। কিন্তু খালেদা জিয়ার দলীয় সদস্যপদ রাখার জন্য রীতিমত রাতের অন্ধকারে দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন এনেছে। তারেক রহমান দুর্নীতি করেছে মর্মে হাই কোর্ট দোষী সাব্যস্ত করলেও তাকে দলে ধরে রাখার কোনও চেষ্ঠাই করা হয়নি। এখন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান; বর্তমানে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সামনে ১০ বছরের কারাদন্ড অপেক্ষা করছে।

এখানে বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭(সাত) ধারা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে শুধু জিয়ার পরিবারের দুর্নীতিবাজদেরই ঠায় দেয়নি; বিএনপির সকল নেতাকর্মীর দুর্নীতি ও দন্ডিত ব্যক্তিদেরও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখানেও শেষ নয়, এই ধরনের ব্যক্তিরা বিএনপির রাজনীতি করতে পারবে বলেও এক ধরনের মৌন সমর্থন-আহ্বান করা হয়েছে।

জেনারেল জিয়াউর রহমান ও পরবর্তীতে খালেদা জিয়া যে শুধু দুর্নীতিবাজদের স্বীকৃতি দিয়েছে, তা কিন্তু নয়। যে কেউ অপরাধী বা দন্ডিত হলেও বিএনপির সদস্য পদ থাকবে এবং বিএনপি করতে পারবে। আর এটাই জিয়া-খালেদার রাজনৈতিক আদর্শ। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা, জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে নির্মমভাবে খুনের মাধ্যমে জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে সেই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য একের পর এক হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়ন করে এগিয়েছে।

১৯৭৬ সালে ২১ জুলাই বিচারের নামে প্রহসন করে একজন যুদ্ধাহত (এক পা হারানো) মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার কলঙ্কিত ইতিহাসও গড়েছে। আবার ১৯৭৭ সালে ব্যর্থ ক্যু-চেষ্ঠার অভিযোগ এনে বিমানবাহিনীর ৩৯৭ জন সদস্যকে হত্যা করেছে। এমনি করে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে ছোট বড় ২২টি সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে জেনারেল জিয়া কায়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা, সেনাকর্মকর্তা ও সিপাহীকে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করেছে। ১৯৮২ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়া খুন হওয়ার সময় ৫০ জন ব্রিগেডিয়ার এবং মেজর জেনারেলের মধ্যে মাত্র ৩ জন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধার পোশাক, মুক্তিযুদ্ধের কথামালার অন্তড়ালে জিয়াউর রহমান প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের আদর্শ ধারণ করে পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ করেছে।

অদ্ভুধ ব্যাপারটি একটু লক্ষ্য করুন- স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৫০ জন ব্রিগেডিয়ার আর মেজর জেনারেলের মধ্যে তখন তার সাথে মাত্র ৩ জন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা! এখানে বাকি ৪৭ জনই ছিল পাকিস্তানপন্থী। অর্থাৎ পাকিস্তানের নির্দেশনায় জেনারেল জিয়াউর রহমান একের পর এক হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার পাশাপাশি পাকিস্তানপন্থীদের রাষ্ট্রের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রতিষ্ঠা করার নীল নকশা করেছিল।

আর এটি বাস্তবায়নের জন্য ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন ১৯৭২ বাতিল করার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি কওে দেয়। যার মধ্যে মৃত্যদন্ড প্রাপ্ত ২০ জন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ জন, যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ জন সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করেন জিয়াউর রহমান।

রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবেই স্বীকৃতি দেয়নি, বরং দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়ে সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্ত করে। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।

জিয়াউর রহমানের কল্যাণে ১৯৭৮ সালের ১১ জুলাই গোলাম আজম পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে কোনো ভিসা ছাড়াই ঢাকা আসেন। মায়ের অসুস্থতার জন্য মানবতাহীন গোলাম আযমকে মানবিক কারণে ৩ মাসের অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর ৭৮ থেকে ৯৪ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করলেও রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের পুর্নবাসন করার ধারাবাহিক দায়িত্ব পালন করে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তিঁনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালের সরকার প্রধান হয়ে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছে।

খালেদা জিয়াও জেনালের জিয়ার মত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার না করার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বরং জোটগতভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার করেছে। আবার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যখন জাতির আশা-আঙ্খাকা যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারের বিচারের ব্যবস্থা করেছিল, তখন প্রকাশ্যে খালেদা জিয়া এই বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিকভাবে এই বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এমন কোনো কাজ নেই যা করেনি। এখানেও থেমে থাকেনি। কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় না হওয়াকে কেন্দ্র করে নতুন প্রজন্মের গণজাগরণ মঞ্চের যোদ্ধাদের মনোবল ধ্বংস করার লক্ষে ঢাকার মুন্সিগঞ্জ জনসভায় ‘শাহবাগের নাস্তিক’ বলে বিতর্কিত বক্তব্য প্রদান করে।

আর সে সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ত্রিশ লাখ শহীদ, দুই লাখের বেশি ধর্ষিতা নারীর সংখ্যা নিয়ে খোদ খালেদা জিয়াই বিকৃত করে মিথ্যাচার করেছে। ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও হুমকি-ধামকী দিয়েছে।

পাঠক! বিএনপির জন্ম, জিয়ার অবৈধ ক্ষমতা দখল, রাজাকারদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা, তার শাসনামল এবং হত্যার রাজনীতির পরে বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামল ও জামায়াত ইসলামের সাথে জোটবন্ধ রাজনীতি ও তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতিটি দিন-তারিখ পর্যবেক্ষণ করলে স্পষ্ট প্রতীয়মান-বিএনপি পাকিস্তানের একটি পেইড রাজনৈতিক সংগঠন। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭(সাত) ধারায় (ক) অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করার মধ্য দিয়ে শুধু দাগি অপরাধীই নয়, সমাজের দুর্নীতিবাজদেরও এই পেইড রাজনৈতিক দলে আশ্রয় প্রদান করেছে। এবং রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করে খালেদা জিয়া আবারও প্রমাণ করল, স্বাধীনতাবিরোধীদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে আশ্রয় দিতে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)।